রুপচর্চায় এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এলোভেরা অথবা ঘৃতকুমারী
- রোজী আরেফিন
- জুন ২৭, ২০১৯
এলোভেরা খাটি বাংলায় আমরা যাকে ঘৃতকুমারী নামে চিনি। বলা হয়ে থাকে এই এলোভেরা মেয়েদের রুপচর্চায় এবং বিভিন্ন ঔষধি তৈরীতে সেই রাজা বাদশাহদের আমল থেকেই এক অনন্য ভুমিকা পালন করে আসছে। আগের দিনের রানীদের হামামখানা থেকে শুরু করে খাবারের চৌকিতে শরবতের গ্লাসেও এই এলোভেরার উপস্থিতির অনেক প্রমাণ পাওয়া যায়।
এই এলোভেরার রয়েছে এক সুবিশাল গুনের ভান্ডার যার সবটুকু বলে শেষ করাটাও বিস্তর কঠিন। চলুন আজকের আর্টিকেলে আমাদের রুপচর্চায় এবং বিভিন্ন ঔষধি হিসেবে আমরা এলোভেরা বা ঘৃতকুমারীর কীভাবে ব্যবহার করবো তা জেনে নিই।
১. ইদানীং আমরা রাস্তার পাশে এলোভেরার যে শরবত বানানো খাই, আপনারা কি জানেন যদিও রাস্তার খোলামেলা যে কোন খাবার স্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ কিন্তু এই এলোভেরার শরবতে আপনার অগোচরেই আপনার কি বিপুল উপকার হচ্ছে? এই এলোভেরা সেবনে আপনার পেট পরিস্কার হয়,পেট ঠাণ্ডা থাকে, অন্যান্য খাবার হজম দ্রুত হয়, কোষ্ঠকাঠিন্য যদি থাকে আপনার সেটাও দুর হয়,এবং শরীরের আদ্রতা ধরে রাখতে ও সহায়তা করে এই এলোভেরা। ফলশ্রুতিতে যেহেতু আপনার পাকস্থলী ক্লিয়ার থাকে আপনার শরীরের চামড়ায় বিভিন্ন খোসপাঁচড়া ও হয় না এবং শরীরের আদ্রতা লক হওয়ার জন্য চামড়া ও অনেক টানটান থাকে।
২. মুখে অনাকাঙ্ক্ষিত বয়সের ছাপ এবং চোখের নীচের ডার্ক সার্কেল রোধে এলোভেরার ব্যবহার সু প্রাচীন। এলোভেরার জেল কে আইস বক্সে রেখে ছোট ছোট আইস কিউব করে নিন। এবার রোজ আপনার মুখে,চোখের নীচে এই কিউব ঘষতে থাকুন।
৩. যাদের আর্টিফিশিয়াল ফাউন্ডেশন এ মুখে ব্রন হয় তারা ফাউন্ডেশন এর সাথে খানিকটা এলোভেরার জেল লাগিয়ে নিলে এ সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাবেন। তাছাড়া এতে মুখের তৈলাক্ত ভাব দুর হয়ে মুখে ম্যাট ভাব আনবে সহজেই।
৪. মেকাপ ক্লিনজার হিসেবে এলোভেরার ব্যবহার খুবই চমকপ্রদ। কিছুটা এলোভেরার জেলের সাথে সামান্য অলিভওয়েল মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণ টিস্যুতে নিয়ে মুখের মেকাপ খুব সহজেই তুলে ফেলুন।
৫. যাদের চুল জেল ছাড়া সেট থাকেনা, এলোমেলো হয়ে আপনাকে বারবার বিপদে ফেলে তারাও চাইলে সামান্য এলোভেরার জেল আঙুলে নিয়ে চুল সেট করে নিতে পারেন।
৬. এলোভেরা ন্যাচারাল কন্ডিশনার হিসেবেও কাজ করে, প্রতিবার চুল শ্যাম্পু করার পরে অন্য কোন কন্ডিশনার অথবা শুধু এলোভেরার জেল চুলের আগা থেকে গোড়ায় ভালো করে দশ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।চুল ধুয়ে শুকানোর পরে দেখুন চুল কতটা প্রাণবন্ত আর ঝলমলে হয়েছে।
৭. আইভ্রু তে কিছুটা এলোভেরার জেল একটা কটন বাড লাগিয়ে নিন,ভ্রু জোড়া দেখুন কেমন বাকা আর তীর্যক দেখাচ্ছে।
৮. সর্দি লেগে ক্রমাগত যাদের হাচি আর নাকে পানি পরা হচ্ছে,তারা এলোভেরা জেল থেকে পানি টা ছেকে সেটা একটা ড্রপারে নিয়ে প্রতিদিন নাকের দুছিদ্রে দু ফোটা করে দিন,হাচি আর পানিপরা বন্ধ হয়ে যাবে।
৮ .এলোভেরা খেলে শরীরের রক্তে সাদা রক্ত কনিকা উৎপাদন বেড়ে যায় যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী।এলোভেরা রক্ত পরিশোধন কারী,এটা রক্তের দুষিত পদার্থ ছেকে এবং ক্ষতিকর জীবাণু ধ্বংস করে রক্ত কে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
৯. মেয়েদের পিরিয়ডের যে কোন সমস্যায় এলোভেরার সত্ব (আম সত্বের মত)বানিয়ে পিরিয়ডের সময় নিয়ম করে ভিজিয়ে খেলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
১০.ছেলেদের পাতলা শুক্রাণু নির্গমনেও এলোভেরার শরবত খেলে উপকার পাওয়া যায় অনেক। এ ক্ষেত্রে এক থেকে দু মাস নিয়ম করে এলোভেরার জেল দিয়ে শরবত করে খেলে তবেই উপকার পাওয়া যাবে।
১১. সকালবেলা দাঁত ব্রাশ করতে যেয়ে যদি দেখেন দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত পরছে, চিন্তায় না পরে টুথপেস্টের সাথে কিছুটা এলোভেরার জেল লাগিয়ে নিন। উপকার টা একদম হাতে হাতে পেয়ে যাবেন।
দেখলেন তো এক এলোভেরার কত ভেষজ গুন! তাই আর দেরী না করে আপনার বাসার সামনে, ব্যালকনিতে অথবা ছাদে যেখানেই জায়গা পান সুবিধা মত উপায়ে একটা এলোভেরার চারা লাগিয়ে ফেলুন। খুব বেশী যত্ন আত্বি করার দরকার ও নেই। আপনার নিতান্ত অবহেলাতেও দিব্যি এলোভেরার গাছ বেড়ে উঠতে থাকবে আপনার অগোচরে।
প্রতিদিন এক গ্লাস এলোভেরার শরবত আর মুখে ঘাড়ে সামান্য কিছুটা এলোভেরার টাচ দিয়েই দেখুন না বয়স দিন দিন আপনার কমতেই থাকবে বৈ বাড়বে না। মাঝখান থেকে সাথে সাথে আপনার স্কিনটাও অনেক গ্লো করবে। তবে যাদের এলোভেরাতে এলার্জি আছে,ভুলেও এটা ট্রাই করতে যাবেন না। সবচেয়ে বেটার হয় অন্য কোন রেগুলার ফেস ওয়াসের সাথে এলোভেরা সামান্য মিশিয়ে ব্যবহার করলে।
হ্যাপি এলোভেরা ইউজিং!!
ভালো থাকুন,ভালো রাখুন।
ধন্যবাদ।