আবোল তাবোল বিয়ে!

  • রোমানা আক্তার-শুদ্ধবালিকা
  • ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯

বিয়েতে থাকে দু'পক্ষ- পাত্র পক্ষ ও কন্যাপক্ষ। অথচ নিয়মনীতির বেলায় সকল নিয়ম কন্যা পক্ষের মানা ফরজ, পাত্র পক্ষ কোন নিয়ম না মানলেও সমস্যা নেই। মেয়েকে ছেলের বউ করে নিচ্ছে এর চেয়ে বড় নিয়ম আর কি? কন্যা পক্ষও দেখি মনে মনে অথবা তাদের আত্নীয়দের কাছে ছেলে পক্ষের ছোটলকি আচরণে কানাঘুষো করে ঠিকই কিন্তু সামনে এলে হুজুর হুজুর ভাব দেখায়। দেখাবেই বা না কেন? মেয়েটাকেতো নিয়ে যাচ্ছে চোখের আড়াল করে, কতো কটু কথাই না শুনতে হবে মেয়েটাকে, পাত্র পক্ষ নিয়ে প্রকাশ্যে খুঁত ধরতে গিয়ে। থাক বাবা..মেয়েটা ভালো থাক। 

কিন্তু কন্যাপক্ষ হয়তো জানেনা, মেয়েটার কটু কথা শোনার দিন কোনদিন শেষ হবেনা। দূরে থাক, কাছে থাক, মেয়ে  প্রতিনিয়ত ঠাট্টা ছলে হলেও হজম করে বাবা মায়ের অপমান। অথচ এই বাবা মাই হচ্ছে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। প্রতিনিয়ত কন্যার বাবা মাকে অপমান করে কথা বলা শ্বশুরবাড়ির লোকেরা আবার খুব করে চায়, মেয়ে যাতে শ্বশুর শাশুড়িকে নিজের বাবা মায়ের মতো আপন করে নেয়। ছেলের জন্ম হয় অতি যত্নে মাতৃগর্ভে, আর মেয়েটির জন্ম হয় নিছকি ছলে কলে। ছেলেকে মানুষ করেছে এ নিয়ে ছেলের মায়ের খুব গর্ব। আর মেয়েটি? মেয়েটিকে ডাস্টবিনে ফেলে রাখা হয়েছিল নাকি??

এখন আবার ছেলেরা একটু এগিয়ে। ওসব কালচারগুলোর প্রতিবাদ করে। এতে বাবা মায়ের চক্ষুশূল হয় বটে কিন্তু প্রতিবাদটুকু করে। বউটাকে সকল অপমান থেকে আগলে রাখার চেষ্টা করে। তবে কিছু ছেলে বউকে আগলে রাখতে গিয়ে বাবা মাকে বেমালুম ভুলে যায়। এ বড় অন্যায়। বাবা মায়ের ভুলগুলো ধরালেও বাবা মাকে জীবনের কোন পরিস্থিতিতে, কারও জন্য অপমান করা অথবা ত্যাগ করা অনুচিত। আমাদের এই দুনিয়ায় বেঁচে থাকা ঘোষিত জান্নাতের অংশ হচ্ছে আমাদের মায়েরা। মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত। আর আমরা সেই সাক্ষাত জান্নাতকে বউয়ের দিকে তাকিয়ে ফেলে আসি কোন বৃদ্ধাশ্রমে অথবা রেখে দেই দূরে কোথাও, মাসিক কিছু হাত খরচ দিয়ে। বউকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে মাকে অবহেলা করা যাবেনা, মাকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে বউকে অবহেলা করা যাবেনা। আর এই ম্যাচুরিটি আসার আগ পর্যন্ত বিয়ে করা যাবেনা।

এদিকে আবার দেনমোহর অত্যাচার। সামর্থ্য থাকুক বা না থাকুক লক্ষ লক্ষ দেনমোহর চাই। সামাজিক বিচারে কিংবা বিয়ের পর সিকিউরিটি। মনের মিল যদি না থাকে দেনমোহর দিয়ে হয় কি সংসার? এ তো পরকীয়া বাড়ানোর হাতিয়ার। কেননা, অধিক দেনমোহর পরিশোধ করতে অক্ষম ছেলেটা লুকিয়ে লুকিয়ে ঠিকই তার মানসিক বা শারিরীক চাহিদা মিটিয়ে নেবে অন্য কারও সাথে। সংসার হতে হবে চাপ মুক্ত। এখানে দু'জন দু'জনের পাশে থাকবে কেবল ভালোবাসা নিয়ে, একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে। এখানে কোন কৃত্রিমতা থাকবেনা। সবকিছু হবে দুরন্ত, প্রাণোচ্ছল। 

অবশ্য যৌতুক প্রথাটাকে পাল্লা দিতে গিয়েই দেনমোহর প্রথা মাথা চাড়া দিয়েছে। একটা সময় যৌতুক ছিল আতঙ্কের নাম। দেনমোহর নিয়ে কিছু শুনাই যেতো না। এখন দেনমোহর হাক ডাক দিয়ে রটে, আর যৌতুক সেই সুযোগে নাম বদলে হয়ে গেল 'উপহার'। বিষয়টা কিন্তু মজার। আগেতো তাও পাত্র পক্ষের চাহিদা সম্পর্কে স্পষ্ট কিছু জানা যেতো, এখন হয়েছে জ্বালা। কি দিয়ে কি হবে কিচ্ছু বুঝার উপায় নেই। এ যেনো ফুটো কলস হয়ে গেছে। এই ফুটো বন্ধ হবে কি দিয়ে তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই জানেন। 

পাত্রপক্ষও জানেনা, কারণ তাদের সংসারে যখন যেটার অভাব বোধ করে তখনই মনে হয়, "বউয়ের বাপ কেন দিলনা?" এখন, কখন তারা অভাববোধ করবে আর কখনইবা হা করবে তা বুঝা মুশকিল। আর প্রাথমিকভাবে একটা মেয়ের সংসার সাজাতে যাবতীয় যা লাগে সবটাই দিয়ে দেয় মেয়ের বাবা মা। অনেকে আবার গহনাও দেয়। সাজানো সংসার পেয়ে কোন মেয়ে চাইবে শ্বশুরবাড়ির কটু কথা শুনে থাকতে? সে চিন্তা করে, তার সংসারে সবইতো আছে। যা..নিশ্চিন্তে আলাদা হয়ে যা। 

আমাদের সমাজে বিয়ের ব্যাপারে কন্যাপক্ষ কেবল দেনমোহর ভাবনা পরিবর্তন করলেই হবে, কিন্তু পাত্র পক্ষকে পরিবর্তন করতে হবে যৌতুক তথা উপহার প্রথা, মেয়ের বাবা মায়ের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে নানা রকম ডালা আদায়, মেয়েকে প্রতিনিয়ত খোঁচানো, মেয়ের পরিবারকে ক্রমাগত দোষারোপ করা ইত্যাদি সব বিষয়। ছেলের বাড়ি একটা মেয়ের জন্য যতো বেশি নিরাপদ হবে দেনমোহর দাবি ততো বেশি কম হবে। সার্বিক বিবেচনায় কন্যাপক্ষ থেকেই এ প্রতিবাদ বেশি জরুরি।  আমি জানি, এ খুব সহজে বদল হবার নয়। কিন্তু একদিন হবে। ততোদিন অবশ্য বিয়ে প্রথা টিকে থাকলেই হয়।

Leave a Comment