ছোটগল্প : মৃত্যু 

  • ফারজানা আক্তার
  • জুলাই ৭, ২০২১

' মা! আপনি কিছু খাবেন ? কিছু বানিয়ে দিবো ? '

না বলতে গিয়েও বললাম না। এমনিতে এখন শুধু চা খেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু মন বলছে সাথে গরম গরম ঝাল ঝাল মুসুরির ডাল, আলু মিক্সড বড়া হলে বেশ ভালো হয়। নিজের সংসারে যেভাবে যা খুশি তৈরী করে খাওয়া যায়, ছেলের সংসারে সেটা হয়ে উঠে না।  এমন নয় আমার ছেলের বউ বা ছেলে আমার পছন্দমতো খাবার দিবে না বা খেতে নিষেধ করেছে বা আমাকে পছন্দ করে না। আমার ছেলের বউয়ের মতো এমন লক্ষ্মী বউ আর হয় না। চার চারটা সন্তানের জন্ম দিয়েছি। আল্লাহর রহমতে সব কয়টা মানুষের মতো মানুষ হয়েছে। 

দুই মেয়ে স্বামীসহ বিদেশ থাকে। মাঝে মাঝে আমিও যাই। তারাও দেশে আসে। প্রতিদিন রুটিন করে দুইবেলা খোঁজ খবর নেয়। ভিডিওকলে মেয়ে - জামাই, নাতি নাতনিদের দেখি। ভালো লাগে। দুই ছেলে একইসাথে থাকে। বড় ছেলে বিয়ে করেছে। তার আবার যমজ দুই ছেলে হয়েছে। ভারী দুষ্ট। তাদের নিয়ে আমার বেশ সময় কেটে যায়। দুই বছর হলো যমজ নাতিদের। এরা আমার ন্যাওটা। বড় ছেলে আর বউ দুইজনই ডাক্তার। 

ভিডিওটি দেখুন : হঠাৎ কানে কম শুনছেন?

একই মেডিকেলে পড়তে গিয়ে ওদের আলাপ হয়। তারপর প্রেম। ছেলে যখন প্রথম প্রেমে পড়ে তখন আমি ঠিক বুঝতে পেরেছিলাম। প্রথম প্রেমে পড়ে আমার ছেলের হাবভাব একদম তার বাবার মতো হয়ে গিয়েছিলো। তার বাবা যখন আমার প্রেমে পড়ে তখন উনার যে রকম চেহারা এবং আচার - আচরণে পরিবর্তন এসেছিলো, ছেলের ক্ষেত্রেও তাই।

একা একাই আকাশের দিকে তাকিয়ে হাসে, ফোনের দিকে তাকিয়ে হাসে, একটু সুযোগ পেলেই ফোনে কথা বলে, হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে মাথা চুলকায়, রাত জাগে, রোমান্টিক গান শুনে, বাথরুমে ঢুকে সেই গান আমার নিজের কর্কশ গলায় গাওয়ার চেষ্টা করে। কয়েকদিন আমি ছেলের মতিগতি শুধু লক্ষ্য করি, তারপর একদিন রাতে সে ফোনে কথা বলার সময় হাতেনাতে ধরি।

ভিডিওটি দেখুন :  বাচ্চার আঘাত করা বা মারামারি করা স্বভাব...

ছেলে আমার বেশ ভয় পেয়ে যায়, কিছুক্ষণ পর সেই ভয় কেটেও যায়। তার বাবা - মা যেখানে প্রেম করে বিয়ে করেছে, সেখানে তার প্রেমে আর কী দোষ! ছেলেকে প্রেমের অনুমতি দিলাম তবে শর্তসাপেক্ষে। পড়াশোনা ঠিকমতো চালিয়ে যেতে হবে এবং প্রেমিকাকেই ঘরের বউ বানাতে হবে।  

ছেলে এবং ছেলের বউ শর্ত মেনে প্রেম করেছে। ছেলে তার প্রেমিকাকে বউ করে ঘরে এনেছে। আমাদের সকলকে নিয়ে সুখের সংসার করছে। ছোট ছেলেটা এমবিএ করছে। এটা বাপের সহজ - সরল রূপটা পায়নি। পেয়েছে বাপের পন্ডিতি রূপ। তার চাল - চলন দেখে কিছুই বুঝতে পারি না। বাহির থেকে এসে আমাকে কতক্ষণ জড়িয়ে ধরে রাখবে। তারপর বলবে, ' ও মা! অনেকক্ষণ তোমার শরীরের ঘ্রাণ পাইনি। একটু মাথায় হাত বুলিয়ে দাও না। ' 

তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেওয়ার জন্য কতশত বাহানা যে করে! সেই ছোট্ট বেলার অভ্যাস এখনো রয়েছে। তার বাপও অফিস থেকে ফিরে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলতো, ' সারাদিন তোমার শরীরের ঘ্রাণ পাইনি। দাও তো একটু চুলগুলো টেনে। ' একসময় তাদের বাপের চুল টেনে দিতাম। এখন ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দেই। চাচ্চুকে দেখে দেখে এখন পিচ্চি দুইটাও আমার কাছে এসে তাদের মাথা দেখিয়ে দেয়। 

ভিডিওটি দেখুন : বিভিন্ন বিখ্যাত মণীষীদের বাণী ও পাশাপাশি কিছু প্রাচীন প্রবাদ

সুখের সংসার আমার। দুই মেয়েকে ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দিয়েছি । তারা সুখে আছে। দুই ছেলে, ছেলের বউ আর যমজ দুই নাতিকে নিয়ে আমার সংসার। বাসায় তিন তিনটা সাহায্যকারী আছে। একজন ঘরের সব কাজ করে। একজন দুই নাতির দেখাশোনা করে। আরেকজনকে আমার দেখভাল করার জন্য রেখেছে।  

আমি ফাতেমা। সুস্থ সবল একজন বয়স্ক নারী। বয়স হলে কী হবে! আমার এখনো সংসার এবং দুই নাতিকে সামলানোর মতো সামর্থ্য আছে। কিন্তু ছেলে - মেয়েরা এবং বউমা মানতে নারাজ। তাদের কাছে আমি নাকি এখন বাচ্চা! আমারো একজন বেবি সিটারের প্রয়োজন। তাই আমার জন্য মোটা অংকের বেতন দিয়ে একজন বেবি সিটার রেখে দিয়েছে।

ভিডিওটি দেখুন :  হৃদরোগ থেকে বাঁচার উপায়

যদি সম্ভব হতো আমার ছেলেরা হয়তো খাবারটাও চিবিয়ে দিতো! তাদের হাবভাব তাই বলে। পানির গ্লাসটাও তাদের সামনে তুলতে পারি না। তারা গ্লাসটা মুখের সামনে এনে তুলে দেয়। এসব আমার ভালো লাগে না। তবে তারা আমার জন্য কিছু একটা করতে পারলে বেশ খুশি হয়। আমি এই বিষয়টা বুঝি তাই মুখে কিছু বলি না। সন্তানের আনন্দই মায়ের আনন্দ। 

মাঝে মাঝে আমার ইচ্ছে করে ছেলেদের জন্য, ছেলের বউয়ের জন্য নিজ হাতে রান্না করি। দুই নাতিকে নিয়ে একটু বের হই। বাসার সামনে সুন্দর একটা পার্ক আছে। সেখানে নাতিদের নিয়ে যাই। নিজের মতো করে একটু সময় কাটাই। সংসারের টুকিটাকি কাজে হাত দেই। যতই ছেলে - মেয়ে, বউকে বুঝাই তারা বুঝে না। তারা আমার সেবা করতে চায়, আমাকে ভালো রাখতে চায় কিন্তু কিসে আমার ভালো থাকা এবং কিভাবে আমি ভালো থাকবো সেটা বুঝতে চায় না।

ভিডিওটি দেখুন :  রক্ত দেওয়ার পর কোন খাবার খাবেন ?

অতিরিক্ত অবহেলার মতো, অতিরিক্ত কেয়ারিং একটি রোগ। যারা অবহেলা করে তারা বুঝতে চায় না যাকে অবহেলা করছে সে কী চায়। যারা অতিরিক্ত কেয়ারিং হয় তারাও বুঝতে চায় যাকে অতিরিক্ত কেয়ার করছে সে আসলে কিসে ভালো থাকে। তখন আমি কলেজে পড়ি। সবুজ মানে আমার স্বামীর সাথে তখনই আমার প্রথম দেখা এবং পরিচয়। ছোটকাকীর ভাইয়ের ছেলে ছিলো। আমি কলেজে পড়ার সময় ছোট কাকা বিয়ে করেন। যেহেতু আমরা আত্মীয় ছিলাম, আমাদের প্রায় দেখা হতো।

দেখা হতে হতে কখন জানি প্রেমটাও হয়ে যায়। কিন্তু আমাদের ভয় ছিলো আমাদের সম্পর্ক পরিণতি পাবে কিনা! কারণ, ছোট কাকী মানুষ হিসেবে ভালো ছিল না। তিনি আমাদের পরিবারে বউ হয়ে আসার পরে আমাদের পারিবারিক বন্ধনে ভাঙ্গন শুরু হয়। ছোট কাকীকে সবাই ভীষণ অপছন্দ করতে শুরু করে । সেই সূত্র ধরে সবুজকে আমার বর হিসেবে মেনে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না। 

ভিডিওটি দেখুন :  ফ্রিজে খাবার সংরক্ষণের জন্য কিছু টিপস

কলেজ পার করে ভার্সিটিতে উঠে আমি আর সবুজ পরিকল্পনা করি আমরা পালিয়ে যাবো। আমি তখন অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী আর সবুজ শেষ বর্ষের। সাত পাঁচ না ভেবে আমরা পালিয়ে যাই। সবুজের এক বন্ধুর কল্যাণে অন্য বিভাগের এক জেলা শহরে আমরা নতুন জীবন শুরু করি। সেই বন্ধুর কল্যাণেই একটা কিন্ডারগার্টেনে সবুজের চাকরি হয়। আমি আর সবুজ দুইজনই সচ্ছল পরিবারে সন্তান।

আর্থিক অভাব বা টানাটানির সাথে আমাদের কখনো পরিচয় হয়নি। নতুন শহরে নতুন জীবনে শুরুতে আমাদের পরিচয় হলো অভাবের সাথে। খুব বেশি টাকা পয়সা নিয়ে আমরা পালিয়ে যাইনি। আমি কিছু টাকা নিতে চেয়েছিলাম, সবুজ নিষেধ করেছিল। সবুজের সেই বন্ধু দুলালদাকে কখনো ভুলবো না। তিনি সে সময় আমাদের ছায়া হয়ে ছিলেন। আমাদের সুখের দুঃখের একমাত্র সাথী ছিলেন দুলালদা। 

সকল প্রয়োজনে কিভাবে কিভাবে যেন দুলালদা এসে উপস্থিত হতেন। যে আমি ডাল খেতে একদম পছন্দ করতাম না, সেই আমার সংসারে নিত্যদিন ডাল থাকতো। মাঝে মাঝে ডালের বড়া করতাম, মাঝে মাঝে ডালের চচ্চড়ি। যে আমি ডিমভাজি করতে পারতাম না, সে আমি ডাল, আলু, শাক - লতা পাতা দিয়ে বিভিন্ন এক্সপেরিমেন্ট করতে লাগলাম।

ভিডিওটি দেখুন : রান্নাঘরের কাজ গুছিয়ে করার কিছু টিপস

তবে আমার সকল এক্সপেরিমেন্ট ছাপিয়ে মুসুরির ডাল, আলু মিক্সড করে বেশি করে কাঁচা মরিচ আর ধনিয়া পাতা দিয়ে যে বড়াটা বানাতাম সেটা সবুজ খুব পছন্দ করতো। একটু বৃষ্টি হলেই তার আবদার ছিল এক কাপ গরম চা আর মুসুরির ডাল, আলু মিক্সড বড়া। আজকে সকাল থেকে একটানা বৃষ্টি পড়ছে। আমি জানালার পাশে বসে আছি। আমার জানালা থেকে দেখা যায় সামনের রাস্তার পূর্বপাশে ছোট একটি খেলার মাঠ আছে। সেই মাঠে কিছু বাচ্চা ছেলে ফুটবল খেলছে। 

আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়ছে আর মাঠ থেকে কাঁদাপানি। খুব আনন্দ নিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে, ফুটবল খেলছে, আবার কাঁদাপানিতে মাখামাখি করছে। বসে বসে তাদের আনন্দ দেখছিলাম। এই সময় বড় বউ এসে জিজ্ঞেস করলো কিছু খাবো কিনা! বৃষ্টি হলেই আমার মুসুরির ডাল,আলু মিক্সড বড়ার কথা মনে পড়ে। মনে পড়ে সবুজের কথা। আমার সবুজ এমনই এক বৃষ্টির দিনে আমাদের ছেড়ে চলে যায়। বিয়ের দেড় বছর ঘুরতে না ঘুরতে আমার প্রথম সন্তান জানান দেয় সে আসছে।  

ভিডিওটি দেখুন :  স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে সচেতন হন

নতুন শহরের সেই সংসার তখনো গুছিয়ে উঠতে পারিনি। দুই পরিবার থেকে ঘোষণা করা হলো তারা আমাদের মুখ দেখতে চায় না। সবুজের যে বেতন তা দিয়ে বাসা ভাড়া, গ্যাস ভাড়া, কারেন্ট বিল আর টেনেটুনে মাসের ১০টা দিন চলা যায়। বাকি ২০দিন কিভাবে আমাদের কাটতো সেটা শুধু আমরা জানি। বন্ধুদের থেকে ধার করতে করতে ধারও বেশ জমে যায়। ধার শোধ করবো, সংসার গুছাবো নাকি সন্তান আসার আনন্দে আত্মহারা হবো! 

প্রথম সন্তান আসার খবর শুনে আমরা আনন্দিত কম, আতংকিত বেশি হয়েছিলাম। আমি অবশ্য নষ্ট করে ফেলতে চেয়েছিলাম। সবুজ দেয়নি। যত কষ্টই হোক প্রথম সন্তানকে সে দুনিয়ার আলো দেখাবে। সে কথা রেখেছিলো। প্রথম কন্যা সন্তানকে সে দুনিয়ার আলো দেখিয়েছিল। 

ভিডিওটি দেখুন : সাদাস্রাব নিয়ে সমস্যায় আছেন ?

দুলালদা তখন সবুজকে দুইটি টিউশনির ব্যবস্থা করে দেয়। ওই দুইটি টিউশনি করতে গিয়ে সবুজের টুকটাক সুনাম আশেপাশে ছড়ায়। অল্প কয়দিনে তার আরো বেশ কিছু টিউশনির অফার আসে। যদিও টিউশনির টাকা খুব কম, তবুও তখনকার সময়ে সেগুলো আমাদের কাছে অনেক। মেয়েকে তখন সে লাকি বলে ডাকতে শুরু করে। মেয়ের জন্মের পর পরেই সে ব্যাচ করে টিউশনি করতে শুরু করে। 

একে একে তিন সন্তানের আগমন হয়। দুই বছর / দেড় বছরের গ্যাপ তাদের মধ্যে। আমাদের পরিবার তখনো আমাদের মেনে নেয়নি।  যেদিন সবুজ আমাদের ছেড়ে চলে যায়, সেদিন প্রচন্ড ঝড়বৃষ্টি হচ্চিলো। স্কুল ছুটির পর সে বাড়ি ফিরবে। তখন আমি ছয় মাসের গর্ভবতী। চতুর্থ সন্তান পেটে। ঝড়বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড বজ্রপাত হচ্ছিলো। স্কুল ছুটির পর সবাই ঝড়বৃষ্টি থামার অপেক্ষা করছিলো, কিন্তু সবুজ বাড়ি আসার জন্য বের হয়ে গেলো।

ভিডিওটি দেখুন :  গর্ভাবস্থায় কিছু কুসংস্কার

তার চিন্তা আমি পেটে একটা আর বাড়িতে তিনটা ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে একা আছি। নিশ্চয় অনেক ভয় পাচ্ছি! তাই তাকে রিস্ক নিয়ে বাড়ি ফিরতে হবে। এই যে আমি বাচ্চাদের নিয়ে একা আছি ভেবে সে ছুটে আসতে চাইলো, আসতে কি সেদিন পেরেছিলো ? পারে নাই। ফেরার পথে বজ্রপাতে  সে মারা যায়। বাচ্চাদের নিয়ে একা আছি ভেবে তার ভীষণ চিন্তা! সেই ঝড়বৃষ্টির মধ্যেই তাকে ছুটে আসতে হবে। তারপর কোথায় গেলো তার চিন্তা ? কোথায় গেলো গভীর দায়িত্ববোধ ? আমাকে সারাজীবনের জন্য একা করে স্বার্থপরের মতো চলে গেলো। 

কতদিনের সংসার ছিলো আমাদের ? কয়টা দিনই বা তাকে কাছে পেলাম ? যার জন্য ঘর ছাড়লাম, পরিবার ছাড়লাম, নিজের শহর ছাড়লাম সেই আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। সবুজ মারা যাওয়ার পর দুই পরিবারের লোকজনের রাগ পানি হয়ে যায়। তারা গিয়ে বাচ্চাসহ আমাকে আর  সবুজের লাশ নিয়ে আসে। সেই তো দুই পরিবার মেনে নিলো, কিন্তু সবুজ বেঁচে থাকতে নিলো না। যে সন্তানদের ভালো রাখার জন্য রাতদিন খাটতো সেই সন্তানরা ভালো আছে সেটা দেখে যেতে পারলো না। ভালোবেসে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে ঘর থেকে পালালো, কিন্তু একটা ভালো দিন কাটাতে পারলো না। 

ভিডিওটি দেখুন :  গর্ভাবস্থায় বমিভাব বেশি হচ্ছে ?

যে ছেলেটা চাওয়ার আগেই সবকিছু পেয়ে যেতো, সে ছেলেটা রাত দিন এক করে আমাকে ভালো রাখার জন্য খেটে মরতো। সেই ছেলেটাকে রেখে এই দুনিয়ায় এমন আরাম আয়েশ আমাকে মানায় ? নাকি আমার হজম হয় ? আমি কাউকে বলতে পারি না যেদিন সবুজ আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছি, সেদিন থেকে আমি ভালো খাবার খেয়ে হজম করতে পারি না, দামি খাটে ঘুম হয় না, দামি পোশাকে অসহ্য লাগে, বিদেশে গেলে দমবন্ধ লাগে।  কিন্তু সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি কিছু বলতে পারি না। এরা আমাকে ভালো রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। এদের এই চেষ্টাকে আমি অসম্মান করি কিভাবে ? আবার, সবুজকে ছাড়া এই ভালো থাকা আমি উদযাপনও করতে পারি না। 

আমার অনুভূতির মৃত্যু হয়েছিল সবুজের সাথে সাথেই, সন্তানদের প্রতি দায়িত্ববোধ আমার চলনশক্তি সচল রেখেছে। আমি হাতে পায়ে চলছি কিন্তু আত্মা বেঁচে নেই।  এই যে এখন খুব ইচ্ছে করছিলো বউকে বলি কয়েকটা মুসুরির ডাল,আলু মিক্সড বড়া বানিয়ে দিতে। কিন্তু বলিনি। সবুজকে ছাড়া তার কোন প্রিয় খাবার আমি খেতে পারবো না। গলা দিয়ে নামবে না। সবুজ মরেছে একবার, আর আমি মরি এভাবে বারবার। 

ভিডিওটি দেখুন :  বাচ্চাদের জন্য উপকারী আয়রন সমৃদ্ধ খাবার সম্পর্কে জানুন


 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment