
গর্ভাবস্থায় গর্ভফুলে কী কী পরিবর্তন আসে?
- রেজবুল ইসলাম
- জানুয়ারি ২৩, ২০১৮
গর্ভফুল বা প্লাসেন্টা কি?
গর্ভফুল একটি ফুল আকৃতির অঙ্গ যা গর্ভাবস্থায় মেয়েদের জরায়ূর ভেতরে লেগে থাকে এবং সন্তানের সাথে মায়ের যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। এটি গর্ভের শিশুর রক্তসঞ্চালনকে মায়ের রক্তসঞ্চালন থেকে পৃথক রাখে। গর্ভের শিশুর শরীর যে সমস্ত কাজের জন্য উপযোগী হয়ে উঠে না, গর্ভফুল সে কাজগুলি তার হয়ে করে থাকে। শিশুর সাথে এটি নাড়ির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে।
গর্ভফুলের কাজ কি?
মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে পুষ্টি উপাদান পরিবহন করে: অক্সিজেন ও খাদ্য মায়ের রক্ত থেকে র্গভফুলে স্থানান্তরিত হয়। সেখান থেকে নাড়ির মাধ্যমে অক্সিজেন ও খাদ্যকে তা শিশুর কাছে পৌঁছে দেয়। শিশুর শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ সরিয়ে ফেলে: শিশুর শরীরে সৃষ্ট বিভিন্ন বর্জ্য পদার্থ যেমন কার্বন ডাই অক্সাইড নাড়ির মাধ্যমে গর্ভফুলে ফেরত যায় এবং সেখান থেকে মায়ের রক্তপ্রবাহে চলে যায়, যেন মায়ের শরীর তা বের করে ফেলতে পারে।
হরমোন: গর্ভফুল বিবিধ হরমোন তৈরি করে যা শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সহায়তা করে।
সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে: শিশু গর্ভে থাকা অবস্থায় গর্ভফুল সংক্রমণ থেকে শিশুকে রক্ষা করে থাকে। অধিকাংশ ব্যাকটেরিয়া থেকে এটি শিশুকে রক্ষা করতে পারে। তবে এটি ভাইরাসের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করতে পারে না। যেমন, মা যদি (র্জামান মিজেল্স) এ আক্রান্ত হয়ে থাকে, আর মায়ের শরীর যদি রুবেলা ভাইরাস প্রতিরোধী না হয়ে থাকে তবে সেটা গর্ভফুল অতিক্রম করে শিশুর শরীরে চলে যেতে পারে এবং তা গর্ভপাত, মায়ের গর্ভে মৃত্যু, প্রসবকালীন শিশু মৃত্যু, জন্ম ত্রুটি যেমন বধিরতা, মস্তিষ্কের ক্ষতি, হৃৎপিন্ডে সমস্যা, চোখের ছানি প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে শিশু জম্মগ্রহণ করতে পারে।
অ্যান্টিবডির জন্য পথ করে দেয়: গর্ভাবস্থার শেষ পর্যায়ে গর্ভফুল মায়ের শরীর থেকে শিশুর শরীরে এন্টিবডি যাবার জন্য পথ করে দেয়, এটি জন্মের পর প্রায় তিন মাস পর্যন্ত শিশুকে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা প্রদান করে। তবে এটি কেবল সেসব অ্যান্টিবডিই পারাপারের ব্যবস্থা করে যা মায়ের শরীরে থাকে। তবে ও গর্ভফুল অতিক্রম করে যেতে পারে এবং গর্ভের শিশুর ক্ষতিসাধন করতে পারে।
শিশুর জন্মের পর গর্ভফুলের কি হয়?
শিশুর জন্মের পর, প্রসবের তৃতীয় পর্যায়ে, জরায়ুর ক্রমাগত সংকোচন গর্ভফুলটিকে ঠেলে যোনীপথ দিয়ে বের করে দেয়। প্রসবের পর পর দ্রুততম সময়ে সেটাও জরায়ুর সংকোচনে সাহায্য করে এবং গর্ভফুলটিকে বেরিয়ে আসতে সহায়তা করে। যদি মায়ের শরীর থেকে স্বাভাবিক গতিতে গর্ভফুলটিকে বের হতে দেয়া হয়, তাহলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হবার সম্ভাবনা থাকে। শিশু ভূমিষ্ঠ হবার পর ডাক্তার বের হয়ে আসা গর্ভফুল পরীক্ষা করে দেখেন যে তা সর্ম্পূণরূপে বেরিয়ে এসেছে কি না এবং ভেতরে অবাঞ্ছিত কোনো কিছু থেকে গিয়েছে কি না। মায়ের হলে জরায়ু থেকে শিশুকে অপসারণের পর গর্ভফুল বের করে ফেলা হয়।
গর্ভাবস্থায় প্লাসেন্টা জনিত যে সমস্যাগুলো সবচাইতে বেশী দেখা যায় সেগুলো হোল-
(১) প্লাসেন্টা প্রিভিয়া
(২) প্লাসেন্টা অ্যাকরিটা
(৩) প্লাসেন্টাল অ্যাবরাপশন
(৪) প্লাসেন্টাল ইনসাফিশিয়েন্সি
প্লাসেন্টাজনিত যে কোন সমস্যাই গর্ভাবস্থায় জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং তা মা শিশুর জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এই সমস্যা গুলোর বিস্তারিত পরবর্তীতে আলোচনা করা হবে। নবাগত শিশু ও মায়ের জন্য রইলো শুভকামনা।