গর্ভধারণ ও ফাইব্রয়েড বা জরায়ুর টিউমার

  • তন্ময় আলমগীর
  • অক্টোবর ২৯, ২০১৮

গর্ভাবস্থায় শতকরা ১০ ভাগ নারীর দেহে ফাইব্রয়েড থাকতে পারে। ৩০ থেকে ৪০ বছরের নারীদের মধ্যে ফাইব্রয়েড আক্রান্তের হার বেশি। কিন্তু স্বস্তির বিষয় হলো, এটি টিউমার হলেও ক্যানসার নয়। এটি শরীরে ক্যানসারের মতো কোনো বিরূপ প্রভাব ফেলে না। এই টিউমার থেকে ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা এক শতাংশের কম। এটি ইউটেরিন মায়োমা (Uterine Myoma) ফাইব্রো মায়োমা, লাইওমায়োমা নামেও পরিচিত। জরায়ু টিউমার বিভিন্ন আকারের হয়ে থাকে। ছোট টিউমার দেখতে মটরশুটির দানার সমান এবং বড় আকারের টিউমার কখনো কখনো বড় তরমুজের সমান হতেও দেখা যায়। টিউমারের আকার সময়ের সঙ্গে বড় বা ছোট হতে পারে বা কখনো মিলিয়ে যেতেও দেখা যায়। বড় ফাইব্রয়েড এর কারনে জরায়ুর আকার পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে এবং তা ব্লাডার এবং পরিপাকতন্ত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

যে কারণে ফাইব্রয়েড হয় : ফাইব্রয়েডয়ের সাথে জেনেটিক ও হরমোনের সম্পর্ক থাকতে পারে। দেখা গেছে শরীরে প্রোজেস্টেরন ও ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে টিউমারের আকার বৃদ্ধি পায় (যেমন- গর্ভকালীন সময়ে ইস্ট্রোজেন বৃদ্ধি)। দেহে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমে গেলে টিউমারের আকার সংকুচিত বা ছোট হয় এবং বন্ধ হয়ে যেতে পারে (যেমন: মেনোপোজ পর ইস্ট্রোজেন কমে যাওয়া)। যাদের পরিবারে ফাইব্রডের ইতিহাস আছে তাদের ক্ষেত্রেও ফাইব্রডের ঝুঁকি বেশী থাকে।

ফাইব্রয়েড ও গর্ভধারণঃ অনেকেই মনে করেন ফাইব্রয়েড হলে তা বন্ধ্যাত্বের কারন হবে। এ ধারণা সব সময় সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য না-ও হতে পারে। কেননা ২৫ শতাংশ ফাইব্রয়েড টিউমার আজীবন কোনো সমস্যাই করে না। মোটামুটি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কমবেশি অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা অনিয়মিত মাসিক বা তলপেট ভারী বোধ হওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হয়। ২৭ থেকে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রেই কেবল এটি বন্ধ্যাত্বের কারণ হয়ে উঠতে পারে, যদি নিচের ঘটনাগুলো ঘটে:

যদি ফাইব্রয়েডের কারণে জরায়ু অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়, জরায়ুর ভেতরের দেয়ালে রক্তনালির সংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভ্রূণ ঠিকমতো বেড়ে উঠতে পারে না, জরায়ু ও ফ্যালোপিয়ান টিউবের সংযোগস্থলে বা এমন কোনো জায়গায় টিউমারটির অবস্থান হয়, যা ভ্রূণকে সুস্থিত হতে বাধা দেয়। যাদের গর্ভধারণের পরিকল্পনা আছে এবং ফাইব্রয়েড আছে বলে সন্দেহ করছেন তাদের দ্রুত ডাক্তারকে জানানো উচিত। আর যাদের পরিবারে ফাইব্রয়েডের ইতিহাস আছে তাদের নিয়মিত চেকআপ করানো উচিত। ফাইব্রয়েড খুব দ্রুত বাড়তে পারে তাই তা গর্ভধারণে বাঁধা সৃষ্টি করার পর্যায়ে যাওয়ার আগেই তার চিকিৎসা করানো দরকার। যাদের ফাইব্রয়েডের সমস্যা আছে তাদের সাধারনত দ্রুত কনসিভ করার পরামর্শ দেয়া হয়। যাদের বন্ধ্যাত্বের মতো সমস্যা দেখা যাচ্ছে বা বারবার গর্ভপাত হচ্ছে, তাদের ফাইব্রয়েড থাকলেও বন্ধ্যাত্বের অন্য কারণগুলোকে শনাক্ত করা উচিত। কারণ, মূল সমস্যাটি ফাইব্রয়েড না-ও হতে পারে।

ফাইব্রয়েড বুঝবেন যেভাবে : ফাইব্রয়েড হলে ব্যথাযুক্ত ও অতিরিক্ত পরিমাণে রক্তস্রাব হয়। এতে মাসিক চক্রের কোন পরিবর্তন হয় না। কিন্তু স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক পরিমাণে রক্তক্ষরণ হয়। কখনো কখনো অত্যধিক ব্যথা অনুভূত হয়ে থাকে। যার ফলে রক্তের আয়রণের পরিমান কমে গিয়ে রক্তস্বল্পতা দেখা দিতে পারে। বড় আকারের টিউমারের ক্ষেত্রে তলপেটে অস্বস্তিসহ তলপেট ফুলে যেতে পারে। কোন কোন সময় ফাইব্রয়েডের জন্য কোমর ব্যথাও হতে পারে। কখনো কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর সামনে অবস্থিত মুত্রথলীতে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর ঘণ ঘণ প্রস্রাব করার প্রয়োজন হয়। আবার কখনো ফাইব্রয়েড জরায়ুর পশ্চাতে অবস্থিত অন্ত্রে চাপ সৃষ্টি করে। ফলে রোগীর কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দিতে পারে। জরায়ুর অভ্যন্তরীণ অংশে ফাইব্রয়েড সৃষ্টি হলে তা ফেলোপিয়ান টিউবকে বন্ধ করে দেয় যা গর্ভধারণকে অসম্ভব করে তোলে বন্ধ্যাত্বের সৃষ্টি করে। কখনো কখনো ফাইব্রয়েডের কারণে গর্ভপাত হতে দেখা যায়।

ফাইব্রয়েডের কারণে গর্ভবতী মা ও গর্ভের শিশুর কি ক্ষতি হতে পারে?

অনেক মায়ের মনেই এই প্রশ্নটা থাকে যে, ফাইব্রয়েডের কারণে তার নিজের বা গর্ভের সন্তানের কোন ক্ষতি হবে কিনা। আনন্দের সংবাদ হোল জরায়ুতে টিউমার থাকা অবস্থায় গর্ভধারণ হয়ে থাকলে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তা কোন অসুবিধা করে না। এবং অনেকেই এই অবস্থায় নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে সন্তান প্রসব করতে পারেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড টিউমারের কারণে মা এবং সন্তানের বিভিন্ন জটিলতা হতে পারে। এটা নির্ভর করে ফাইব্রয়েডের আকার ও এর অবস্থানের উপর। ফাইব্রয়েড এর অবস্থান সবচাইতে বড় ফ্যাক্টর। কারও যদি অনেক বড় ফাইব্রয়েড থাকে কিন্তু তা যদি জরায়ুর উপরের দিকে অবস্থান করে তবে তা গর্ভাবস্থায় কোন জটিলতা সৃষ্টি নাও করতে পারে। তাই ফাইব্রয়েড হলে এটা ধরে নেয়ার কারণ নেই যে তা গর্ভাবস্থায় জটিলতার সৃষ্টি করবে। সব মহিলাদের ক্ষেত্রে এই টিউমার সমস্যা করে না।

Leave a Comment