ধনী মানুষ ধনীদের জন্য, গরিব অবহেলার জন্য!
- ইয়াসিন প্রধান সাজিদ
- মার্চ ২৪, ২০১৮
অনেক আগেই একটা গান শুনেছিলাম, "মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য"। গানটা গেয়েছিলেন "ভুপেন হাজারিকা", তার গান-টা ১০০% সত্যি। তবে এই সত্যিটা সেই যুগের সাথেই মরে গেছে। সেই সময়, সেই সময়ের মানুষ, আর সেই গানটাও আজ মিথ্যে হয়ে গেছে। আমাদের এই বর্তমানের সময়ের অনুযায়ী গানটা হবে,"ধনী মানুষ ধনীদের জন্য, গরিব অবহেলার জন্য,"। আজকাল মানুষেরও প্রকারভেদ হয়ে গেছে। ধনীরা ধনীদের সাথে চলে, আর গরিবেরা তার নিজস্ব নিয়মে চলে। তাদের নিয়মের মধ্যে কোনো গরিব থাকেনা। কথা বলার নিয়ম ধনীদের সাথে একরকম, আর গরিবের সাথে অন্যরকম । সবরকম চলাফেরা ধনীদের সাথে, গরিবের সাথে তো কথা বলতেও লজ্জা লাগে! রাস্তাঘাটে বা চলার পথে ধনীদের আর গরিবের খাবার, বিরতি ও সাহায্যর মাধ্যম অন্যরকম। সকল জায়গায় আজকাল সুবিধা শুধুমাত্র ধনীদের জন্যে বরাদ্দ। গরিবের সুবিধা তো দূরের কথা, প্রাপ্য জিনিসটাও তারা ঠিক মতো পায়না।
এবার কিছু বাস্তব চিত্র দেখাচ্ছি। দিন শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ধনী আর গরিবের চলাফেরার ধরণ। রাস্তাঘাটে চলার সময় গরিব মানুষ যুবক বা বৃদ্ধ হোক সালাম পায় ৪০-৫০%, তবে ধনীদের সালাম দেওয়া কেমন যেন আজ সমাজের একটা নিয়ম হয়ে গেছে। হোক সেই ধনী বৃদ্ধ অথবা যুবক। আমরা যদি ভালোভাবে খুঁটিয়ে দেখি, তাহলে দেখা যাবে সমাজের অধিকাংশ ধনী লোক অবৈধভাবে টাকা আয় করছে। "পাপ কাজে লিপ্ত মানুষকে সালাম দেওয়া ঠিক না।"(ফাতওয়ায়ে শামী) এই নিয়ম ভুলে মানুষ আজ নিয়ম তৈরী করেছে, ধনী হলেই সালাম দিয়ে যাচ্ছে।
যা সাধারণত ইসলামের বিরোধ করে। তারপর, ধনী মানুষ একটা দোকানে গেলে কিছু মানুষ উতলা হয়ে পরে সেই ধনীর তদারকি করতে। নিজ থেকেই এটা সেটা কিনে হাতে ধরিয়ে দেয়, তাও আবার নিজের টাকা দিয়ে। ঔ ব্যক্তি থেকে এক পয়সাও নেয়না। অথচ একটা গরিব ভিক্ষুক নিজে কাছে এসে একটা টাকা খুজলে সামর্থ্য হয়না দেওয়ার মতো। উল্টো ঝাড়ি ঝুড়ি দিয়ে, গালাগালি করা শুরু করে। আরে ভাই ঔ ধনী লোকটাকে ২০ টাকা দিয়ে যতটুকু খুশি করেছ, তার থেকে ২০ গুন খুশি হতো যদি সে ২ টাকা পেত। ধনীর হয়তো ঔ টাকা টার দরকার ছিলনা। কিন্তু গরিবের কিছু টাকা হলেই একবেলার খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। ধনীকে খুশি করে তার মুখের ক্ষনস্থায়ী হাসিটি না অর্জন করে,, অল্প কিছু টাকা দান করে গরিবের মুখের একটা দীর্ঘস্থায়ী হাসি অর্জন করেই দেখ। সেই হাসিটি কতো মধুর হয়। তবে মানুষ সর্বদা এই গরিবদের-ই এড়িয়ে যাচ্ছে। একটি সভা বা মিটিং এ গ্রামের সকল মানুষের যখন ডাকা হয়। তখনও দেখা যায় কিছু মানুষ ঐ পিছনে দাড়িয়ে থাকে। আর হঠাৎ একজন নামি দামী মানুষ আসলে সবাই সরে গিয়ে তাকে জায়গা দিয়ে দেয় সামনে আসার জন্য।
সামনে আসার পর চেয়ারে বসে থাকা মানুষের মধ্যে, যে সবার থেকে একটু নিচুমানের থাকবে। তাকেই উঠে জায়গা দিতে হবে সেই হঠাৎ আসা ধনীবানকে। তবে বসে থাকা মানুষগুলো নিজের স্থান ছেড়ে দেয়না। যদি, কোনো ধনীবান উঠে জায়গা দেয়ও, তাহলে তাকে আবার বসানোর জন্য সবাই অস্থির হয়ে উঠে। মানে সকল ধনীবান বসা থাকতে হবেই। ঐ দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের সাথে তারা দাঁড়াতে নারাজ। কয়েকদিন আগে আমি বাস-এ করে আমার কলেজে যাচ্ছিলাম। দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের মধ্যে আমি ৩জন বৃদ্ধ, আর ছোট্ট একটি বাচ্চার সাথে একজন মহিলা দেখতে পেলাম। আমি নিজের আসন ছেড়ে ২জন বৃদ্ধকে বসতে দিলাম। বাম পাশের লোকটিকে উঠে মহিলাটিকে বসতে দিতে বললাম আমি। সে বলল "আমি দাউদকান্দি যাব, এতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে পারবনা।" আবার আমি বললাম ভাই দেখেন উনি মহিলা, সে বললো আমি উঠে এই মহিলাকে জায়গা দিতে পারবনা। ভাই সরেন তো। একটু পরেই সে তার বন্ধুকে দেখে আসন টি শেয়ার করলো ঠিকই। এই যদি হয় মানবতা! তাহলে কি করে সে গানটি সত্যি রইলো। যে, মানুষ মানুষের জন্য!
এই হলো মানুষের মনোভাব আর ধনী গরিব বৈষম্য। যখন একই দোকানে একজন ধনী আরেকজন গরিব যায় তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনাকাটার জন্য। দোকানদার আগে কাকে পন্য দিবে বলে মনে করছেন? ধনীকেই দিবে। পরে গিয়ে গরিবের কি দরকার দেখবে। ধনীর সাথে সে হাসিমুখে, নরম সুরে কথা বলবে। আর গরিবের সাথে পুরো বিপরীত হবে সেই একই দোকানদারের কথা বলার ভাব। টাকা দেওয়ার বেলায় যদি ধনী লোকটি বলে "ভাই কিছু টাকা পরে দেই" । দোকানদারের উত্তর হবে "অবশ্যই, যখন খুশি তখন দিয়েন ভাই।" একই আবদার যখন ঐ গরিব লোকটা করে। দোকানদার বলে," না না, এক টাকাও কম না পুরো টাকা এখনই দিতে হবে। "মানে আরও কত কিছু শুনিয়ে দিবে। আসলে দোকানদার ভাবে, গরিব লোক টাকা কবে না কবে দেয়। নাকি না-ই দেবে, এরকম। গরিব লোকেরা কখনই বিপদে না পরলে বাকি চায়না, কেননা তারা নিজেরাও দায় নিতে ভয় পায়।
আসলে সমাজে কিছু ভন্ড লোক আছে যারা কাজ করে খেতে পারলেও নিজে গরিব সেজে মানুষের কাছে হাত পেতে টাকা নিয়ে আরাম আয়েশ করে খাচ্ছে। তাদেরকে অনেকেই ঘৃণা করে। এই লোকদের মানুষ সাহায্য করতে চায়না। আর এ কারণে যারা আসলেই গরিব তারাও সাহায্য পায়না। ঐ মিথ্যে রুপের মানুষগুলোর সংখ্যা বেড়ে যাওয়াতেই আজ আসল গরিবেরা না খেয়ে মরছে। এরকম আরও কত কত ঘটনা আমাদের নিজের চোখের সামনেই ঘটছে। একটু ভালোভাবে নজর দিয়ে দেখলেই সব দেখতে পাওয়া যায়। সবার কাছে আমার অনুরোধ, টাকা পয়সা এখানে ওখানে অকারনে খরচ না করে, তার অল্প অংশ গরিবদের দিয়ে আকাশ সমান সাহায্য করুন। ধন্যবাদ