মাটির নিচে অবাক করা শহর

  • রেজবুল ইসলাম 
  • মার্চ ২২, ২০১৮

আমরা জানি আদিম যুগের মানুষ বসবাস করত গুহায়। সভ্যতার বিকাশের সাথে সাথে আজ আমরা এই সুন্দর পৃথিবী পেঁয়েছি। এখন আমরা গুহার ভেতর কিংবা মাটির নিচে বসবাসের কথা ভাবতেও পারি না। অথচ খুব বেশি দূরে নয়, অস্ট্রেলিয়াতেই রয়েছে এমন একটি শহর যেখানে গোটা শহরটি গড়ে উঠেছে মাটির নিচে। প্রায় সাড়ে ৩ হাজার মানুষের বসবাস শহরটিতে। শহরটির নাম হচ্ছে কুবার প্যাডি। কুবার প্যাডি অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড থেকে ৮৪৬ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমিতে অবস্থিত ছোট একটি শহর। এই শহরটি পৃথিবীর একমাত্র মাটির নিচের শহর যা এখনও মানুষের বসবাসের উপযোগী রয়েছে। কুবার প্যাডি পৃথিবীর ওপাল রাজধানী নামেও খ্যাত। এখানে পাওয়া যায় ওপাল নামক বহুমূল্য রত্নের খনি। বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ওপালই পাওয়া যায় কুবার প্যাডি এলাকা থেক

একটি-দুটি করে একসময় মাটির নিচে পুরো একটি শহর গড়ে তুলেছে সৃষ্টির এই সেরা জীবেরা। হ্যাঁ পাঠক, আজ আপনাদের বলব এমনই এক বিচিত্র শহরের গল্প। যে শহরকে পাওয়া গেছে অস্ট্রেলিয়ার পশ্চিমাঞ্চলের মরুভূমির নিচে। শহরটির নাম ‘কুবার প্যাডি’।১৯১১ সালের আগে এই জায়গার বাসিন্দা বলতে ছিল মরুভূমির সাপ, বিষধর পোকামাকড়, টিকটিকি আর এমু পাখি। জায়গাটির বিশেষত্ব প্রথম আবিষ্কার করে উইল হাচিসন নামের চৌদ্দ বছরের এক কিশোর। ১৯১৬ সালের দিকে ‘ওপাল’ নামে এক ধরনের খনিজ পদার্থের খোঁজে এই স্থানটিতে জড়ো হতে থাকেন খনি শ্রমিকেরা। ওপাল হচ্ছে পানির মতো একধরনের পদার্থ, যা মাটির সঙ্গে মিশে থাকে। পৃথিবীর ৮০ ভাগ ওপালের জোগান আসে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার এই কুবার প্যাডি থেকে।

যেভাবে গড়ে উঠলো এই শহর : কুবার প্যাডিতে ওপাল সংগ্রহের জন্য প্রতিদিন অনেক শ্রমিক আসতেন। লোকালয় থেকে স্থানটি অনেক দূরে অবস্থিত হওয়ায় প্রতিদিন এসে কাজ করা এবং ফিরে যাওয়া সম্ভব ছিল না। এদিকে দিনের বেলায় এখানে ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেরও বেশি তাপমাত্রা থাকত। আবার রাতের বেলা সম্পূর্ণ বিপরীত- একেবারে শূন্যের কোঠায় নেমে যেত তাপমাত্রা। তার ওপর রয়েছে ধূলিঝড়। সব মিলিয়ে কঠিন এক অবস্থা। তার পরও কাজ করতে হবে। এই ভেবে শ্রমিকরা মরুভূমির মাটির নিচে ঘর বানানো শুরু করে। একজনের দেখাদেখি আরেকজন। এভাবে একে একে ঘর বানাতে বানাতে একসময় মাটির নিচে গড়ে ওঠে পুরো একটি শহর। 

প্রথম দিকে বিদ্যুৎ, পানি ও অন্যান্য নাগরিক সুবিধা না থাকলেও সময়ের ব্যবধানে সেগুলোর ব্যবস্থা হয়ে যায়। এরপর ধীরে ধীরে উন্নত শহরের প্রায় সবকিছুই এখানে গড়ে উঠতে থাকে। প্রথমে বাজার, তারপর মার্কেট, গির্জা, বিনোদনকেন্দ্র, ব্যাংকসহ দৈনন্দিন জীবনে প্রয়োজনীয় প্রায় সবকিছুই মাটির নিচের এই শহরে স্থাপন করা হয়। এই শহরের সবচেয়ে অদ্ভুত বিষয় হলো এখানে কোনো ঘাস নেই, নেই কোনো গাছ। সবুজ বলতে এখানে কিছু নেই। আছে কেবল তৈলাক্ত বালি।তবে সেদিনের সেই ‘কুবার প্যাডি’ এখন শুধু খনি শ্রমিকদের শহর নয়। বর্তমানে এটি পর্যটন স্থান হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। প্রতিবছর অসংখ্য পর্যটক এই স্থানটি দেখতে আসেন। এ ছাড়া আরো নাগরিক সুবিধা যুক্ত হয়েছে এখানে।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment