
আমি ধীরে ধীরে দেবরের উপর দুর্বল হয়ে পড়েছি
- ওমেন্স কর্নার
- আগস্ট ১, ২০২৫
প্রশ্ন: আমার বয়স ২০ বছর। আমি দেবরের প্রেমে পড়েছি। ভালোবেসে ফুফাতো ভাইকে বিয়ে করেছিলাম দুই বছর আগে। বিয়ের ছয় মাস পর সে দুবাই চলে যায় কাজের জন্য। এরপর নানা বিষয় নিয়ে আমাদের মনোমালিন্য চলতে থাকে। যেমন আমাকে পড়াশোনায় বাধা দেওয়া, কারোর সঙ্গে দেখা করতে না দেওয়া ইত্যাদি। এসব সমস্যায় আমার দেবর মানসিকভাবে আমার পাশে ছিল। ধীরে ধীরে আমি তার উপর দুর্বল হয়ে পড়ি। এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।
উত্তর: ১. পরিস্থিতির বাস্তবতা বিশ্লেষণ করুন: আপনার স্বামীর সাথে দূরত্ব ও তার নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ সম্পর্কের ভিত্তি দুর্বল করেছে। দেবর আপনার কঠিন সময়ে আপনার পাশে ছিলেন এবং এই মানসিক সমর্থন আপনাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছে। এটি একটি স্বাভাবিক মানবিক প্রতিক্রিয়া। একে ‘ট্রমা বন্ডিং’ বা ‘ইমোশনাল ডিপেন্ডেন্সি’ বলা যায়। বাংলাদেশের সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষাপটে এই সম্পর্কের জটিলতা ভয়াবহ হতে পারে।
২. নিজের অনুভূতিগুলো বুঝুন: আপনি কি আপনার দেবরের প্রতি সত্যিই ভালোবাসার টান অনুভব করছেন, নাকি এই আকর্ষণ আপনার স্বামীর কাছ থেকে পাওয়া মানসিক সমর্থনের অভাব পূরণ করছে? আপনার দেবরের সাথে আপনার সম্পর্ক কি কেবল মানসিক নির্ভরতা, নাকি এর গভীরতা আরও বেশি? আপনার স্বামীর সাথে সম্পর্ক কি একেবারেই ভেঙে গেছে, নাকি এটি মেরামতের কোনও সুযোগ আছে?
৩. আপনার স্বামীর সাথে কথা বলুন: আপনার স্বামীর সাথে খোলামেলা কথা বলা জরুরি। ভিডিও কলের মাধ্যমে বা ফোনে আপনাদের সম্পর্কের সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করুন। তাকে বলুন যে তার আচরণ আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে এবং আপনি মানসিকভাবে ভালো নেই। যদি সম্ভব হয়, একজন তৃতীয় পক্ষের (যেমন- পরিবারের বিশ্বস্ত সদস্য বা ম্যারেজ কাউন্সেলর) সাহায্য নিতে পারেন।
৪. দেবরের সাথে সম্পর্কের পরিণতি নিয়ে ভাবুন: আপনার দেবরের সাথে একটি সম্পর্ক শুরু করলে সামাজিক এবং পারিবারিক কী ধরনের জটিলতা তৈরি হতে পারে, তা ভেবে দেখুন। এই সম্পর্ক কি আপনার এবং আপনার দেবরের ভবিষ্যতের জন্য ভালো হবে? তার অনুভূতিগুলো কী? তিনি কি আপনার প্রতি একই রকম অনুভব করেন? দেবরের সাথে কোনও আবেগীয় বা শারীরিক সম্পর্ক সামাজিকভাবে ধ্বংসাত্মক হবে, পারিবারিক সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে, এমনকি আইনগত সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
৫. নিজেকে সময় দিন: এই মুহূর্তে কোনও তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেবেন না। আপনি মানসিকভাবে অস্থির অবস্থায় আছেন। নিজেকে শান্ত করার জন্য সময় দিন এবং আপনার ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে ভালো কী হবে, তা ভেবে দেখুন।
৬. দীর্ঘমেয়াদী সমাধান: শিক্ষা ও ক্যারিয়ারে ফোকাস করুন। স্বামীকে বোঝান যে আপনার শিক্ষা ব্যক্তিগত বিকাশের জন্য জরুরি। চাকরি বা পড়াশোনার মাধ্যমে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন করুন। বিশ্বস্ত কারো (মা, বোন বা আত্মীয়) সাথে শেয়ার করুন। সামাজিক সমর্থন খুঁজুন। একান্তই সম্ভব না হলে অনুভূতি লিখে রাখুন।
৭. পেশাদার সাহায্য নিন: যদি সম্ভব হয়, একজন পেশাদার মনোবিজ্ঞানী বা কাউন্সেলরের সাথে কথা বলুন। তারা আপনাকে আপনার অনুভূতিগুলো বুঝতে এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারবেন। তারা নিরপেক্ষভাবে আপনার পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে পারবেন।
পরামর্শ দিয়েছেন মনোরোগ চিকিৎসক আতিকুল হক,
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন