পেটের ডানপাশে ব্যথা হয় কেন ? 

  • ফারজানা আক্তার 
  • জানুয়ারি ১৫, ২০২২

পেটের যেকোন ব্যথা আমাদের সকলের জন্য আতংকের হতে পারে! কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মেরিল্যান্ড অঙ্গরাজ্যের অন্তর্গত লিওনার্ডটাউনের ফ্যামিলি ডক্টর মায়া ফিনকেলস্টোন এই বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন।  

তিনি বলেছেন পেটের বেশিরভাগ ব্যথা নিরীহ প্রকৃতির। যেমন :  পেশি সংকোচন, গ্যাস জমা এবং বদহজম। পেটে ব্যথা অনুভব করলে গভীর শ্বাস নিতে হবে, শান্ত থাকতে হবে। ঘরোয়া ট্রিটমেন্ট করতে হবে। তবুও সমাধান না হলে তখন চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। পেটের ডানপাশে ব্যথা হওয়ার কয়েকটি কারণ এখানে উল্লেখ করা হলো। 

গ্যাস জমা : আমাদের নাভির উপরে পাকস্থলীর অবস্থান। গ্যাসজনিত ব্যথা পাকস্থলী বরাবর বা বামপাশে হয়। অনেক সময় এই ব্যথা ডানপাশে ছড়িয়ে পড়ে। বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ ডায়েট করে। ডায়েটে থাকার কারণে তারা গ্যাস জাতীয় খাবার যেমন ব্রোকলি, ব্রাসেলস স্প্রাউটস,  ফুলকপি, শিমের বিচি ইত্যাদি খেয়ে থাকেন। এই ধরণের গ্যাস ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যায়। এই সময় হাঁটলে গ্যাস দ্রুত দূর হবে। 

আরো পড়ুন : প্রেগনেন্সির পর ঝুলে যাওয়া ত্বক টানটান করতে যা করবেন

বদহজম : কী ধরণের খাবার খাওয়ার কারণে আপনার বদহজম হয়েছে সেটা আগে চেক করুন। বদহজমে পেটের উপরিভাগে ডানদিকে জ্বালাপোড়ার মতো ব্যথা হয়। বদহজম তেমন মারাত্মক নয়। তবে দুই সাপ্তাহের মধ্যে বদহজম ফিরে আসলে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। 

পেশিতে টান পড়লে : একটি কঠোর কার্ডিও সেশন আমাদের পেটের ডানদিকের ব্যথার জন্য দ্বায়ী। নরমাল সময়ের থেকে দ্রুত হাঁটলে বা দৌঁড়ালে আমাদের ডায়াফ্রাম বেশি ব্যবহৃত হয়। সেখান থেকে মাসল স্পাজম বা পেশি সংকোচন হতে পারে! পেটের পেশীতে টান জনিত ব্যথা এড়াতে আমাদের শ্বাসতন্ত্রকে প্রসারিত করতে হবে। 

অ্যাপেন্ডিসাইটিস : পেটের ডানদিকে ব্যথা হলে অ্যাপেন্ডিসাইটিস হওয়ার সম্ভবনা সবথেকে বেশি। এই ব্যথা সচরাচর নাভির পাশে শুরু হয় এবং  পরে ডানপেটের নিচে এক-চতুর্থাংশে ছড়িয়ে পড়ে। এই ব্যথায় বসতে বা শুইতে গেলে বেশ অস্বস্তিবোধ করবেন। অ্যাপেন্ডিসাইটিস হয়েছে বুঝতে পারলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন; অন্যথায় লাইফ রিস্ক হতে পারে!

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় যোনী স্রাব কি স্বাভাবিক?

ওভারিয়ান সিস্ট : নারীদের জরায়ুর প্রত্যেক পাশে একটি করে ডিম্বাশয় থাকে। মাঝে মাঝে এসব ডিম্বাশয়ে তরলপূর্ণ থলে বিকশিত হয়, যাকে ওভারিয়ান সিস্ট বলা হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এই সিস্ট নিজের থেকে চলে যায়। নারীরা বুঝতেও পারে না। তবে কখনো কখনো এই সিস্ট যথেষ্ট পরিমাণে ভোগান্তির কারণও হতে পারে! ডান ডিম্বাশয়ে সিস্ট বড় হলে ডানদিকে ব্যথা অনুভূত হয়। 

জরায়ুর বাইরে ভ্রুণের বিকাশ : অনেক সময় নিষিক্ত ডিম্বাণু জরায়ুর বাহিরে অবস্থান করে।  একে ইক্টোপিক প্রেগন্যান্সি বলে। এ সমস্যাটা নারীদের প্রজনন বয়সে দেখা যায়। কনসিভ অবস্থায় পেটের ডান কিংবা বাম যেখানেই ব্যথা অনুভব করেন ডাক্তারের সাথে আলোচনা করতে ভুলবেন না। ডা. ফিনকেলস্টোনের মতে, ' ইক্টোপিক প্রেগন্যান্সির অবস্থানের উপর নির্ভর করে পেটের ডান কিংবা বামপাশে ব্যথা হতে পারে। '

কিডনিতে পাথর : এনআইডিডিকে’র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিডনিতে পাথর হওয়ার কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন : পিঠের নিম্নভাগে ব্যথা, পেটের নিম্নভাগে ব্যথা অথবা কুঁচকিতে ব্যথা। এই ব্যথা যেকোন একপাশে ছড়াতে পারে। এই ব্যথার অবস্থানেরও পরিবর্তন হতে পারে। তার মানে হচ্ছে পাথর তার জায়গা পরিবর্তন করতে পারে। কিডনিতে পাথর হওয়ার আরো কিছু লক্ষণ রয়েছে যেমন : মূত্রত্যাগের সময় ব্যথা, মূত্রে রক্তের উপস্থিতি, বমিভাব। 

আরো পড়ুন : গর্ভাবস্থায় প্রস্রাবের ইনফেকশন প্রতিরোধের উপায়

কোষ্ঠকাঠিন্য : পেটের ডানপাশে ব্যথা কোষ্ঠকাঠিন্য থেকেও হতে পারে। বৃহদান্ত্রের শেষপ্রান্তে মল জমা হয় এবং স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় বের হয়ে যায়। দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্যের এক পর্যায়ে মল খুব শক্ত হয়ে যায় এবং বাহিরে বের হতে পারে না। এই অবস্থাকে ফেকাল ইম্প্যাকশন বলে। ফেকাল  ইম্প্যাকশনের কিছু  উপসর্গ হলো পেটের পেশি টাইট হয়ে যাওয়া, পেট ফেঁপে যাওয়া, নিচের পিঠে ব্যথা অনুভব করা ও মূত্রাশয়ে চাপ পড়া।

পিত্তথলিতে পাথর : আমাদের পিত্তথলি পেটের ডানপাশে থাকে। পিত্তথলিতে পাথর জমলে ব্যথা অনুভূত হতে পারে! তবে পাথর জমলে আরো কিছু লক্ষণ দেখা দিবে। যেমন : বমি হবে অথবা বমি বমি ভাব হবে, বদহজম হবে। উচ্চ ডোজে ইবুপ্রোফেন সেবন করলে : মায়ো ক্লিনিকের মতে, ইবুপ্রোফেনের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে সাধারণ পেট ব্যথা, বদহজম, বুকজ্বালা ও পেটফাঁপা। এনএসএআইডি ওষুধ সেবন করার সময় পেটের ডানপাশে ব্যথা হতে পারে! এই ওষুধ সেবন করার সময় চিকিৎসকের পরামর্শ সঠিকভাবে মানতে হবে। 

তথ্য সংগ্রহ : গুগল। 

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment