বেশি ঘাম বিশেষ কোনো রোগের লক্ষণ! কী করবেন?
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক:
- এপ্রিল ১৮, ২০১৯
আমাদের দেশে গরমকালে ঘাম হয় না এরকম লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। অতিরিক্ত ঘামের নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই, যখন ঘামের জন্য আপনার স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হচ্ছে অথবা একই পরিবেশে অন্য লোকের থেকে আপনি বেশি ঘামছেন, তখন আমরা আপনার ঘামকে অস্বাভাবিক বলে ধরতে পারি।
অতিরিক্ত ঘামের ফলে কী কী হতে পারে?
- বারংবার জামাকাপড় পাল্টানোর দরকার হতে পারে।
- করমর্দন করতে অনীহা হতে পারে।
- সবার সঙ্গে সহজে মিশতে না পারা।
- হাতের তালুতে ঘাম হওয়ার জন্য লিখতে অসুবিধা হওয়া।
- এক ধরনের মানসিক অবসাদে ভোগা।
অতিরিক্ত ঘামের কারণ কী?
- পারিবারিক কারণ— পরিবারে বংশপরম্পরায় অনেকের অতিরিক্ত ঘাম হয়।
- হাইপারটেনশন ও ডায়াবেটিস এই দুই রোগে বেশি ঘাম হয়।
- মানসিক চাপ— যেকোনো ধরনের মানসিক চাপ ও চিন্তাভাবনা থেকে ঘাম হয়।
- থাইরয়েড হরমোনের বেশি মাত্রায় ক্ষরণ— এই রোগে বুক ধড়ফড়, ঘাম, ডায়ারিয়া, রোগা হয়ে যাওয়া, চোখ ঠিকরে বেরিয়ে আসা, রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গ হয়।
- ওবেসিটি বা মেদবৃদ্ধি— আপনি যত মোটা হবেন তত ঘাম বেশি হবে।
- হার্ট অ্যাটাক— বুকে চাপের সঙ্গে অস্বাভাবিক ঘাম কিন্তু হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ, অবহেলা না করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যান।
- রক্তে শর্করার মাত্রা কমে যাওয়া— অস্বাভাবিক ঘাম, সঙ্গে বুক ধড়ফড় ও ধীরে ধীরে ঝিমিয়ে পড়া হাইপোগ্লাইসিমিয়ার লক্ষণ। ডায়াবেটিস আছে এরকম রোগীর অস্বাভাবিক ঘামের অর্থ হলো ব্লাড সুগার কমে যাওয়া। গ্লুকোজ কিংবা চিনির পানি খাইয়ে সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
- জীবাণুর সংক্রমণ— ঘুষখুষে জ্বর বা সন্ধের পরে জ্বরের সঙ্গে অস্বাভাবিক ঘাম যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়ার লক্ষণ। প্রকৃতপক্ষে যেকোনো প্রকার জ্বর হলেই অতিরিক্ত ঘাম হতে পারে।
- মেনোপজের সময়— মেনস্ট্রুয়েশন বন্ধ হয়ে গেলে হঠাৎ হঠাৎ মুখমণ্ডল গরম হয়ে যাওয়া এবং সঙ্গে অতিরিক্ত ঘাম হয়।
- লিউকেমিয়া ও লিম্ফোমা— রাতের দিকে জ্বর, সঙ্গে অস্বাভাবিক ঘাম, রক্তাল্পতা, রোগা হয়ে যাওয়া, যকৃৎ এবং প্লিহা বেড়ে যাওয়া এই ধরনের ক্যান্সারের লক্ষণ।
অতিরিক্ত ঘামের মোকাবিলা কীভাবে করবেন?
১. প্রথমত, দিনে তিন থেকে চার বার গোসল করতে হবে। এর মাধ্যমে জীবাণু দূর হবে এবং ঘামে গন্ধও থাকবে না।
২. গরমে হালকা রঙের সুতির জামাকাপড় পরা দরকার।
৩. খাদ্যতালিকায় মরশুমি ফল ও শাকসব্জি রাখুন। গবেষণায় দেখা গেছে, হজম ভালো হলে ঘাম কম হয়। শসা, তরমুজ, আঙুর, লেটুস বেশি করে খান।
৪. চা, কফি, কোল্ডড্রিঙ্কস এড়িয়ে চলুন। এইসব খাবার বা পানীয় খেলে বেশি ঘাম হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
৫. মশলাযুক্ত বা তেলে ভাজা খাবার খাবেনই না। ফাস্টফুড, চকোলেট, ময়দার তৈরি খাবার বা পাউরুটি কম খেতে হবে। দেখা গেছে, কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে ঘাম বেশি হয়। পাশাপাশি ঝাল বেশি খেলেও স্বাভাবিক কারণেই ঘাম বেশি হবে।
৬. বেশি করে পানিপান করতে হবে। বিশেষত, গরমকালে বেশি করে পানিপান করুন। শরীর যত ঠাণ্ডা থাকবে, ঘাম হওয়ার আশঙ্কাও ততটাই কমবে।
৭. দৈনন্দিন জীবনের দুশ্চিন্তা যতটা সম্ভব কমিয়ে আনা চাই। তাই নিয়মিত যোগব্যায়াম, মেডিটেশন করে স্ট্রেস কমান।
৮. পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুম হওয়া দরকরা। তাই রাতে ভালো করে ঘুমোতে হবে। সুস্থ থাকতে অতন্ত ৭ ঘণ্টা শান্তির ঘুম চাই-ই চাই।
কী কী চিকিৎসা আছে?
- হাত ও পায়ের তালু ঘেমে গেলে সাধারণত লোশান লাগাতে হয়
- খাওয়ার ওষুধ খুব কম ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয়। কারণ খাওয়ার ওষুধের অনেক পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে
- বটুলিনাম টক্সিন (বোটক্স) ইঞ্জেকশন দেয়া যেতে পারে
- অয়ন্টোপরেসিস— এখানে ঘাম প্রতিরোধকারী ওষুধ সুঁচ ছাড়া কারেন্টের মাধ্যমে ঘর্মগ্রন্থিতে প্রবেশ করাতে হয়।
টি/আ