চুইঝাল-মাংসের জন্য বিখ্যাত যে হোটেলে ভিড় থাকে নায়ক-নায়িকাদেরও

  • ওমেন্স কর্নার
  • জানুয়ারি ১১, ২০২৪

চুইঝাল মাংসের খ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। চুইঝাল, রসুন ও মসলায় পরিপূর্ণ দেশি খাসির মাংস খেতে সব সময়ই ক্রেতার উপচে পড়া ভিড় থাকে এখানে। ঝোলে মাখা ভাতের প্রথম গ্রাস যখন আপনার জিব স্পর্শ করবে, চুইয়ের নরম ঝাল তখন আচ্ছন্ন করে রাখবে স্বাদগ্রন্থি। কয়েক সেকেন্ডের জন্য চোখ বন্ধ হয়ে যাবে অমৃতের পরশে। এমনি তুলনাহীন খুলনার আব্বাসের চুই ঝালের খাসির মাংস।

খুলনা ভ্রমণে এলে চুইঝাল মাংসের স্বাদ একবারের জন্য হলেও নেন ভোজনরসিকরা। স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয় খুলনার চুইঝাল মাংস। এ খ্যাতির কারণে খুলনার বিভিন্ন প্রান্তেই গড়ে উঠেছে চুইঝাল মাংসের হোটেল। এখানে কেবল একটি আইটেমই পাওয়া যায়। 

চুকনগরের আব্বাস হোটেলের রান্নাঘরের আগের কক্ষে আটি বেঁধে রাখা চুইঝাল, বস্তাভর্তি রসুন, পেঁয়াজ আর শুকনা মরিচ। সেখানকার কর্মীরা চুইঝাল, রসুন আর পেঁয়াজ কাটেন। প্রস্তুত করেন মসলা। এরপর রান্নাঘরে বড় কড়াইয়ে মাটির চুলায় কাঠ পুড়িয়ে রান্না চলে খাসির মাংস। মাঝে-মধ্যেই বড় লম্বা হাতায় নেড়ে দেওয়া হয়। বিভিন্ন পাত্রে বেটে রাখা মসলা আর আস্ত রসুন রাখা হয়। চুইঝাল কেটে ধুয়ে পানি ঝরানো হয়। খাসির মাংসের সঙ্গে মসলা, চুইঝাল, রসুনের মিশ্রণে ছড়িয়ে পড়ে সুঘ্রাণ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রান্নাঘরের চুলা জ্বলতেই থাকে।

জানা গেছে, ষাটের দশকে আব্বাস হোসেন নামের এক ব্যক্তি চুকনগর-সাতক্ষীরা মহাসড়কের পাশে গড়ে তোলেন একটি হোটেল। চুইঝাল ও খাসির চমৎকার মেলবন্ধনের রান্না প্রথম শুরু করেন তিনি। সেই থেকে তাদের তিন প্রজন্ম এই চুইঝালের মাংস রান্না করে আসছেন। বর্তমানে খুলনার চুকনগর, সোনাডাঙ্গা ও জিরো পয়েন্টে আব্বাস হোটেলের তিনটি শাখা রয়েছে। শুধুমাত্র চুকনগর আব্বাসের হোটেলে দৈনিক ২০ কেজি চুইঝাল আর ৪০-৫০ কেজি খাসির মাংস রান্না হয়।

আব্বাস হোটেলের ম্যানেজার আব্দুল ওহাব বলেন, ‘এখানে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ আসে। বিদেশ থেকে অনেকেই আসেন। আমাদের রান্না মাংস অনেকে সঙ্গে করে বিদেশেও নিয়ে গেছেন।’

চুকনগর আব্বাস হোটেলের মালিক আব্দুল হালিমের ছেলে আলী আকবার বলেন, ‘এ হোটেলে একটাই আইটেম। তা হলো খাসির মাংস। আর এই খাসির মাংসের বিশেষত্ব হলো চুইঝাল ও রসুন। চুইঝাল দিয়ে আমরা খাসির মাংসটাকে ভুনা করে রান্না করি এবং খাবারটা খুবই সুস্বাদু হয়।বিভিন্ন হাটে গিয়ে খাসি কিনে এনে প্রতিদিন সকালে প্রক্রিয়াজাত করা হয়। বাইরের কোনো বাবুর্চি নেই। নিজেরাই রান্না করি। সেজন্য খাবারের মান এখনো ধরে রাখতে পেরেছি।’

তিনি জানান, তার দাদুর নামেই এই হোটেল। তিনিই হোটেল শুরু করেছিলেন। ৩৩ বছর আগে তিনি মারা গেছেন। তারপর বাবা-চাচারা দেখাশোনা করেছেন, এখন আমরা পরিচালনা করছি।

তিনি বলেন, ‘চুকনগর বাজারে কোনও হোটেল ছিল না। দাদা এখানে হোটেল ব্যবসা শুরু করেছিলেন। দাদুকে রান্না শিখিয়েছিলেন তার আম্মা। অনেকে বলে, তিনি মাদ্রাজ থেকে শিখে এসেছেন, এটা সত্য নয়। রান্নার কলাকৌশল দাদুর আম্মা তাকে শিখিয়েছেন, তার সঙ্গে দাদু চুইঝালের মিশ্রণ ঘটিয়ে স্বাদে পরিবর্তন এনেছেন।’

ক্রেতাদের কাছ থেকে প্রতি পিস মাংস ১৭০ টাকা এবং এক প্লেট ভাত ২০ টাকা নেওয়া হয়। সঙ্গে বিনামূল্যে পরিবেশন করা হয় ডাল। সব মিলে ১৯০-২০০ টাকায় একজন ভালোভাবে খেতে পারে।

আলী আকবর জানালেন, অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া, চিত্রনায়ক সিয়াম আহেমদ এ হোটেলে এসে খেয়ে গেছেন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এসেছেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, সংগীতশিল্পী এন্ড্রু কিশোরসহ ক্রিকেটার, রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রীরাও।

Leave a Comment