যে রোগ মানুষকে গোপনে আত্মহত্যার দিকে টেনে নিচ্ছে!
- ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
- জুন ২৬, ২০১৮
মানুষের শারীরিক মানসিক কর্মক্ষমতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করে দেয় ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা। বর্তমানে বিশ্বে প্রায় ৩০০ মিলিয়ন ডিপ্রেশন বা বিষন্নতায় ভুগছেন বলে একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি ৫ জনের ১ জন মানুষ কোনো না কোন ধরনের ডিপ্রেশন বা এনজাইটিতে ভুগেন।
কী কারণে বিষন্নতা অনেক ক্ষেত্রেই পারিবারিক বা সামাজিক সম্পর্কের অবনতির জন্যে ডিপ্রেশন বা বিষন্নতা হয়ে থাকে। আবার ডিপ্রেশনের জন্য অজান্তেই তৈরি হয় নানান পারিবারিক বা সামাজিক টানাপোড়েন। ডিপ্রেশনের ভয়াবহ দিকটি হচ্ছে ডিপ্রেশনের রোগীরা নিরবে নিভৃতে আত্মহত্যা করে বসে!
তরুণদের আত্মহত্যার প্রধান কারণ : ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণদের আত্মহত্যার প্রধান কারণই হলো ডিপ্রেশন। বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ৮ লাখ পুরুষ ও মহিলা আত্মহত্যা করেন যা যে কোনও যুদ্ধে নিহতের চেয়েও বেশী। অর্থাৎ প্রতি ৪০ সেকেন্ডে ১ জন নারী বা পুরুষ আত্মহত্যা করছেন।
ডিপ্রেশন বেশি দেখা যাচ্ছে মধ্য ও নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে। ডিপ্রেশনে নারীরা বেশী ভুগেন। অনেক ক্ষেত্রে ডিপ্রেশন থেকে ডায়াবেটিস ও হাইপ্রেশার হয়ে থাকে। ডিপ্রেশন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। অনেক ক্ষত্রে বৃদ্ধ, শিশু কিশোর এমনকি সন্তান প্রসবের পর মায়েদের ও ডিপ্রেশন দেখা দেয় এবং তা থেকে তারা আত্মহত্যা করেন।
আমাদের দেশে কীটনাশক ও গলায় দড়ি পেঁচিয়ে আত্মহনন করেন এবং আমেরিকা বা ইউরোপে পিস্তল শুটিং এ বেশিরভাগ আত্মহত্যা করেন।
বাংলাদেশের শতকরা ১৮ থেকে ২০ ভাগ মানুষ কোন না কোন প্রকারের ডিপ্রেশন বা এনজাইটিতে ভুগছেন যাদের পরিবারের অনেকে হয়তো জানেন ই না যে, তারা ডিপ্রেশন এর রোগী, চিকিৎসা তো দূরের কথা।
ডিপ্রেশন বা বিষন্নতার প্রধান লক্ষণ-
* সারাক্ষণ মনমরা হয়ে থাকা।
* উৎসাহ উদ্যম হারিয়ে ফেলা।
* ঘুমের কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
* রুচি কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
* ওজনের কমে যাওয়া বা বেড়ে যাওয়া।
* পড়াশুনা কাজকর্মে শক্তি না পাওয়া।
* মনোযোগ হারিয়ে ফেলা।
* ভুলে যাওয়া।
* মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া একা একা থাকা।
* নিজেকে নিঃস্ব অপাংক্তেয় মনে করা।
* অযাচিত অপরাধবোধ।
* আত্মহত্যার কথা ভাবা বা চেষ্টা করা।
টানা দু' সপ্তাহ বা তারও অধিক সময় এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই ধরে নিতে তিনি ডিপ্রেশনে আছেন।
বিষন্নতার পর সফল যারা : বিশ্বের অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ডিপ্রেশনের রোগী হওয়া সত্বেও সাইকিয়াট্রিস্টের চিকিৎসা ও কাউন্সেলিংয়ে ডিপ্রেশন কাটিয়ে স্মরণীয় ও বরণীয় হয়ে রয়েছেন। তাদের মধ্যে আব্রাহাম লিংকন, চাঁদে ভ্রমণ কারী এডুইন অলড্রিন, আর্নেস্ট হেমিংওয়ে, উইস্টন চার্চিল, বিখ্যাত ‘হেরি পটার’ এর লেখিকা জে কে রওলিং, গ্রেমী এওয়ার্ড খেতাবপ্রাপ্ত গায়িকা শেরিল ক্রোরের নাম উল্লেখযোগ্য। মার্কিন নভোচারী অলড্রিন এর দাদা দাদি ও ডিপ্রেশনের রোগী ছিলেন যারা এ নিয়ে আত্মহত্যা করেন এবং হেরি পটারের লেখিকা রোলিং এক সময় ডিপ্রেশনের জন্যে মাঝেমধ্যে আত্মহত্যার কথা ভাবতেন!
বিষন্নদের সঙ্গে সহমর্মিতা দেখান : ডিপ্রেশন এর রোগীদের প্রতি সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দিন। তাদের সঙ্গে গল্প করুন। তাদের চিকিৎসায় যথাযথ পদক্ষেপ নিন। নানান প্রকারের কার্যকরী এন্টিডিপ্রেসেন্ট ড্রাগ এবং সাইকোথেরাপি, কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে একজন সাইকিয়াট্রিস্ট ডিপ্রেশন এর রোগীকে সম্পুর্ন রুপে সুস্থ করে তুলতে পারেন।
তথ্য এবং ছবি : গুগল