
১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ এর মাঝে যাদের জন্ম, তারা নানান ব্যথায় ভুগছেন কেন
- ওমেন্স কর্নার
- জুলাই ১০, ২০২৫
ফেসবুকে ইদানিং প্রায়ই কিছু মিম বা মজার পোস্ট চোখে পড়ে। সেখানে মিলেনিয়ালরা, অর্থাৎ যারা মোটা দাগে ১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ এর মাঝে জন্ম নিয়েছেন, তাদের এডাল্ট জীবনের নানান চ্যালেঞ্জকে মজার ছলে প্রকাশ করেন।
এগুলোরই একটি হলো ‘আমার বয়স ৩৩ হলেও আমার হাড়গোড়ের বয়স ৭৩’ – শরীরের ব্যথা নিয়ে বানানো এমন আরও অনেক মিম। আপাতদৃষ্টিতে বলার ধরনটি মজার হলেও এর মধ্যে প্রকাশ পাচ্ছে গভীরতর একটি সমস্যা। আপনার আশেপাশের এই প্রজন্মের মানুষগুলোকে জিজ্ঞেস করলেই দেখবেন তাদের সবার বয়স ২৮ থেকে ৪৫ এর মধ্যে হলেও বেশিরভাগই গাঁটের ব্যথা থেকে শুরু কোমর ব্যথা, পিঠের ব্যথা, ঘাড়ের স্টিফনেসের মতো সমস্যায় ভুগছেন। কিন্তু কেন?
মুম্বাই-এর ভিকেয়ার ইমেজিং অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক ও সিনিয়র কন্সালটেন্ট রেডিওলজিস্ট ডা. অভিজিৎ সাওয়ান্ত বর্তমান পরিস্থিতির ভিত্তিতে এর কারণগুলো ব্যাখ্যা করেছেন-
অফিস চেয়ার, স্ক্রিন আর নিস্তব্ধ ব্যথা
বর্তমান সময়ের কর্পোরেট দুনিয়ায় মানুষ সারাদিন একই চেয়ারে বসে, দৃষ্টিকে আটকে রাখে কম্পিউটার স্ক্রিনে, আর আঙুলকে ব্যস্ত রাখে কিবোর্ড-মাউসে। একদিকে বাড়ছে কাজের গতি, অন্যদিকে নিঃশব্দে বাড়ছে শারীরিক ব্যথা। আর বয়স হিসাব করলে তাদের বেশিরভাগই এখন মিলেনিয়াল। জেনারেশন-জি আসতে শুরু করেছে মাত্র কয়েক বছর আগে।
প্রযুক্তির উপকার, শরীরের ক্ষতি
আজকের প্রজন্মগুলো বড় হয়েছে স্মার্টফোন ও ল্যাপটপের যুগে। কিন্তু আধুনিক জীবনের এই ডিজিটাল কেন্দ্রিকতা তাদের ৩০ বছর না হতেই ঠেলে দিচ্ছে এমন সমস্যার দিকে, যা একসময় ষাটোর্ধ্ব বয়সীদের ক্ষেত্রে দেখা যেত।
দীর্ঘ সময় বসে থাকা শরীরের জন্য ক্ষতিকর – এই কথাটি সবাই জানেন, কিন্তু বাস্তবে মেনে চলেন না। দিনে ৮–১০ ঘণ্টা বসে থাকার ফলে শরীরের ফ্যাসিয়া বা মাংসপেশিকে ঘিরে থাকা আবরণ শক্ত হয়ে যায়, রক্ত সঞ্চালন কমে যায় এবং স্নায়ুতন্ত্র সবসময় চাপের মধ্যে থাকে।
এর কিছু লক্ষণ দেখতে পাবেন আপনি নিজেই–
>> সকালে ঘুম থেকে উঠে বিভিন্ন জয়েন্টে বা গাঁটে ব্যথা।
>> দিনের মাঝপথেই ক্লান্তি।
>> সন্ধ্যায় পিঠ ও ঘাড়ে প্রচণ্ড ব্যথা।
এসবের কারণগুলোও আছে আপনার প্রতিদিনের রুটিনের মধ্যেই-
১. অবিরাম টাইপিং ও মাউস ব্যবহারের কারণে কবজি ও আঙুলে চাপ পড়ে।
২. অসচেতন দেহভঙ্গি পিঠ ও কাঁধে প্রদাহ তৈরি করে। লম্বা সময় বসে থাকতে থাকতে মনের অজান্তেই পিঠটা কুঁজো হয়ে যায়, বা ফোন দেখতে দেখতে ঘাড়টা ঝুঁকে আসে। এভাবে খারাপ পশচার বা দেহভঙ্গি ধীরে ধীরে হাঁড়ের গঠনের ওপর প্রভাব ফেলে।
৩. নড়াচড়ার অভাবে পেশির ক্ষয় সৃষ্টি হয়।
৪. মানসিক চাপ স্নায়ুর উপর বাড়তি চাপ তৈরি করে।
প্রতিদিনের জীবনে এসব অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদে আপনার যেসব বিপদ আনতে পারে-
>> স্লিপড ডিস্ক: মেরুদণ্ডের ডিস্ক নিজের জায়গা থেকে সরে গিয়ে স্নায়ু চেপে ধরা।
>> কার্পাল টানেল সিনড্রোম: কবজির নার্ভ চেপে গিয়ে আঙুলে ঝিমুনি বা অসাড়তা।
>> শোল্ডার টেনডিনোসিস: কাঁধের টেন্ডন বা পেশী ফুলে যাওয়া।
>> ট্রিগার ফিঙ্গার: মাউস বা টাইপিংয়ের চাপে আঙুল শক্ত হয়ে যাওয়া।
প্রাথমিক লক্ষণ চেনা জরুরি কেন?
এই সমস্যাগুলোর বেশিরভাগই শুরু হয় হালকা ঝিমুনি, ক্লান্তি, বা সামান্য ব্যথা দিয়ে। অনেকেই একে কাজের চাপে স্বাভাবিক ভেবে এড়িয়ে যান। কিন্তু একবার যদি এগুলো দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে, তখন অস্ত্রোপচার ছাড়া গতি থাকে না।
চিকিৎসাবিজ্ঞান এখন অনেক অধুনিক, দু’একটি স্ক্যানে সহজেই দেখা যায় যে – নার্ভ চাপ খাচ্ছে কিনা, টেন্ডনে প্রদাহ আছে কিনা, ডিস্ক বেরিয়ে এসেছে কিনা ইত্যাদি। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করতে পারলে এই বিপদটি অল্প থাকতেই সামলে নেওয়া সম্ভব।
সমাধানের নানান রকম স্তর আছে। চিকিৎসকের পরামর্শে ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম, ব্যথানাশক ওষুধ, দেহভঙ্গি সংশোধন – এসব দিয়েই ব্যথাকে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।
তবে ব্যথার ওষুধের দরকার তৈরি হওয়ার আগেই যদি আপনি নিজে সচেতন হয়ে যান, তাহলে এর অনেককিছুই এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব এখনও। যেভাবে সচেতন অভ্যাস করবেন-
১. সঠিক চেয়ার বেছে নিন যাতে পিঠ সোজা থাকে ও স্ক্রিন থাকে চোখের সমান উচ্চতায়।
২. প্রতি ৩০–৬০ মিনিটে দাঁড়িয়ে হাঁটুন বা স্ট্রেচিং করুন।
৩. প্রতিদিন ১৫ মিনিট হালকা মোবিলিটি ব্যায়াম করুন।
৪. প্রয়োজনে কর্মস্থলের চেয়ার বা ডেস্ক বদলান, চেয়ারে ব্যাক সাপোর্ট ব্যবহার করুন।
৫. হেলথ অ্যাপ বা ফিটনেস ট্র্যাকার ব্যবহার করুন।
৬. কর্মস্থলে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়াতে উদ্যোগ নিন।
আপনার কাজ ডিজিটাল হলেও শরীর কিন্তু এখনো চলাফেরা করতে চায়। তাই ব্যথা আর অসাড়তাকে উপেক্ষা করবেন না, এটি হতে পারে দীর্ঘমেয়াদি কোনো বিপদের সতর্কবার্তা। তাই সময় থাকতেই সচেতন হন। শরীরের ভাষা শুনুন এবং যত্ন নিন।
সূত্র: টাইমস্ অব ইন্ডিয়া