ননদ ভাবীর লড়াই

  • ফারজানা আক্তার 
  • মে ১৮, ২০২১

' তুই বেশি বাড়াবাড়ি করছিস, মিতু! এখনো বলছি এসব নাটক বন্ধ কর। ' 

ভাইয়া আমার রুমে এসে চিৎকার করে কথাগুলো বলছে। আমি তার কথা পাত্তা না দিয়ে নিজের মতো করে রেডি হচ্ছি। ভাবীকেও তাড়া দিচ্ছি দ্রুত রেডি হওয়ার জন্য। ভাবীকে নিয়ে কোর্টে যাবো। আমি মিতু। তিন ভাইয়ের একমাত্র আদরের ছোট বোন। এবার ভার্সিটিতে উঠলাম। মাত্র ৬ মাস আগে আমার বড় ভাইয়া বিয়ে করেন। ভাইয়া নিজের পছন্দেই বিয়ে করেন। ভাবীকে আমাদের সকলের খুব পছন্দ হয়। 

যেদিন ভাইয়া ভাবীকে বিয়ে করে বাসায় নিয়ে আসে সেদিন পুরো বাড়ি থমথমে অবস্থায় ছিল। বাবা তো এই বিয়ে কিছুতেই মেনে নিবেন না। বাবা ঘরের কর্তা। বাবা যে বিষয় মেনে নিবেন না, মা'ও সেই বিষয় মেনে নিবেন না।

আরো পড়ুন :  গেটস দম্পতি, এবং ধূসর বিবাহবিচ্ছেদ!  

বাকি রইলাম আমি আর বাকি দুই ভাই। আমাদের অবস্থা বাবা - মা যা বলবে সেটাই। তাদের মুখের উপরে কিছু বলার সাহস আমাদের নেই। ভাবী বাড়ির গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন। আশেপাশের প্রতিবেশীরা সবাই ভীড় করে দাঁড়িয়ে আছেন শেষ পর্যন্ত কী হয় দেখার জন্য। পথচারীরাও পথ চলতে চলতে দাঁড়িয়ে বিনা টিকেটে আমাদের পরিবারের কাহিনী দেখছে। বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে ভাইয়া বিয়ে করে বউ নিয়ে এসেছেন। এই বিষয়টা বাবা - মা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না। তাদের একটাই প্রশ্ন - ' ঘুরতে গিয়ে একা বিয়ে করার সাহস ছেলেকে কে দিলো ?'

ভাইয়া বারবার বাবা - মাকে বুঝাতে লাগলেন পরে সব কথা বিস্তারিত বলবেন। আপাতত তাদের ঘরে ঢুকতে দেওয়া হোক। ভাবী একনাগাড়ে কেঁদে যাচ্ছিলেন। আমার তখন ভাবীর জন্য খুব কষ্ট হতে লাগলো। বেচারি!! নিশ্চয় অনেক স্বপ্ন ছিল শ্বশুরবাড়িতে সবাই তাকে হৈ - হুল্লোড় করে বরণ করবে! তা না করে এখন তাকে গেইটের সামনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে।  

আরো পড়ুন : এই দেশে মেয়ে হয়ে জন্মানোটা আজন্ম পাপ!

কী মনে করে অবশেষে বাবা বাসায় ঢুকতে অনুমতি দিলেন । সেই সাথে ভাইয়ার যে সকল বন্ধুরা একসাথে ঘুরতে গিয়েছিলো সকলকে আর্জেন্ট আমাদের বাসায় ডাকা হলো। ভাইয়া - ভাবীকে ড্রয়িং রুমে বসতে দেওয়া হলো। ভাইয়া নিজের রুমে ঢুকার অনুমতি পাননি। 

মা তাদের সামনে হালকা কিছু খাবার এনে দিলেন। ভাবী এক গ্লাস পানি ছাড়া আর কিছু খেলেন না। আমি ভাবীর মুখটা দেখার চেষ্টা করলাম। সেই বয়সে নতুন বউ / বরের মুখ দেখার প্রতি আলাদা আকর্ষণ কাজ করতো। পরিস্থিতি যাই হোক নতুন বর / বউ শুনলে আগে তাদের মুখ দেখতে হবে এটাই আমার অভ্যাস বা বদভ্যাস যাই হোক সেটা ছিল। 

ভাবী উড়না দিয়ে মাথা এবং মুখ যতটুকু প্যাঁচিয়ে ঢাকা যায় ঢেকে জড়সড় হয়ে বসে আছেন। ভাইয়া একটু দূরে বসে আছেন। কেউ কোন কথা বলছে না। বাবা নিজের রুমে। মা রান্নাঘরে এটা সেটা নাড়ছেন। অন্য দুইভাই একটু দূরে দাঁড়িয়ে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করছে। আমি ভাবীর কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। মন চাচ্ছে একটু কথা বলি, কিন্তু সাহস পাচ্ছি না। 

আরো পড়ুন : কলার খোসা ব্যবহারে শরীরের কালচে দাগ দূর হবে

ভাবী নিজ থেকেই বললেন তিনি ওয়াশরুমে যাবেন। আমি তাকে নিয়ে গেলাম। ওয়াশরুম থেকে ফেরার পথে ভাবী আমার গালে হাত দিয়ে নাম জানতে চাইলেন। আমি নাম বললাম। তখন ভাবীর মুখের দিকে তাকালাম। কী সুশ্রী! আমি হা করে তাকিয়ে রইলাম। পুরো সিনেমার নায়িকাদের মতো দেখতে লাগলো ভাবীকে। কান্নাকাটি করে চোখ, মুখ ফুলিয়ে রেখেছে। 

স্বাভাবিকভাবে হয়তো আরো অনেক সুন্দর লাগে ভাবীকে দেখতে! কোথায় যেন শুনেছি কাঁদলে মেয়েদের সৌন্দর্য বেড়ে যায়! আমি চিন্তায় পড়ে গেলাম কান্না করার কারণে ভাবীকে বেশি সুন্দর লাগছে, নাকি স্বাভাবিক অবস্থায় ভাবী বেশি সুন্দর! দুপুর হতে না হতেই ভাইয়ার বন্ধুরা সকলে উপস্থিত হয়েছে। ১২ জনের টিম মিলে সিলেট ঘুরতে গিয়েছিলো। তাদের সেখানে ৭ দিন থাকার কথা। কিন্তু মাত্র চতুর্থ দিনের মাথায় হুট করে সবাই ঢাকায় চলে এসেছে। 

আরো পড়ুন : জাপানি নারীদের বয়স ধরে রাখার ৮ টি গোপন বিষয় জানুন

ফজরের নামাজের পর বাবা হাঁটতে বের হন। ঘটনার দিন ফজরের নামাজ পড়ে বাবা যখন হাঁটতে বের হচ্ছিলেন তখন ভাইয়া ভাবীকে গেইটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেন। বাবার মাথা তখনই খারাপ হয়ে যায়। মাকে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যান। ভাইয়ার স্পর্ধা দেখে বাবা - মা দুইজনেই স্তম্ভিত হয়ে পড়েন। 

বড় ভাইয়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। বছর দুয়েক হলো চাকরি করছেন। এর আগে অনেকদিন বেকার ছিল। মেজো ভাইয়া সরকারি চাকরির জন্য চেষ্টা করছেন। ছোট ভাইয়া মাস্টার্সে পড়ছেন এবং পাশাপাশি কোচিং সেন্টারে পড়ান। 

আমার বাবা একজন ব্যাংক কর্মকর্তা। মা গৃহিনী। অন্য ৮ - ১০ টা মধ্যবিত্ত পরিবারে যেমন কিছু নিদিষ্ট সংষ্কৃতি, নিয়ম - কানুন, রেস্ট্রিকশন থাকে আমাদের পরিবারেও আছে। একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে বন্ধুদের সাথে বেড়াতে গিয়ে চেনা নেই, জানা নেই একটি মেয়েকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে আসবে এটা কল্পনার বাহিরে। তাছাড়া, আমার বাবা এমনিতে অনেক প্রাচীন রীতিনীতি মেনে চলেন। বড় ছেলের এমন কান্ডজ্ঞানহীন কাজ তিনি হজম করতে পারছেন না। 

আরো পড়ুন : সাধারণ আলুর চমৎকার কিছু ব্যবহার যা অনেকেরই অজানা

পরিবারের সবাই একসাথে বসেছে, সাথে ভাইয়ার বন্ধুরা। ফাইনালি ঘটনা যা জানা গেলো! রেশমি মানে আমাদের ভাবীর সাথে ভাইয়ার ফেসবুকে পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে দুইজন নিয়মিত কথাবার্তা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। ভাবী সিলেটে মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করতেন। ভাবীর বাবা - মা বেঁচে নেই আর কোন ভাই - বোনও নেই। 

ভাইয়ার সিলেট ঘুরতে যাওয়ার আরেকটি কারণ ভাবীর সাথে দেখা করা। সেখানে যাওয়ার পর ভাবী জানান তার মামা - মামী তাকে জোর করে দেহ ব্যবসায় নামাতে চাচ্ছে। এতদিন সে অনেক কষ্টে নিজেকে এই খারাপ কাজ থেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে হয়তো আর বেশিদিন নিজেকে বাঁচাতে পারবে না। যদি সম্ভব হয় বন্ধু হিসেবে ভাইয়া যেন কিছু একটা করে!

ভাইয়া ভাবীর মামা - মামীর সাথে এই বিষয়ে কথা বলতে গেলে তারা রেগে যান। অপমান করে ভাইয়াকে তাড়িয়ে দেন। রাতে ভাবী লুকিয়ে ভাইয়ার সাথে দেখা করতে হোটেলে আসেন। তখন ভাবীর মামা - মামী এলাকার কিছু মাস্তান টাইপের ছেলেদের নিয়ে সেই হোটেলে এসে ভাইয়া এবং ভাবীর নাম কলংক দিয়ে জোর করে তখনই বিয়ে দিয়ে দেন। এইরকম অপ্রত্যাশিত বিব্রতকর পরিস্থিতিতে সকলে হোটেল ছেড়ে ঢাকা রওয়ানা দিতে বাধ্য হয়। এই হলো ভাইয়াদের বিয়ে এবং ভ্রমণ কাহিনীর সারমর্ম। 

আরো পড়ুন : বেশিরভাগ হার্ট অ্যাটাক মধ্যরাতে কিংবা ভোরেই কেন হয়?

ভাবীর জীবনের ঘটনা শুনে আমার নিজের চোখে পানি চলে আসলো। মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করছিলাম বাবা - মা যেন তখনই সব মেনে নেয়। সাথে সাথে মেনে না নিলেও বাবা - মা কিছুদিন সময় নিলেন। এই কিছুদিন ভাবী আমার সাথে আমার রুমে থাকবে। বাবা বললেন তিনি তার কিছু কাছের মানুষজনদের সাথে আলাপ আলোচনা করবেন। তবে তিনি সাথে এটাও বললেন তিনিও একজন মেয়ের বাবা। এমন কোন সিদ্ধান্ত নিবেন না যেন ভাবীর জন্য খারাপ কিছু হয়। 

সেই মুহূর্তে আমার বাবাকে নিয়ে খুব গর্ব হচ্ছিলো আর ভাবীর মামার জন্য উপর হচ্ছিলো প্রচন্ড রাগ আর ঘৃণা। কখনো সুযোগ আসলে ওই লোককে আমি কঠিন শাস্তি দিবো। আর, বাবাকে দিবো পুরস্কার। বড় ভাইয়ার জন্যও খুব গর্ব হচ্ছিলো। কঠিন বিপদের মুখে সে চাইলেই ভাবীকে ফেলে দিয়ে আসতে পারতো কিন্তু সেটা করেনি। তাছাড়া ভাবীর সাথে তার কোন প্রেমের সম্পর্ক ছিল না।  ছিলো আবেগের সম্পর্ক। পরিবারের সাথে কঠিন পরিস্থিতি ফেস করতে হবে জেনেও ভাইয়া ভাবীর হাত ছাড়েনি। শুরুতে ভাইয়াকে কতটা ভুল বুঝেছিলাম! পরে নিজেরই লজ্জা লাগছিলো। 

আরো পড়ুন : সন্তানের প্রতি ভুল ধারণা ভবিষ্যতে অনুশোচনা করতে হয় বাবা-মায়ের

সেদিনের ঘটনার প্রায় ১৫দিন পর কাছের কিছু আত্মীয় - স্বজনদের দাওয়াত করে কাজী ডেকে আবার ভাইয়া -ভাবীর বিয়ে দিয়ে ভাবীকে ভাইয়ার রুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হলো। আমার মনে হয়েছিল ভাইয়া - ভাবীর গল্পের সুন্দর সমাপ্তি হলো। 

কিন্তু না! ভদ্রতার আড়ালে আমার ভাইয়ার যে কুৎসিত মুখ লুকিয়ে আছে সেটা আমি নিজে জানতে পারলাম তাদের বিয়ের ১ মাস পর। বাবা - মাকে জানালাম আরো ১০দিন পর। নিজেদের ছেলের অন্ধকার দিক ঢাকতে আমার বাবা - মা তৎফর হয়ে উঠলেন। যে বাবা - মাকে আমি সবসময় দেখেছি সততার সহিত চলাফেরা করতে, অন্যায়ের সাথে আপোষ না করতে সেই বাবা - মা'ই কেমন যেন পাল্টে গেলো!

আরো পড়ুন :  কিডনি পরিষ্কার রাখবেন যেভাবে

ভাইয়ার আসল রূপ যা সামনে আসলো! বড় ভাইয়া এবং তার বন্ধুরা ফেসবুকে বিভিন্ন মেয়ের সাথে পরিচয় হয় এবং কথাবার্তা বলেন। তারপর তাদের সাথে দেখা করে প্রেমের ফাঁদে ফেলে রুমে ডেকে নিয়ে যায়। যার সাথে মেয়ের সম্পর্ক থাকে তার সাথে হয়তো স্বেচ্ছায় শারীরিক সম্পর্কে যায়, বাকিরা সেই মেয়েকে ধর্ষণ করে। যে মেয়ে দেখতে সুন্দরী অথবা টাকা পয়সা আছে তার কপাল একটু বেশি খারাপ কারণ তার ধর্ষণের আবার ভিডিও করে রাখা হয়। পরবর্তীতে সেইসব দিয়ে চলে ব্ল্যাকমেইলিং। 

প্রতি মাসে আলাদা আলাদা বন্ধুর উপর দায়িত্ব থাকে শিকার ধরার। ৬ মাস আগে বড় ভাইয়ার উপর দায়িত্ব ছিল। ভাইয়া ভাবীকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করে তবে পুরোপুরি ফেলতে পারেনি। কারণ ভাবীর অনুভূতি সত্যি ছিল এবং তার জীবনের গল্পটা একটু ভিন্ন। তাই ভাবী চেয়েছিলেন সরাসরি দেখা করে ভাইয়াকে সব কথা জানাবেন। সব শুনে ভাইয়া রাজি থাকলে সরাসরি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন। 

আরো পড়ুন : আপনার শিশুর ত্বক উজ্জল ও ফর্সা করার ১০ টি ঘরোয়া টিপস

ভাইয়া এবং তার বন্ধুরা ভাবলো সিলেট বেড়ানো হবে, সাথে তাদের মনের বাসনাও পূর্ন হবে। তাই তারাও খুব বেশি আপত্তি করেনি। সিলেট চলে গিয়েছে। এবং সিলেট গিয়ে মনের বাসনা পূর্ন করার আগে তাদের পরিকল্পনা সব ভেস্তে গেছে। ১৫দিন যেহেতু ভাবী আমার সাথে ঘুমিয়েছে এবং সবসময় মায়ের সাথে সাথে থেকেছে তাই ভাইয়া চাইলেও অনেককিছু বলতে পারেনি এবং করেনি। যেই ভাবী ভাইয়ার সাথে থাকা শুরু করেছে অমনি আসল রূপ বের হয়ে এসেছে। 

ভাবীর মতো সুন্দরী মেয়েকে ভাইয়া বিয়ে করে একা ভোগ করবে সেটা তার বন্ধুরা মানতে পারছে না। তারা যত মেয়ে পটিয়েছে ভাইয়া সবাইকে ভোগ করেছে, কিন্তু ভাইয়ার পটানো মেয়েকে তারা ভোগ করতে পারবে না এটা হবে না। এই নিয়ে তাদের বন্ধুদের মধ্যে শুরু হলো ঝামেলা। ভাইয়া শুরুতে রাজি ছিল না। যতই হোক এখন বিয়েটা পারিবারিকভাবে হয়েছে। ঘরের বউকে বন্ধুদের সাথে শুইতে দেওয়া যায় না। 

আরো পড়ুন : বিচ্ছিরি পেটের মেদ কমানোর ৬টি সিক্রেট ডায়েট

তাছাড়া ভাবী এইরকম মেয়ে নয়। নিজের জীবন নিজের হাতে শেষ করে ফেলবে তবুও এমন নোংরা কাজে নিজেকে জড়াবে না। ভাইয়া যখন বন্ধুদের সাথে তাদের প্রস্তাবে আপত্তি জানালো তখন অতীতের করা ভিডিও দিয়ে ভাইয়াকেও ব্ল্যাকমেইলিং করা হলো। নিজের জালে নিজেই আটকে পড়া যাকে বলে! ভাইয়া তখন ভাবীকে প্রেশার দিতে শুরু করলো। ভাবী নিজের কানকে নিজেই বিশ্বাস করতে পারেনি। তার নিজের স্বামী তাকে বলছে বন্ধুদের সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে! একজন স্ত্রীর জন্য এরথেকে অপমানজনক কথা আর কী হতে পারে! 

ভাবী শুরুতে নিজে চেষ্টা করছেন সমস্যার সমাধান করতে। না পেরে আমাকে জানায়। আমিও যতটুকু সম্ভব চেষ্টা করলাম কিন্তু আমাকে বড় ভাইয়া পাত্তাই দিলো না। অবশেষে বাবা - মাকে জানালাম। আমার বাবা - মা ভাবীর কথা চিন্তা না করে, তাদের ছেলের এতবড় অপরাধের কথা চিন্তা না করে ছেলের ভবিষ্যৎ আর তাদের মান - সম্মানের কথা চিন্তা করতে শুরু করলো।

আরো পড়ুন : বেলি ফ্যাট কমানোর ৩টি কার্যকরী টিপস

তাদের ছেলেকে পাপের দুনিয়া থেকে কিভাবে উদ্ধার করবে সেই চিন্তা না করে, সমাজে কিভাবে মুখ দেখাবে সেই চিন্তায় বেশি অস্থির হয়ে উঠলেন।এই প্রথম আমার পরিবার এবং পরিবারের লোকজনের জন্য লজ্জা লাগতে শুরু করলো, মনে ঘৃণা জমতে শুরু করলো। ভাবীর মামা - মামীর সাথে আমার পরিবারের লোকজনের খুব বেশি একটা পার্থ্যক আমি পেলাম না। ভাবী সারাক্ষণ কান্নাকারী করতেন। বাবা - মা আগের মতো আর ভাবীকে ভালোবাসেন না, কাছে ডাকেন না। কোন কারণে তারা ভাবীকে তাদের ছেলের জন্য হুমকি মনে করতে লাগলেন। ভাবী শুধু আমাকে দেখলে একটাই প্রশ্ন করেন, ' আমার জীবনটা এইরকম কেন, মিতু?'

আমি ভাবীর প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি না। আমার বুক ফেঁটে কান্না আসে। একজন মেয়ে হয়ে অন্য মেয়ের দুঃখ - কষ্ট কিছুটা হলেও অনুভব করি। বাবা - মায়ের উদাসীনতা আমাকে ভাবায়, ভাইদের খামখেয়ালিপনা কষ্ট দেয়।অবশেষে অনেক ভাবনা - চিন্তা করে আমি ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম, ' নিজের অধিকারের জন্য লড়াই করতে পারবেন ? নিজের প্রাপ্ত সম্মানের জন্য কঠিন পথ পাড়ি দিতে পারবেন ? অমানুষদের মানুষ করার জন্য কঠিন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে পারবেন ?'

আরো পড়ুন : ৩০-এরপরে বাচ্চা নিলে আপনি যে যে সমস্যাগুলোর মুখোমুখী হবেন!

ভাবী তখন উদাস নয়নে জানালা দিয়ে আকাশ দেখছিলেন। আমার প্রশ্ন শুনে আমার দিকে মুখ ফেরালেন না। একইভাবে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আকাশের দিকে তাকিয়ে উত্তর দিলেন, ' পারবো মিতু। পারবো। এতদিন ভাগ্য যেদিকে নিয়ে গেছে সেদিকে গিয়েছি। এবার ভাগ্যকে নিজের হাতে গড়ার শেষ চেষ্টা আমি করবো। '

ভাবীর ভাগ্য গড়ার প্রথম চেষ্টা অপরাধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে শুরু হবে। আমি ভাবীকে নিয়ে বের হচ্ছি নিজের আপন বড় ভাই এবং পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা করতে। একজন জঘন্য অপরাধ করেছে এবং অন্যরা সেই অপরাধীর পক্ষে সাফাই গাচ্ছে। আমার চোখে দুই পক্ষই সমান অপরাধী। 

ভাবীর সাথে সাথে এটা আমারো চ্যালেঞ্জ। নিজের অপরাধী ভাইকে শাস্তি নিয়ে পাপমুক্ত করা এবং মেরুদন্ডহীন বাবা - মা এবং অন্য দুইভাইকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে মেরুদন্ড শক্ত করা। এ এক কঠিন লড়াই। ননদ - ভাবীর যৌথ লড়াই। 

আরো পড়ুন : নিঃশ্বাস পরিষ্কার রাখে যে পাঁচটি খাবার

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment