কেমন ছিল প্রাচীন মিশরীয়দের ধর্ম?

  • কামরুন নাহার স্মৃতি
  • মে ২৩, ২০১৯

মিশর দেশের প্রাচীনকালের ধর্মে অনেক দেবদেবীর পূজার নিয়ম ছিল৷ তাঁদের মধ্যে প্রধান ছিলেন সূর্যদেবতা 'রি' বা 'রা'। তাঁর চেহারা মানুষের মতো, কেবল মাথাটাই ছিল বাজপাখির মতো। তাঁর মাথায় থাকত একটি সাপ-জড়ানো গোল মুকুট। পরে 'রা' নাম বদলে আমন, আটন ইত্যাদি নামকরণ হয়েছিল। সেদেশের শাস্ত্রে বলে যে, একেবারে গোড়ায় ছিল এক মহাসমুদ্র, আর তাতে ভাসছিল একটি ফুল৷ তা থেকে জন্ম নিলেন সূর্যদেবতা। তাঁর তিন ছেলে 'শু', 'টেফনুট', 'নুট' আর একটি মেয়ে 'সেব'। সেব হলো পৃথিবী, নুট আকাশ, আর শু এবং টেফনুট হল বায়ুমন্ডল। সেবের দুই ছেলে 'ওসাইরিস' আর 'সেট', আর দুই মেয়ে। তার মধ্যে আইসিস হলেন ওসাইরিসের বউ।

সেট ছিল ভারী খারাপ দেবতা, হাতির মতো তার মুখ  সে ওসাইরিসকে মেরে ফেলল তখন আইসিস গেলেন শেয়ালমুখো দেবতা আনুবিসের কাছে৷ দু'জনে মিলে অনেক মন্ত্রতন্ত্রের প্রভাবে ওসাইরিসকে বাঁচিয়ে তুললেন। কিন্তু ওসাইরিস আর মৃতের দেশ পাতাল থেকে ফিরে এলেন না, তিনি সেদেশের রাজা হয়ে রইলেন। আইসিসের এক ছেলে হল 'হোরাস', তিনিও সূর্যদেবতা। তাঁর মাথাটিও বাজপাখির মতো। তিনি তাঁর বাবার শত্রুকে দূর করে দিয়ে রাজা হয়ে বসলেন। সেট নালিশ করল যে হোরাস রাজা হতে পারে না, কেননা সে রাজার ছেলে নয়। মরা ওসাইরিসের কখনও ছেলে হতে পারে? শেষে জ্ঞানের দেবতা সারসমুখো থথ প্রমাণ করে দিলেন যে হোরাস ওসাইরিসেরই ছেলে, কাজেই সে রাজপুত্র।

এইসব দেবতা ছাড়া আরও অনেক দেবতার পূজা করা হত প্রাচীন মিশর দেশে। আর তাদের ধর্মে বলত যে, মানুষ মরে গেলেই তার শেষ হয়ে যায় না, তার শরীরটা তখন পড়ে থাকে কিন্তু তার আত্নাটা বেরিয়ে যায়। আত্নাটা একদিন শরীরের মধ্যে ফিরে আসতে পারে। এই বিশ্বাসে প্রাচীন মিশরীরা মৃতদেহকে রেখে দেবার ব্যবস্থা করত আর তার সঙ্গে রেখে দিত তার সুখসুবিধার জন্য নানারকম জিনিস। যাতে মৃতদেহ পচে নষ্ট না হয়ে যায়, সে জন্য দেহের ভিতরকার সব যন্ত্র বের করে ফেলে তাতে নানারকম মসলা পুরে আরক মাখিয়ে রাখা হত। এরকম দেহকে বলে 'মমি'। হাজার হাজার বছর আগেকার এরকম একটি মমি কলকাতার জাদুঘরে আছে। অবশ্য শুধু রাজা কিংবা খুব বড়লোকের মৃতদেহেরই মমি করা হত। প্রাচীন মিশরের মানুষ নীলনদকেও দেবতাজ্ঞানে পূজা করত। মরুভূমির শুকনো হাওয়াও মিশরয়াসীদের কাছে দেবতা ছিল৷ এই পুরনো ধর্ম বহুকাল হল মিশর থেকে লুপ্ত হয়েছে৷

টি/আ

Leave a Comment