![ধর্ষকের হাত কি আইনের হাতের থেকেও লম্বা ? ধর্ষকের হাত কি আইনের হাতের থেকেও লম্বা ?](https://www.womenscorner.com.bd/media/imgAll/2022July/farjana-cover-20230622030213.jpg)
ধর্ষকের হাত কি আইনের হাতের থেকেও লম্বা ?
- ফারজানা আক্তার
- ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০১৮
গত কয়েকদিন ধরে ফেইসবুকে চোখের সামনে একটা পোষ্ট ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি পোষ্টটা প্রথম এক নজর দেখে চোখ সরিয়ে নিয়েছি। আমি চোখ সরিয়ে নিলে কি আর পোষ্ট চোখের সামনে আসা বন্ধ হয়! আমার ফ্রেন্ড লিষ্টের কেউ না কেউ শেয়ার করছে আর আমার চোখে সেই পোষ্ট পরে যাচ্ছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে আছে কন্যা, এই দৃশ্যটা সুন্দর। কিন্তু কোন পরিস্তিতে, কেন জড়িয়ে আছে সেটা জানলে কিংবা শুনলে আপনার শরীর কেঁপে উঠবে , আপনি শিউরে উঠবেন।
একজন ধর্ষকের পরিচয় সে ধর্ষক। তার কাছে ছোট মেয়ে, বড় মেয়ে, যুবতী, মধ্য বয়স্কা, বৃদ্ধা সবাই তার কামনার বস্তু। সে কোনো মেয়ের বয়স, তার শারীরিক কিংবা মানসিক কোনো অবস্থার কথা চিন্তা করে না। সে শুধু তার শরীরের জ্বালা মিটানোর ধান্দায় থাকে। বাচ্চা বাচ্চা মেয়েদের ধর্ষণ করার ঘটনা একের পর এক ঘটেই যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সমাজপতিরা, বিচারপতিরা কেমন যেনো নির্বাক! আজকাল এসব ঘটনা দেখলে আমি চোখ বন্ধ করে রাখি , কিংবা এড়িয়ে যাই। সহ্য করতে পারি না আমি এমন পাশবিক নির্যাতন। আবার, নিজেও কিছু করতে পারছি না তাই লজ্জায়ও চোখ -মুখ বন্ধ করে রাখি।
![](http://www.womenscorner.com.bd/media/imgAll/2017October/garden-20180214104350.jpg)
এই ঘটনাটা একটু অন্য রকম। কেমন অন্য রকম সেটা দেখেন। ছোট্ট মেয়েটিকে এক পুরুষ নামের পশু ধর্ষণ করেছে। মেয়েটির ডাক্তারি পরীক্ষাও হয়েছে । সেই ধর্ষকের হাত এতটাই লম্বা যে প্রথম ডাক্তারি পরীক্ষার চূড়ান্ত আলামত সে গায়েব করে দিয়েছে। প্রমাণ ছাড়া আইন তো অন্ধ। তাই ডাক্তারি পরীক্ষার আলামত পাওয়া না গেলে সেই ধর্ষক হয়ে যাবে স্বাধীন। তার বিচার হওয়ার কোনো সম্বভনাই নেই। এমনিও আমাদের দেশে ধর্ষকরা স্বাধীন। তাদের বিচার এমনিও হয় না। প্রথম ডাক্তারি পরীক্ষার আলামত গায়েব হয়ে যাওয়ায় সেই ছোট্ট নয় বছরের মেয়েটি সত্যতা প্রমাণের জন্য বাবাকে সাথে নিয়ে সাংবাদিকদের সামনে হাজির হয়েছে। বাবাকে জড়িয়ে ধরে সে মুখ লুকিয়ে রেখেছে আর বাবা মানুষটি সেই পাশবিক ঘটনার বর্ণনা পড়ে যাচ্ছে। আপনারা ভাবুন একবার , একজন বাবা তার মেয়ের সাথে হয়ে যাওয়া পাশবিক ঘটনার কথা বলে যাচ্ছে। সেই বাবাটির মনের অবস্থা কেমন ছিলো তখন ? সেই বাবা মেয়ের সাথে হয়ে যাওয়া পাশবিক ঘটনার কথা কিভাবে পড়েই বা যাচ্ছিলো তখন ? আমি ভাবতে পারছি না। আমার মন এই চিন্তা নিতে পারছে না।
আমি একবার সেই মেয়েটির জায়গায় নিজেকে ভাবছি , বাবাটির জায়গায় আমার বাবাকে। আরেকবার সেই মেয়েটির জায়গায় আমার মেয়েকে ভাবছি , বাবার জায়গায় আমার নিজেকে। এই দুইটি ভাবনাতেই আমি কাঁদছি , আমার চোখে দিয়ে পানি পড়ছে। আমি ভেবে পাই না এতো কষ্ট নিয়েও এরা বেঁচে আছে কিভাবে ? কিভাবে নিজের সাথে ঘটে যাওয়া এমন পাশবিক ঘটনার বিচার চাইতে এমন জন সম্মুখে দাঁড়িয়েছে? এদের ধৈর্য শক্তি, সহ্য শক্তি, মনের শক্তির প্রশংসা করতেই হয়। তারা তাদের কাজ করেছে , এবার তাহলে আমাদের কি করতে হবে ? বিবেক আছে আমাদের, আইন আছে আমাদের। অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার মতো কি শক্তি নেই আমাদের ? ওই ধর্ষকের হাত কি আমাদের আইনের হাতের থেকেও লম্বা ? ওই ধর্ষক আলামত গায়েব করে দিয়েছে, আমাদের আইন কি সেই ধর্ষককে দুনিয়া থেকে গায়েব করতে পারে না ? আমাদের আইন কি পারে না ধর্ষককে সাহায্যকারী সকল কালো হাতগুলোকেও গায়েব করতে ?
![](http://www.womenscorner.com.bd/media/imgAll/2017October/baba-1-20180214104416.jpg)
আমাদের আইন অনেক শক্তিশালী আইন। তারা চাইলে অপরাধীকেও শেষ করতে পারে, আবার তারা চাইলে বাদীকেও শেষ করতে পারে। আইনের সাথে সম্পর্কিত সকল মানুষকে বলছি, আপনারা প্লিজ একটু সদয় হোন। আপনাদের স্লোগান "আইন সবার জন্য সমান " এই কথাটার যোধাযথ ব্যবহার করুন। গরীব বাবাটির ছোট্ট এই মেয়েটির পাশে দাঁড়ান। তাদের জায়গায় একটু নিজেকে কল্পনা করুন। আমরা এই কথা বিশ্বাস করতে চাই না যে, আইনের হাত থেকে অপরাধীদের হাত বেশি লম্বা হয়ে যাচ্ছে!
ডাক্তারকে বলছি , মানুষ উপরওয়ালার পর আপনাদের ভরসা করে। যে অপরাধ করে সেও অপরাধী, যে অপরাধকে প্রশ্রয় দেয় সেও অপরাধী। যে ধর্ষণ করে সেও ধর্ষক, যারা ধর্ষণের আলামত গায়েব করে তারাও ধর্ষক। প্রতিটা পেশার মানুষ নিজে চাইলে কোন না কোনভাবে মানবসেবা করতে পারে। আর, ডাক্তাররা সরাসরি সেই মানবসেবা করার সুযোগ পায়। আমি বলছি না আপনি বিনাপয়সায় চিকিৎসা দিন। টাকার বিনিময়েই চিকিৎসা দিন কিন্তু সেটা যেনো হয় যোধাযোধ উপায়ে। দুই একটা টাকা বেশির জন্য প্লিজ অপরাধীদের পক্ষ নিবেন না। ছোট্ট মেয়েটির দিকে একবার তাকান আর নিজের মেয়ের কথা ভাবুন। আপনারা সবাই ভাবুন। অপরাধীর জায়গায়ও নিজেকে ভাবুন , ভিক্টিমের জায়গায়ও ভাবুন। দেখেন কোন ভাবনাতে কতটা শান্তি পাচ্ছেন আর কতটা কষ্ট পাচ্ছেন!