মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত কী? গর্ভপাতের সম্ভাবনা ও কারণ

  • রেজবুল ইসলাম 
  • জানুয়ারি ২৯, ২০১৮

একটা মেয়ের জন্য জীবনের সব চেয়ে বড় প্রাপ্তি মা হওয়া। বাবা-মায়ের অনেক  স্বপ্ন থাকে নবাগত বাচ্চাকে নিয়ে।  অনেক দম্পতির কাছে মিসক্যারেজ একটি দু:স্বপ্নের মত এবং অনেকেই এই দু:স্বপ্ন পেরিয়ে একটি নতুন স্বপ্নের সূচনা করতে পারেন। অনেকেই মিসক্যারেজর পর গর্ভধারণ নিয়ে চিন্তিত থাকেন এবং ঝূঁকিপূর্ণ মনে করেন।

প্রথমেই জেনে নিই মিসক্যারেজ কী ? 

ডিম্বানু নিষিক্ত হওয়ার পর পরবর্তী পাঁচ মাসের (২০ সপ্তাহ) মধ্যে যে কোন সময়ে প্রসবের রাস্তা দিয়ে বের হয়ে যাওয়াকেই মিসক্যারেজ, গর্ভপাত বা Abortion বলে।

কীভাবে বুঝবেন মিসক্যারেজ হয়েছে ?

প্রেগন্যান্সির প্রথম ভাগে যোনিদ্বার দিয়ে হতে পারে রক্তপাত, প্রথমে অল্প ও পরে বেশি। প্রেগন্যান্সির ফার্স্ট ট্রাইমেস্টারে (প্রথম ১২ সপ্তাহে) এটা কিন্তু খুব চিন্তার বিষয়। এর সঙ্গে থাকতে পারে তলপেটে একটা খিঁচ ধরা ব্যথা। অধিকাংশ ক্ষেত্রে গর্ভপাতটা হয়ে যায় এভাবেই। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার কোনও রক্তপাত বা ব্যথা ছাড়াই হতে পারে গর্ভপাত। এক্ষেত্রে গর্ভস্থ ভ্রূণের বৃদ্ধি থেমে গিয়ে তার মৃত্যু হয় গর্ভেই। একেই বলে নিঃশব্দ গর্ভপাত বা মিসড মিসক্যারেজ। এক্ষেত্রে গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্ট বিট পাওয়া যায় না আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে।

প্রেগন্যান্সির ফার্স্ট ট্রাইমেস্টার থেকে যদি রক্তপাত শুরু হয় এবং সঙ্গে থাকে তলপেটে ব্যথা। তাহলে মিসক্যারেজ হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে। এছাড়াও ৮ সপ্তাহ অবধি অপেক্ষা করা সত্ত্বেও যদি গর্ভস্থ ভ্রূণের হার্ট বিট না আসে তাহলেও তার মানে এটি গর্ভপাত। তবে গর্ভপাত নিজে নিজে হোক বা তা অপারেশনের মাধ্যমে করা হোক দুইয়েই আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে দেখে নেওয়া দরকার জরায়ু সম্পূর্ণরূপে পরিষ্কার হয়েছে কিনা।

আপনি কীভাবে মিসক্যারেজ রোধে পূর্ব প্রস্তুতি নিতে পারেনঃ 

আপনি  নিয়মিত ফলিক এসিড গ্রহন করুন। এটি একটি ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট হিসেবে কাজ করে। সাধারনত গর্ভধারণের ৩ মাস আগে থেকেই এটি খাওয়া শুরু করতে হয়। ফলিক এসিড বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির প্রবণতাকে কমিয়ে দেয় এবং মিসক্যারেজর হওয়ার ঝুঁকিও অনেকাংশে কমিয়ে দিয়ে থাকে। প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহন করতে পারেন।

সব সময়ের জন্য  স্বাস্থ্যকর খাবার নিশ্চিত করুন। সুস্বাস্থ্য আপনার গর্ভধারণের সম্ভাবনাকে  অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। গবেষনায় দেখা গেছে যে তাজা ফল ও রঙ্গীন শাকসবজি মিসক্যারেজের হার ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনে। নিয়মিত হালকা ব্যায়ামও চালিয়ে নেয়া ভাল। তাছাড়া ধূমপান, অ্যালকোহল, ক্যাফেইন জাতীয় পানীয় বা চকলেট  এড়িয়ে চলা উচিত।

 মিসক্যারেজর পর গর্ভধারণের কোন সঠিক সময় নেই। অনেকেই আছেন যারা খুব দ্রুতই বাচ্চা নিয়ে নেন আবার অনেকেই বিভিন্ন কারনে সময় নেন। অধিকাংশ সময় ডাক্তার তিনটি পূর্ণ মাসিক চক্র শেষ হবার পর গর্ভধারণের জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকে। এতে করে শরীর আবার পুনরায় আগের অবস্থায় ফিরে আসার জন্য পর্যাপ্ত সময় পায় এবং মানসিকভাবেও প্রস্তুতি নেয়া যায়।  

মাসিকের চক্রের দিকে বিশেষ লক্ষ্য রাখুন। এটি কখন শুরু হচ্ছে, কতদিন স্থায়ী হচ্ছে এবং অস্বাভাবিক কোনো লক্ষন আছে কিনা সেদিকে খেয়াল রাখুন। একজন দক্ষ গাইনি ডাক্তরের কাছ থেকে পরামর্শ গ্রহন করুন। যিনি আপনার কথা মন দিয়ে শুনবেন এবং আপনার পরিস্থিতি বুঝে সঠিক পরামর্শ দেবেন। পুনরায় গর্ভধারণের পূর্বে অবশ্যই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। মিসক্যারেজর সঠিক কারণ জানার চেষ্টা করুন। পরবর্তীতে যাতে তার পূনরাবৃত্তি না হয় সেদিকে ভাল করে খেয়াল রাখুন। মিসক্যারেজ একজন মায়ের জন্য খুবই ক্ষতিকর । সব চেয়ে বেশি সমস্যা সে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ে । এরপর আছে শারীরিক দূর্বলতা । সচেতনতার  বিকল্প নেই । সকল মা ও নবাগত বাচ্চার জন্য রইলো শুভকামনা ।

Leave a Comment