শিশুর হাত, পা ও মুখের রোগ

  • তন্ময় আলমগীর
  • অক্টোবর ২৮, ২০১৮

শিশুদের  অত্যন্ত সংক্রামক একটি ব্যাধি হলো  (HFMD) বা হাত, পা ও মুখের রোগ । এর ভাইরাস নাক এবং গলা থেকে নির্গত পদার্থ, ফুসকুড়ি বা মল থেকে ছড়াতে পারে। লক্ষণ দেখা দেয়ার প্রথম সপ্তাহে এটি দ্রুত ছড়াতে পারে।  এন্টেরোভাইরাস পরিবারের কক্সাকি ভাইরাসের আক্রমণ এই রোগ সৃষ্টির জন্য দায়ী। এটির ভাইরাস ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে সরাসরি ছড়িয়ে পরে অপরিষ্কার হাতের মাধ্যমে। এছাড়া আক্রান্ত ব্যক্তির লালা, মল ও নিঃশ্বাসের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে। HFMD  হলে মুখে ফুসকুড়ি বা ঘা হয় এবং হাত পায়ে র‍্যাশ হয়।  ৫ বছরের কম বয়সের শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয় এই রোগে। কিছু ক্ষেত্রে এ রোগ থেকে ভাইরাল মেনিনজাইটিস ভাইরাল মেনিনজাইটিস, মস্তিষ্কের প্রদাহ (এনসেফালাইটিস) বা পক্ষাঘাত (পোলিওর মত) হতে পারে।

যেভাবে বুঝবেন শিশুর হ্যান্ড ফুট এন্ড মাউথ ডিজিজে আক্রান্ত : সাধারণত  HFMD এর লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে সময় লাগে ৩-৭দিন। এই সময়টাকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলে। জ্বর, খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া, গলা ব্যথা, মাথা ব্যথা, মুখে লাল ও ব্যথাযুক্ত ফুসকুড়ি হওয়া, হাতের তালু ও পায়ের পাতার নীচে লাল র‍্যাশ হওয়া। HFMD এর প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর ও গলাব্যথা আগে প্রকাশ পায়। ১/২ দিন পর ফুসকুড়ি ও র‍্যাশ দেখা দেয়।

লক্ষণগুলো :

- সংক্রমণের সঙ্গে রোগীদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে জ্বর দেখা দেখা দেয়।

- নবজাতক  এবং শিশু বদমেজাজী হয়ে যায়।

- জিভ এবং কখনও কখনও গালের ভিতরে ফোসকা (প্রায়ই বেদনাদায়ক) হয়। ফলে, শিশুদের খেতে  অসুবিধা হয়।

- গলায় ঘা হবার কারণে খিদে কমে যায়।

- পায়ের ওপর ,বেশিরভাগ পাতার নিচে, হাত, কোমর, হাঁটু এবং কখনও কখনও এমনকি যৌনাঙ্গ এলাকায় লাল লাল ফুসকুড়ি হতে পারে। তবে এগুলোতে চুলকানি থাকেনা। জ্বরের সাধারণত এক বা দুই দিন পরে ফুসকুড়ি দেখা যায়। যদি লাল লাল ফুসকুড়ি এবং ফোস্কা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সময় ধরে থাকে এবং খাওয়া, পান করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে শিশু অস্বস্তির সম্মুখীন হয়, তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা : শারীরিক লক্ষণ পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে এই রোগটি শনাক্ত করে থাকেন ডাক্তার। এছাড়াও গলা থেকে নমুনা নিয়ে পরীক্ষা করে বা স্টুল পরীক্ষার মাধ্যমে ভাইরাস শনাক্ত করা যায়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই ইনফেকশন ৭-১০দিনের মধ্যেই ভাল হয়ে যায়। এই রোগের প্রতিকারে ডাক্তারের তেমন কিছু করার নেই। তবুও চিকিৎসক উপসর্গ যেমন জ্বর ও ব্যথা কমার জন্য ব্যবস্থাপত্র দিতে পারেন। ফুসকড়ি ও র‍্যাশ কমার জন্য সাময়িক মলম বা অয়েন্টমেন্ট, ব্যথার ঔষধ যেমন- অ্যাসিটামিনোফেন বা আইবুপ্রোফেন, গলা ব্যথার জন্য সিরাপ বা লজেন্স খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। মনে রাখতে হবে বাচ্চাকে কখনো এস্পিরিন দেয়া উচিত নয়।

ডাক্তার পরীক্ষা করে দেখবেন বাচ্চার পানিশূন্যতার কোন লক্ষণ আছে কিনা। কারণ মুখের ঘা এর কারণে বাচ্চার দুধ বা পানি পান করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে। যদি আপনি বাচ্চার পানিশূন্যতার কোন লক্ষণ দেখেন, যেমন শুকনো মুখ বা স্বাভাবিকের চাইতে কম প্রস্রাব করা, তাহলে দ্রুত ডাক্তারকে জানান। বাচ্চার বয়স ৩ মাসের কম এবং জ্বর ১০০.৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তার বেশি হলে দ্রুত ডাক্তারের কাছে নিতে হবে। এই বয়সের বাচ্চার এই ধরনের জ্বরের ক্ষেত্রে দ্রুত চিকিৎসা নেয়া দরকার। বাচ্চার এই রোগ হলে বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা খেয়াল রাখতে হবে এবং তার খাবার এবং তরল গ্রহণের দিকে নজর দিতে হবে।
 

Leave a Comment