একটা লাশ কেন ১৪১৩ টুকরো হবে!

  • ফারজানা আক্তার
  • ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০১৮

অসম্ভব প্রতিভা নিয়ে কিছু কিছু মানুষ জন্মগ্রহণ করে। প্রতিভাবান এই মানুষগুলোর তালিকা বিশাল বড়। সেই তালিকায় আরো একটি নাম যুক্ত হলো মাস্টার দা নাঈম। অল্প বয়সে যে কয়জন মানুষ লেখকের খাতায় নাম লিখিয়েছে , মাস্টার দা নাঈম তাদেরও একজন। ওমেন্সকর্নার মুখোমুখি হয়েছে তরুণ উদীয়মান এই লেখকের। ওমেন্স কর্নারের সাক্ষাৎকারেমাস্টার দা নাঈম তার জীবনের নানা দিককার কথা বলেছেন, বলছেন অদ্ভুত এই নামের রহস্যও । সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ফারজানা আক্তার। 

ওমেন্সকর্নার : বইয়ে আপনার নাম মাস্টার দা নাঈম কেন ? এই নামের সারমর্ম কি ?

নাঈম : আসলে আমার নামের আগে মাস্টার দা কেন এই প্রশ্নে আমার ইনবক্স জ্যাম হয়ে আছে। আর এই প্রশ্নটা আসাই স্বাভাবিক। যদিও আমি এই প্রশ্নের উত্তর একাধিক বার দিয়েছি। তবুও আজ ওমেন্সকর্নার এর মাধ্যমে আবারো দিচ্ছি। আসলে আমি ছোট থেকেই টিউশন মাস্টার ছিলাম। আমি যখন ক্লাস ফোর এর ছাত্র তখন থেকেই আমি টিউশনি করাতাম। আমাদের গ্রামে যারা টিউশনি করাতো তাদেরকে সবাই নাম ধরে না ডেকে মাস্টার বলেই ডাকত। তো আমার মাস্টার নামটা আরো বেশি ছড়িয়ে পড়ে যখন আমি এস এস সি শেষ করি। আমি কখনো ঢাকা,কখনো চাঁদপুর, কখনো ময়মনসিংহ, আবার কখনো চট্টগ্রাম এ থাকতাম।

তবে থাকার মাধ্যম একটাই টিউশন মাস্টার হিসেবে। যখন চট্টগ্রামে ছিলাম তখন চট্টগ্রাম এর মানুষগুলো আমাকে প্রথমে বদ্দা বলেই ডাকত।দু চারদিন পর আস্তে আস্তে যখন পরিচিতি পেলাম টিউশন মাস্টার হিসেবে তখন তারা সবাই মাস্টার দা বলে ডাকত। আসলে দা মানে তারা দাদা বা ভাইকে বুঝাতো। এক কথায় ছোট থেকেই আমাকে মাস্টার মাস্টার ডাকতে ডাকতে এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমি যদি কাউকে অচেনা নাম্বারে ফোন করে বলি আমি "নাঈম"।তারা বলে " কোন নাঈম?"! কিন্তু মাস্টার দা নাঈম বললে সহজেই চিনে। ২০১১ সাল থেকে আমি ফেজবুকে টুকটাক লিখি। ফেজবুকেও আমার পরিচিতিটা মাস্টার দা নাঈম নামেই।যদিও এ নামটা ব্যবহার করা ঠিক হয়নি,তবুও আমি এই অবস্থায় এসে নামটা পরিবর্তন করতে পারছিনা। ছদ্মনাম হিসেবেই ব্যবহার করতে হবে আমাকে।

ওমেন্সকর্নার : বেড়ে উঠেছেন কোথায় ? শহরে নাকি গ্রামে ?

নাঈম : গ্রামেই বেড়ে উঠেছি। ছেলেবেলা গ্রামেই কেটেছে। 
 
ওমেন্সকর্নার :  ছোটবেলার মজার কোনো একটা ঘটনা পাঠকের উদ্যেশে বলুন। 

নাঈম : আসলে আমার ছোটবেলায় ঘটে যাওয়া মজার ঘটনার শেষ নেই। তারমধ্যে একটা ঘটনা বলি, একদিন গ্রামের রাস্তায় ছোট সাইকেল চালাচ্ছিলাম আমি আর আমার এক বন্ধু খোকন। আমি তখনো ভাল করে চালাতে পারিনা। রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া এক আপুর পেছনের দিক দিয়ে সাইকেলের চাকা লাগিয়ে দেই। ওমনি চিৎকার শুরু। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কান্না শুরু করলাম। আর চেয়ে দেখি খোকন তার সাইকেল মাথায় তুলে দৌড়াচ্ছে। ছেলেটা দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছেই; একবারও পেছনে ফেরে তাকানোর প্রয়োজন মনে করেনি। এদিকে আপুটা আমার সাইকেল মাথায় তুলে পাশের খালে ফেলে দিলেন! আর আমার গালে ঠাস করে একটা চড় মারলেন। চড় মেরেই উনি ক্ষান্ত হননি। আমাকে নিয়ে উনাদের বাড়ির ঘাটায় গাছের সাথে বেঁধে রাখে। যদিও অবশেষে আমাকে অনেক কিছু খেতে দিয়েছেন। তার কিছুদিন পর ওই আপুরই ছোট বোনকে love  u লিখে প্রপোজ করি। মেয়েটা তখন আমার সাথেই ক্লাস থ্রী তে পড়ে। ও আমার প্রপোজ প্রত্যাখ্যান করায় সেদিনই ক্লাস শেষে কলম দিয়ে ওর  পশ্চাৎদেশে খোঁচা মেরে রক্ত বের করে পালিয়ে যাই। এটা আমার জীবনে ছোট বেলায় ঘটে যাওয়া মজার ঘটনার মধ্যে একটি।

ওমেন্সকর্নার : ছোটবেলা আপনার "এইম ইন লাইফ " কি ছিলো ?

নাঈম :  আমার এইম ইন লাইফ ছিলো শিক্ষকতা করব, একটু বড় হওয়ার পর সেই লক্ষ্যটা পরিবর্তন করি। আমি ভাবতে থাকি কোন একদিন আমি লেখক হব। আমার লেখা বই মানুষ পড়বে।

ওমেন্সকর্নার : ছোটবেলা থেকেই কি লেখালেখির সাথে যুক্ত ?

নাঈম : আমি যখন খুব ছোট তখন নিজ থেকেই ভালোমন্দ লিখালিখি করতাম। তবে সেটা নিজের ডায়রিতে। ক্লাস ফাইভে পড়াকালীন আমার কিছু লেখা বিভিন্ন ম্যাগাজিনে ছাপা হয়। এতে আমার উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যায়। তখন থেকেই লিখালিখিটা আঁকড়ে ধরে। মাঝের কিছুটা সময় আমি নিরব ছিলাম।

ওমেন্সকর্নার : ২০১৮ সালের বইমেলায় পাঠক আপনার কয়টি বই পাচ্ছে ?

নাঈম : ২০১৮ সালে পাঠক আমার একটি বই পাচ্ছে। '১৪১৩ টুকরো একটি লাশ' আমার প্রথম প্রকাশিত বই। 

ওমেন্সকর্নার :  "১৪১৩ টুকরো একটি লাশ" আপনার প্রথম বই। এই বই নিয়ে আপনার অনুভূতি কেমন ?

নাঈম : প্রথম বইয়ের অনুভূতি বলে বোঝানো যাবেনা। কত রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি তার হিসেব নেই। আমার কাছে প্রথম বই প্রথম সন্তান জন্ম দেওয়ার অনুভূতির মতোই ।

ওমেন্সকর্নার :  বইয়ের নামটা একটু অন্যরকম ! নামের মধ্যেই লাশ, টুকরো ! এর কি কোনো কারণ আছে ? অথবা যদি জানতে চাই এটা কি রহস্য কিংবা গোয়েন্দা গল্পের বই ?

নাঈম : হ্যাঁ,বইয়ের নামের কারনে ইতোমধ্যে বইটা বেশ ভালোই ছড়িয়ে পড়ছে। সবারই ভাবনা একটা লাশ কেন ১৪১৩ টুকরো হবে? সংখ্যাটা ১০০ বা ২০০ হলোনা কেন? যাইহোক, এমন নামের কারনে বইটা ভালো যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আমি বলব, নামের স্বার্থকতা হয়েছে (হাসি)। এটা কোন গোয়েন্দা গল্প নয়, রহস্যময় বলাও চলেনা। তবে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে।

ওমেন্সকর্নার :  নতুন লেখকদের ডাকে পাঠক তেমন একটা সাড়া দেয় না, আবার অল্প বয়সে বই প্রকাশ পেলে পাঠক মনে করে লেখকের বয়স কম, কি এমন জানে আর কি এমন লিখবেই! সেই জায়গায় আপনি অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ আছেন। কেমন সাড়া পাচ্ছেন ? আপনার ডাকে পাঠক কতটা সাড়া দিচ্ছে ?

নাঈম : নবীন লেখকদের ডাকে পাঠক তেমন সাড়া দেয়না। এই ধারণাটা আমারো ছিলো। কিন্তু আমার ভুল ভেঙ্গে গেছে। আমি দেখেছি পাঠক কিভাবে লাইন ধরে নবীন লেখকের বই কিনে। আমি আপ্লুত, বিস্মিত, অভিভূত!  আমি কখনোই ভাবিনাই আমার মতো নবীনের বই পাঠক মহলে এতোটা সাড়া ফেলবে। তবে আমার বইয়ের এই অদ্ভুত নামের রহস্য খুঁজতেও অধিকাংশ পাঠক বইটার প্রতি ঝুকেছে। সব শেষে বলব,আমার চাওয়ার চেয়েও প্রাপ্তির হারটা অধিক এবং অধিক।

ওমেন্সকর্নার : দেশে এবং  বিদেশে আপনার প্রিয় লেখকের নাম জানবো। 

নাঈম : বিদেশী লেখকদের মধ্যে কোয়েল পাওলহোর লিখা ভালো লাগে।  দেশি লেখকদের মধ্যে প্রথমেই হুমায়ূন আহমেদ। তারপর আরো অনেক আছে ।

ওমেন্সকর্নার : লেখালেখির জগৎতে কতটা পথ পাড়ি দিতে চান ?

নাঈম : আমি ততোদিনই লিখে যাব যতোদিন পাঠকের ভালোবাসা পাবো। আর আমার মন যতদিন আমাকে লেখালিখি করতে মজাদার যন্ত্রণা দিয়ে বেড়াবে। আমি পাঠকের ভালোবাসাকে মজুদ করে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই।

ওমেন্সকর্নার : আপনার জন্য এবং আপনার বইয়ের জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা। আমরা নবীন লেখক মাস্টার দা নাঈমকে বিখ্যাত লেখক মাস্টার দা নাঈম হিসেবে দেখতে চাই।

নাঈম : ধন্যবাদ আপনাকেও। ধন্যবাদ ওমেন্সকর্নার কে। ইনশাআল্লাহ আপনাদের দোয়ায় এগিয়ে যাব।

Leave a Comment