প্রতিদিন সকালে লেবু পানি পানে আপনি কি কি পাবেন ?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • অক্টোবর ২৯, ২০১৭

লেবু খুবই ছোট একটা ফল ! কিন্ত এর উপকারিতা জানলে আপনার চোখ কপালে উঠে যাবে। ছোটোখাটো উপকারের কথা আমরা সবাই কম বেশি জানি কিন্ত একসাথে এতো উপকারের কথা কয়জন জানি ? প্রতিদিন সকালে লেবু পানি পান করলে আপনি একই সাথে পাবেন অভাবনীয় সব উপকার।  চলুন ঝটপট উপকারের লিষ্টটা দেখে নিই।

লেবু পানি ওজন কমাতে সাহায্য করে :

আপনি যদি ডায়েটের কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে লেবু পানিকে আপনার সেরা বন্ধু মনে করতে হবে। লেবুতে রয়েছে পলিফেনলস্‌ যা ক্ষুধা নিবারণে সাহায্য করে। খাওয়ার আগে পানি পান করলে এমনিই ক্ষুধা কমে আসে। সকালে উঠে অনেকেই কমলার জুস পান করেন, সেটা বদলে লেবু পানি করে নেন। কমলার জুসে ক্যালরি থাকে যা আপনার ওজন বাড়াতে সাহায্য করে। ১গ্লাস পরিমান নরমাল বা ঠাণ্ডা পানিতে পুরো একটি লেবুর রস মিশিয়ে নিন। ওজন কমাতে ঠাণ্ডা লেবুর পানিই বেশি কার্যকরী।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় :

টক জাতীয় ফলে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি থাকে যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লেবুতে রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যার প্রভাবে শরীরে কোনো রোগ জীবাণু সহজে বাসা বাঁধতে পারে না। যেকোনো ধরণের ইনফেকশন বা অসুস্থতা এড়াতে লেবুর কোনো বিকল্প নেই। তাছাড়া লেবুর খোসায় রয়েছে ক্যালসিয়াম, পেকটিন, ফাইবার ও বিভিন্ন খনিজ পদার্থ যা বিভিন্ন রোগের নিরাময়ে সাহায্য করে।

হজম শক্তি বাড়ায় :

লেবু পানিতে যে এসিড থাকে তা খাবার হজম করতে খুব সাহায্য করে। সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস্‌ যা পাকস্থলীতে খাবারকে ভেঙে সহজেই হজম করে দেয় । পানির সাথে কয়েক টুকরা লেবু বা কুচি করা লেবুর খোঁসা মিশিয়ে খেলেও আপনি পেকটিনের গুণ পাবেন। লেবুর খোঁসা থেকে পেকটিন নামক ফাইবার পাওয়া যায়। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে ফাইবার হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। আপনি সরাসরি লেবু না খেতে চাইলেও টুকরো করা লেবু পানিতে দিয়ে বা লেবুর খোঁসা পানিতে দিয়ে খেলেও উপকার পাবেন।

লেবু ভিটামিন সি এর উৎস :

United States Department Of Agriculture এর এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১/৪ কাপ লেবুর রস থেকে আপনি ২৩.৬ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পেয়ে থাকেন। ভিটামিন সি-তে রয়েছে কার্যকরী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আপনার শরীরের কোষগুলোকে সুরক্ষিত রাখে। National Institute Of Health এর মতে, এই ভিটামিন কার্ডিওভাস্কুলারজনিত রোগ ও ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে। লেবুর রস স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধক, যার ফলে মাড়ি থেকে রক্ত পড়ার সমস্যা সমাধান করে থাকে।

লেবু পানি আপনাকে হাইড্রেট রাখবে :

লেবুর পানি আপনাকে সরাসরি হাইড্রেট রাখবে না। লেবুর স্বাদ শরীরের জন্য এক অনন্য ভূমিকা পালন করে। শরীরে পানির পারফেক্ট ব্যালেন্স ঠিক রাখতে আপনাকে প্রচুর পানি পান করতে হবে। পানির কোনো স্বাদ নেই তাই বারবার এই স্বাদহীন জিনিসটি খেতে একদম ভালো লাগে না। লেবু পানি পানে আপনি  স্বাদ এবং হাইড্রেট এক সাথে পাবেন।

বয়স ধরে রাখে :

ভিটামিন সি বলিরেখার সম্ভাবনা অনেকটা কমিয়ে আনে। ভিটামিন সি-তে আছে কোলাজেন যা ত্বকের সুরক্ষায় কাজ করে। লেবুতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে।

লিভারের কার্যক্রম সচল রাখে :

লিভার শরীরের ফিল্টার হিসেবে কাজ করে। লেবুর সাইট্রাস ফ্লাভোনইডস্‌ লিভার থেকে বর্জ্য ফেলে দিতে এবং লিভারের ফ্যাট কমাতে সাহায্য করে। তাই লিভারকে সুস্থ রাখার জন্য লেবু পানি খুব উপকারী।

শরীরে পটাশিয়ামের মাত্রা বাড়ায় :

পটাশিয়ামের কথা মাথায় আসলেই প্রথমে কলা এবং বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি ও ফলমূলের কথা মাথায় চলে আসে। আপনি জানেন কি লেবু থেকেও যথেষ্ট পরিমাণ পটাশিয়াম পাওয়া সম্ভব ? পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে, মাংসপেশীর কর্মক্ষমতা বাড়ায় ও হার্টবিট নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার শরীরে পটাশিয়ামের চাহিদা পূরণ করা দরকার। দিনের শুরুতে ১গ্লাস লেবু পানি পান করে নিলে পটাশিয়ামের চাহিদার কিছুটা পূরণ করতে পারবেন।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে :

সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে হালকা কুসুম গরম পানিতে লেবুর রস মিশিয়ে পান করে নিন।  সকাল বেলা খালি পেটে শুধু গরম পানির সাথে লেবুর রস খেতে সমস্যা হলে এর সাথে মধু ও সামান্য লবণ মিশিয়ে নিতে পারেন । শুধু লেবুর রস গরম পানি দিয়ে পান করতে খারাপ লাগলেও  কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার এই ফর্মুলাটি অভাবনীয়ভাবে কাজ করে। সকালে উঠে লেবু পানি পান করলে করলে আপনার পেট পরিষ্কার হওয়ার ব্যাপারটা একেবারেই নিশ্চিত।

কিডনিতে পাথর হওয়া প্রতিরোধ করে :

আজকাল কিডনিতে পাথর হওয়া বিষয়ে খুব শোনা যায়। অপারেশন করে, ওষুধ খেয়ে বা লেজার চিকিৎসার মাধ্যমে এই রোগটি নিরাময় করা যায়। এই সমস্যায় যেন না পড়তে হয় সেজন্য আগে থেকেই কিছু সাবধানতা অবলম্বন করা ভালো। ডিহাইড্রেশন বা পানির স্বল্পতার কারণে কিডনিতে পাথর জমে।  লেবু পানি পান করলে আপনার শরীরে পানির অভাব হবে না এবং কিডনিতে পাথর জমারও সম্ভাবনা থাকবে না। লেবু কিডনি ও পাকস্থলীর পাথর গলাতেও সাহায্য করে।

মুখের দুর্গন্ধ দূর করে :

লেবুতে যে সাইট্রাস থাকে তা মুখের ভেতর ব্যাকটেরিয়া হওয়ার সম্ভাবনা রোধ করে। তখন আর মুখে দুর্গন্ধ হয় না। লেবুর এসিড দাঁতে অতিরিক্ত পরিমাণ পড়লে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাই মাঝে মাঝে স্ট্র দিয়ে লেবু পানি পান করতে পারেন।

বিপাকে সাহায্য করে :

লেবুর খোসা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে যা বিপাক প্রক্রিয়ায় সহায়ক। তাই ঠাণ্ডা লেবুর পানিতে কিছুটা লেবুর খোসা কুচি করে মিশিয়ে খেয়ে নিন।

গর্ভবতী মা ও শিশুর জন্য উপকারী :

গর্ভাবস্থায় একজন মায়ের শরীরের ব পুষ্টি উপাদানের চাহিদা পূরণ করেও গর্ভস্থ শিশুর চাহিদাও পূরণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ভিটামিন সি বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। লেবু পানিতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে যা গর্ভবতী মায়ের শরীরের বিভিন্ন ক্ষতিকর ভাইরাস ধ্বংস করবে এবং হাড়ের টিস্যুগুলোকেও মজবুত রাখবে। তাছাড়া গর্ভে থাকা শিশুও যেকোনো ধরনের রোগ-জীবাণু থেকে মুক্ত থাকবে।

ক্লান্তি দূর করে :

গরমের দিনে শরীর প্রচুর ঘেমে ব্লাড সুগার লেভেল কমে যায় এবং আমরা ক্লান্ত হয়ে যাই। লেবু পানিতে চিনি মিশিয়ে পান করলে ব্লাড সুগার লেভেল বেড়ে যায় এবং ক্লান্তিও দূর হয়ে যায়।

ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য ‘সুপার ফুড’ :

লেবুতে যে ফাইবার থাকে তা শরীর ভাঙ্গতে পারে না তাই ব্লাড সুগার লেভেলে এর জন্য কোনো প্রভাব পড়ে না। Joslin Diabetes Center-এর পরামর্শ অনুযায়ী দিনে ২০-৩৫ গ্রাম ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া দরকার। মাঝারি আকারের একটি লেবুর রস থেকে আপনি ২.৪ গ্রাম ফাইবার পাবেন যা একজন ডায়াবেটিক রোগীর শরীরে ৭-১২% ফাইবারের চাহিদা পূরণ করে।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

 

Leave a Comment