ডিভোর্স কমানোর কিছু কার্যকরী উপায় !

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • অক্টোবর ২২, ২০১৭

মানুষ বিয়ে করে সুখে -দুঃখে, বিপদে - আপদে একে অপরের সঙ্গী হয়ে থাকার জন্য। বিয়ের পর দিন যত বাড়তে থাকে, দুইজনের নানা অমিল, অভিযোগ, রাগ -ক্ষোভ বাড়তে থাকে।  এ থেকেই একসময় দুইজন দুইদিকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। 'বিয়ে' নামের সুখের, স্বপ্নের শব্দটা অনেক অভিযোগ আর অনুযোগের কাদা ছোড়াছোড়ির মাধ্যমে 'ডিভোর্স' নাম দিয়ে শেষ হয়।  

ছোটখাটো কিন্ত গভীর কিছু বিষয়ের দিকে একটু নজর দিলেই এই ডিভোর্স নামক শব্দটা থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। যে বিষয়গুলোকে আমরা আসলে বিষয়ই মনে করি না, যে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা ভাবার চেষ্টা করি না, দিনশেষে এই বিষয়গুলোই আমাদের জীবনটাকে সুখের করে দেয় আবার জীবনটাকে বিষিয়ে তুলে। 

লেখাটা আমি লিখছি তাই আমি আমার নিজের জীবনধারা এবং বাস্তব কিছু অভিজ্ঞতা থেকে লিখছি।  অনেকের চিন্তার সাথে মিলে যেতে পারে আবার নাও মিলতে পারে। তবে সবাইকে অনুরোধ করবো ছোটখাটো এই বিষয়গুলো নিজের জীবনে এপলাই করতে। প্রমিজ করে বলতে পারি বিবাহিত জীবন ৮০% সুখের হয়ে যাবে। 

আরো পড়ুনঃ পেটের চর্বি কমাতে লেবু পানি ও কালো চা!

(১) ভালোবাসা প্রকাশ না করা :

আমাদের সব সমস্যার মধ্যে সবথেকে বড় সমস্যা হলো আমরা ভালোবাসা প্রকাশ করতে চাই না।  আমরা আশায় বসে থাকি আমাদের মনের খবর ভালোবাসার মানুষ বুঝে নিবে। আমরা ভুলে যাই মানুষ মাইন্ড রিডার না ! আমরা এটাও ভুলে যাই যে,  'আমি যেমন আশায় রয়েছি আমার ভালোবাসার মানুষ আমার মনের কথা বুঝে নিবে, সেও তো বসে থাকতে পারে আমার মুখ থেকে ভালোবাসার কথা শুনবে বলে । "  এই যে আমার আর ওই মানুষটার মাঝে একটা গ্যাপ সৃষ্টি  , সেটাকে ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’ বলে।  এই গ্যাপটাকে কখনো সম্পর্কে নিয়ে আসা যাবে না। শুধুমাত্র ‘কমিউনিকেশন গ্যাপ’- এর কারণে ২০১৪ সালে জার্মানিতে ১ লাখ ৬৬ হাজারের বেশি ডিভোর্স হয়েছে ৷

ভালোবাসার মানুষটির জন্য আপনার মনে যেসব কথা আছে সব খুলে বলুন।  তার মুখের কথা শুনোন। আপনি খুব ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন সেটা তাকে বুঝিয়ে বলুন।  চিৎকার করে অল্পতে উত্তেজিত হয়ে যে কথাটা বলছেন সেই কথা আসতে ধীরে নরম সুরে বলুন।  আপনি যেমনই থাকুন, যেভাবে থাকুন আলোচনা করে নিন। মনে রাখবেন কোনো প্রকারে দূরত্ব তৈরী করা যাবে না। 

(২)  বিশ্বাস :

যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রথম এবং প্রধান শর্ত ‘বিশ্বাস' ৷ একটি সম্পর্কে যখন থেকে বিশ্বাস নষ্ট হয়, ঠিক তখনই সে সম্পর্কের মৃত্যু হয়। অনেকে নিজের বিবাহিত জীবনকে ছেলেখেলা মনে করে অন্য নারী বা পুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তুলে।  অনেকে আগের প্রেমকে আবার জাগিয়ে তুলে। আপনি যখন জানতে পারবেন আপনার সঙ্গীটি অন্য কারো প্রতি আসক্ত অথবা পুরানো প্রেমে মজে আছে, বাস্তবিক অর্থে আপনি আর এই সম্পর্কে এগোতে চাইবেন না।  সম্পর্কটি ডিভোর্সে যেয়ে শেষ হয়। 

আরো পড়ুনঃ মাত্র তিনটি খাবারে পরিষ্কার রাখুন লিভার

আবার অনেকে তার সঙ্গীটিকে ঠিকভাবে বিশ্বাস করতে পারে না।  এই জন্য সে তার ব্যবহৃত মোবাইল, ল্যাপটপ, ব্যাগ বা সোশ্যাল মিডিয়ার পাসওয়ার্ড নিয়ে ঘাটাঘাটি করে।  দিনে বাহিরে বের হলে ১০০% বার ফোন দিয়ে কোথায় কোথায় গেলো বা ছবি তুলে পাঠাতে বলে। এই কাজটা অনেকে আবার আগের সম্পর্কে পাওয়া ভয় থেকে করে।  আপনি একবার নিজেকে দিয়ে ভাবুন তো কেউ আপনার ফোন, ল্যাপটপ, ফেইসবুক বা আপনার কর্মস্থল নিয়ে সারাক্ষন ঘাঁটাঘঁটি করছে তাতে আপনার কেমন লাগবে ! এই কাজটা ভুলেও করতে যাবেন না।  তাতে ওই মানুষটার দম আটকিয়ে আসবে। সে তার বন্ধুদের সাথে যেভাবে কথা বলে সেটা আপনার ভালো নাও লাগতে পারে, আবার আপনি যেভাবে আপনার বন্ধুদের সাথে মিশবেন সেটাও তার ভালো না লাগতে পারে। সে যদি আপনার সাথে অসৎ হয়ে থাকে এমনিই ধরা খাবে , আপনাকে গোয়েন্দাগিরি করতে হবে না। 

আপনার ভালোলাগা, খারাপলাগা , পছন্দ - অপছন্দ সব খুলে বলুন। নুতন কাউকে ভালো লাগলেও সরাসরি বলে দেন। সম্পর্কে কখনো গোয়েন্দাগিরি, লুকোচুরি, মিথ্যাচার করতে যাবেন না। 

(৩) শারীরিকভাবে  অতৃপ্ত হলে :

শারীরিক ভালোবাসা একটি সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ 'শারীরিকভাবে অতৃপ্ত' এই ব্যাপারটা আমি দুইভাবে দেখি।  এক - স্বামী হয়তো যখন তখন কাছে যেতে চাচ্ছে কিন্ত বউ চাচ্ছে না। স্বামী মানুষটা বুঝতেই চাই না শারীরিক ব্যাপারটা দুইজনের সম্মতির ব্যাপার, দুইজনেরই চাওয়া পাওয়ার ব্যাপার !  স্বামীর কথামতো বউ কাছে আসছে না তাই স্বামী শুরু করে দিলো ঝামেলা, সংসারে অশান্তি এবং সর্বশেষ পরকীয়া।  যে স্বামী তার বউকে সত্যিকার ভাবেই ভালোবাসবে, সম্মান করবে তার কাছে এই সমস্যাটা অনেকটা তুচ্ছ মনে হবে। 

দুই : স্বামী শারীরিকভাবে তেমন সুস্থ না।  সোজা কথায় বউয়ের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না। স্ত্রী তখন ছুটলো পর পুরুষের দিকে। যে স্ত্রী স্বামীকে মন থেকে ভালোবাসবে তার কাছেও এই ব্যাপারটা তুচ্ছ মনে হবে অথবা যথাযথ চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবে। স্বামীকে বর্তমান রেখেই অন্য জনের কাছে ছুটবে না। একান্ত অপেক্ষা করতে না চাইলে স্বামীকে বলে ডিভোর্স, তালাক যা ইচ্ছে নিয়ে চলে যাওয়ায় ভালো।  আমার কাছে ডিভোর্স শব্দটা থেকে পরকীয়া শব্দটাতে  অনেক বেশি  ঘৃণা লাগে। 

আরো পড়ুনঃ মা হতে চাইলে আজই যেসব অভ্যাস ত্যাগ করা উচিত

(৪)  কাজের ভাগ না নেওয়া :

এখানে আমি ছেলেদের দোষ তেমন একটা দেখি না ! কারণ আমাদের সমাজ এই প্রথা যুগের পর যুগ বয়ে বেড়াচ্ছে। সমাজ ঠিক করে দিয়েছে মেয়েরা সংসার সামলাবে আর ছেলেরা বাহিরের কাজ করবে। একটা সংসারের দায়িত্ব মেয়েটিকে পালন করতে হয় ২৪/৭। সমাজের কোনো কোনো প্রথা ঠিকভাবে পালন না করলেও ছেলেরা এই প্রথাটা ঠিকভাবে পালন করে।  অফিস শেষ করেই তাদের ডিউটি শেষ। ঘরের কাজে সাহায্য করার কোনো প্রয়োজনীয়তা বোধ তারা করে না। তারা ভেবে দেখে না রান্না - বান্না, ঘর - ঘুছানো, বাচ্চা - কাচ্চা, বাজার করা, পরিবারের সবার দেখাশুনা করা একজনের পক্ষে কতটা কষ্টকর !

কিছু ছেলে তাও বউকে সাহায্য করতে যেয়ে মায়ের চোখ রাঙ্গানি দেখে ফেরত চলে আসে। একটা সময় যেয়ে মেয়েটা তার সহ্য শক্তি হারিয়ে ফেলে। সম্পর্কের ইতি টেনে নিয়ে আসে।  মনে রাখবেন সংসারটা একা কারো নয়, দুইজনের মিলে সংসার ।  সুখ - দুঃখের পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বটাও দুইজন মিলে নিন। 

(৫) ভুল ধরিয়ে দেয়া :

প্রেম ভালোবাসা, বিবাহিত জীবনে কেউ কারো বস নয়, এই কথাটা মনে রাখবেন । তোমাকে ডান দিকেই হাঁটতে হবে, তোমাকে ঘরের কোনেই থাকতে হবে এসব চিন্তাধারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। অফিস থেকে ফিরতে কেন দেরি হলো, বন্ধুদের সাথে এতো কিসের কথা, তরকারিতে হলুদ কেন বেশি হলো, লবন কেন দাও নি এসব বলা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। ভুল তো আমাদের সবারই কম- বেশি হয় , ভুলগুলো ধরিয়ে শোধরে দিতে হবে। চিৎকার -চেঁচামেচি করে কখনো কাউকে শোধরানো যায় না মনে রাখতে হবে। 

(৬) নিজেকে ডিফাইন করা :

নিজেকে কখনো ডিফাইন করা যাবে না।  আমিই তো সব স্যাক্রিফাইস করি, আমিই তো সব কাজ করি ইত্যাদি বলা যাবে না। অনেকেই অল্পতে রেগে যেয়ে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দেয়।  তাতে কি কখনো সমস্যার সমাধান হয়, উল্টা বিপরীত ফলাফল হয়। যখনই সমস্যা হবে দুইজন মিলে দুইজনের সব কথা শুনে সমাধান করতে হবে।  অনেক সময় এক পক্ষ কিছু বলতে চাইলে অন্য পক্ষ শুনতে চায় না।  এ কাজটা কখনোই করা যাবে না। 

একে অপরকে ছোট খাটো উপহার দিন। সবসময় দামি শাড়ি, দামি শার্ট এসব দিতে বলছি না। ফুল, চকলেট, ছোট্ট কোনো চিরকুট অথবা পছন্দের ছোট-খাটো অন্য কিছু  ইত্যাদি উপহার দিতে পারেন। মাঝে মাঝে একে অন্যকে সারপ্রাইজ দিন। ঘুরতে নিয়ে যান।  স্পেশাল দিনগুলোকে সাধ্যমত স্মরণীয় করে রাখুন। এই ব্যাপারটা আপনার কাছে হাস্যকর বা সিনেমাটিকে মনে হলেও বিশ্বাস করুন এই ব্যাপারগুলোই সম্পর্কগুলোকে বাঁচিয়ে রাখে। 

আরো পড়ুনঃ শীতে যেসব খাবার এড়িয়ে চলতে পারলে শিশু থাকবে সম্পূর্ণ সুস্থ

(7) সত্যতা যাচাই করুন :

আপনার বউ আপনার পরিবার নিয়ে কোনো কমপ্লেইন করলে সেটাকে উড়িয়ে দিবেন না। বউকে অযথা দোষারোপ করে ঝগড়া শুরু করবেন না। আমি বলছি না বউয়ের কথা শুনেই নিজের পরিবারে সাথে ঝামেলা করুন। আপনার নিশ্চয় আপনার বউ, মা - বাবা, ভাই-বোন, ভাই-ভাবি সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা আছে। তাই বউকে বউয়ের মতো সান্তনা দিয়ে নিজে বউয়ের কথাগুলো যাচাই বাছাই করুন।  

আবার, পরিবারে কথা শুনেও বউকে এসে মারাশুরু করবেন না। সব বিষয়ের সত্যতা জেনে নিয়ে সমস্যার সমাধান করুন।  বউ অন্যের মেয়ে বলে সে সবসময় খারাপ, আর পরিবারটা আপনার বলে সবসময় ভালো নাও হতে পারে।  

 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment