গার্লস গ্রুপ গুলো ভারতীয় সিরিয়ালের চেয়েও ভয়াবহ

  • তানজিলা আক্তার
  • মার্চ ২৪, ২০১৮

গার্লস গ্রুপ! নাম শুনেই বুঝতে পারছেন এসব গ্রুপে শুধুই মেয়েরা থাকে (তবে কিছু ছেলেও ফেক আইডি ব্যবহার করে সেখানে যোগদান করে)। সেখানে মেয়েরা নিজেদের সুখদুঃখের কথা বলে, আড্ডা চলে, রূপচর্চা, রান্নাবান্না নিয়েও পোস্ট হয় এবং এটাই স্বাভাবিক। দু'তিন বছর আগেও এমন ছিলো, একটা গার্লস গ্রুপ মানে মেয়েদের নির্ভরতার একটা জায়গা, ঐজায়গায় সে নিজের কথাবার্তা বলতো, সুখ-দুঃখ জানাতো, গল্প করতো, আড্ডা দিতো। মেয়েরা বিভিন্ন কাজ করে তার বিবরণ দিতো, যেমন কোনো মেয়ে ক্রাফটের কিছু কাজ করেছে, সেটার ছবি পোস্ট করে তার টিউটোরিয়াল দিতো, এখনো অনেকেই দেয়। নকশী কাথার ছবি/টিউটোরিয়াল, বিভিন্ন বিউটি টিপস, কোনো ভালো কাজ, এগুলো শেয়ার করতো, এখনোও অনেকেই করে, তবে খুব কম। কেনো এমন হচ্ছে তা কি জানেন? এই লেখায় উত্তর পেয়ে যাবেন।

গত দুই বছরে লতাপাতার মতো অনেক গার্লস গ্রুপ হয়েছে, কিন্তু আফসোস সেই মান আর নেই, ধরতে গেলে একদমই নেই। আগে যারা ভালো পোস্ট করতো তারা অনেকেই হাত গুটিয়ে নিয়েছে। আমরা বাঙালীরা সারাদিন ভারতীয় সিরিয়াল নিয়ে অনেক সমালোচনা করি, কিন্তু আমাদের ঘরে কি হচ্ছে তাও জানুন। গার্লস গ্রুপে কিছু মেয়ে নিজের প্রাইভেসী একদমই রাখে না, পারলে তার বেডরুমের অন্তরঙ্গ ছবিও দিয়ে দেয়। বছরখানেক আগে এক গ্রুপে এক আপু হাঁটু পর্যন্ত কাপড় সরানো এমন একটি ছবি দিয়ে একটি হেল্প চাইছিলো। আমি আর আমার এক বান্ধবী দুই জনই যেয়ে কমেন্ট করলাম, "আপু এমন ছবি দিয়েন না, ছবিটা অন্য গ্রুপে চলে যাবে।" তারপর আর কি, একজন এডমিন এসে শাসিয়ে গেলো আমাদের, যে গ্রুপে ফেক অ্যাকাউন্ট নেই, কে এই ছবি বাইরে দিবে, কেউ দিবে না। বেশি না এক ঘন্টা পরই ঐ ছবিটা চলে গেলো আরেকটি গ্রুপে, সেখানে এটা নিয়ে খুব হাসাহাসি হলো। ঐ আপু এসে গ্রুপে পোস্ট দিয়ে জানতে চাইলো কি করে তার পোস্ট অন্য গ্রুপে গেলো এবং ঐ এডমিন এসে বললো সারাদিন গ্রুপ নিয়েই থাকবো নাকি, কে দিয়েছে কি করে বলবো। আমি এডমিনের সাথে সহমত, এডমিনরা সারাদিন গ্রুপ নিয়ে থাকবে না, তাদের জীবন আছে, তাদেরও কাজ আছে, কিন্তু তাদের কি উচিত না এসব পোস্ট দিতে মেম্বারদের না করা? কিছু গ্রুপে এই রুলস আছে, কিন্তু অনেক গ্রুপে নেই।

হাতে গোনা কয়েকটি গ্রুপ বাদে বাকিসব গুলোতে চলে বডি শেমিং। বিভিন্ন সেলেব্রিটিদের বিয়েতে বউ ভালো না, জামাই ভালো না, সংসার ভালো না, ঐ মেয়েটাকে ঐ রঙের জামায় মানায় না, ওর মাথা বড়, ওর চুল ঘোড়ার লেজের মত। আরো চলে পরকীয়ার মতো বিষয় নিয়েও রমরমা গালগল্প। কিছু আপু সেখানে ভালো উপদেশ দিলে তারা তাদের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। একজন আরেকজনকে হেয় করে মন্তব্য ছোড়াছুড়িতো নিত্যদিনের ব্যাপার। কার বর কি দিলো, কই থেকে দিলো, কেনো বয়ফ্রেন্ড গিফট দিলো না, টাইম দিচ্ছে না, এর বিয়েতে এত টাকা খরচ করেছে, ওর এত দামী গহনা আছে, এসব নিয়ে পোস্ট করার সাথে সাথে বেশিরভাগ মেয়ে এসে এমন এমন কথা বলবে স্বাভাবিকভাবে সন্দেহ চলে আসে। এসব নিয়ে দাম্পত্য জীবনেও চলে ঝগড়া। 

হাসাহাসি চলে কারো ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে, একদল আরেকদলকে ছোট করতে নিজের সবচেয়ে নিকৃষ্ট রূপ দেখাতেও থামেনা। অনেকেই হয়তো বলবে ফেক আইডির কাজ। জ্বী, আমিও স্বীকার করি ফেক আইডি দিয়ে অনেকেই মজা নেয় কিন্তু এখন রিয়েল আইডির নারীরাও এসব করে। *অনেক মেয়ে হাতে গোনা কয়েকটি গ্রুপ বাদে বাকিগুলো থেকে বের হয়ে যায়। আগের সেই গার্লস গ্রুপ থাকলে আমাদের মেয়েরা আরো উন্নত হতো, নিজেদের উন্নত করতে পারতো, কিন্তু এখন তা না করে তারা একে অপরকে হেয় করতে উঠেপড়ে লেগে যায়। অচিরেই গ্রুপ এডমিনদের উচিত এসব পোস্ট নিষিদ্ধ করা। দাম্পত্য জীবনের বিশেষ কথা যেখানে সেখানে শেয়ার না করা, বিভিন্ন সামাজিক ও ভালো কাজগুলোর কথা সকলকে জানানো, হাতের কাজ, ক্রাফট এসব নিয়ে পোস্ট ও টিউটোরিয়াল ভিডিও দেয়া। এসব গ্রুপে কিশোরী থেকে শুরু করে সকল বয়সের নারীরাই থাকে, তাই এখনই সময় সাবধান হওয়ার। লেখার ভুলত্রুটির জন্যে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি।

 

Leave a Comment