দেশ উন্নয়নের পথে যাচ্ছে! পদে পদে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছে

  • ফারজানা আক্তার 
  • মার্চ ২৯, ২০১৮

স্বাধীনতার মাত্র ৪৮ বছরের মধ্যেই নিন্ম মধ্যবিত্ত থেকে মধ্যবিত্ত দেশের তালিকায় উঠে এসেছে বাংলাদেশ। খুব কম দেশই এতো অল্প সময়ে অর্থনৈতিকভাবে এতটা এগিয়েছে। উন্নতির দিক থেকে বাংলাদেশ সেই অল্প কয়টি দেশের একটি হতে পেরেছে। এই জন্য আমরা আনন্দিত , আমরা গর্বিত। এই জন্য আমরা আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে কৃতজ্ঞ। আমরা সবাই মিলে আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটা ধন্যবাদ দিতেই পারি! এনালগ বাংলাদেশ ডিজিটাল হলো, দেশ স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করলো, নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু হচ্ছে ইত্যাদি আরো নানা উন্নয়ন হয়েই যাচ্ছে দেশে। এই দেশে আনন্দে মেতে উঠার হাজারটা কারণ রয়েছে কিন্তু কোথাও যেনো মেতে উঠার সুরটা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!

এইতো কয়েকদিন আগেই স্বাধীনতা দিবস গেলো। সেদিন ছিলো বাংলাদেশের ৪৮তম জন্মদিন। সবাই হইচই করে নিজের দেশের জন্মদিন পালন করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি হলো! স্বাধীনতা দিবসে সবাই দেখতে পেলো শুকনা হাওরের সবুজ ঘাসে, ধানখেতের পাশে রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত ১৬ বছরের এক মেয়ের লাশ। মেয়েটিকে এখনি এমনি ঘাতক মারে নি! ঘাতক মেয়েটিকে প্রথমে একবার ধর্ষণ করে, মেয়েটি সেই ঘাতকের নামে ধর্ষণের মামলা করে, ঘাতক তখন মেয়েটির পরিবারকে হুমকি দেয় মামলা তুলে নেওয়ার জন্য, মেয়েটি মামলা তুলে নেয় নি, মামলা তুলে না নিয়ে মেয়েটি পালিয়ে নানার বাড়ি চলে আসে! তারপর???? নানা বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে মেয়েটিকে আবার ধর্ষণ করে তারপর একেবারে দুনিয়া থেকে বিদায় করে দেওয়া হয়। মেয়েটি যে দ্বিতীয়বার আবার মামলা করবে সে সুযোগ তাকে দেওয়া হয় নি! মেয়েটি যে বাঁচার জন্য আবার অন্য কোথাও পালিয়ে যাবে সে সুযোগও ঘাতক দেয় নি। ঘাতক ১৬বছরের প্রাণবন্ত এক মেয়েকে লাশ বানিয়ে দিয়েছে।

আমাদের দেশের যখন উন্নয়ন হয় আমরা তখন সমাবেশ করি, আনন্দ মিছিল করি। দেশ - বিদেশের সকল জায়গায় আমাদের দেশের উন্নয়ন প্রচার করি। আমাদের দেশে যখন কোনো অন্যায় হয় আমরা কি সেটার প্রতিবাদ করি ? রাস্তায় নেমে হাতে হাত রেখে সেই অন্যায়কারীর, সেই হত্যাকারীর, সেই ধর্ষকের বিচার চাই ? দেশের উন্নয়নের ভাগীদার আমরা সবাই, আর দেশে কোনো অন্যায় অবিচার হলে সেটার ভাগীদার কে ? বিউটি নামের সেই তরুণীকেই যে প্রথম ধর্ষণ করে হত্যা করে হয়েছে, এমনটা কিন্তু নয়। বিউটির আগেই লম্বা একটা লিষ্ট তৈরী হয়ে গেছে। বিউটি শুধু সেই লিষ্টে আরেকটি নাম যুক্ত করে দিলো। তনুর আগের কারো নাম আমার মনে নেই। তনুর পরেও অনেকের নাম আমার মনে নেই। তনু, আয়েশা আক্তার, বিউটির নাম মিডিয়াতে উঠে এসেছে তাই সবাই এদের চিনে, নাম না জানা এমন আরো অনেক তনু, আয়েশা, বিউটি রয়েছে। তনু, আয়েশা , বিউটিরা কি এদেশের নাগরিক না ? তারা কি সোনার বাংলা দেশে সুবিচার পাবে না ? নাকি দেশ দেশের মতো এগিয়ে যাবে , আর তারা ধর্ষিত হয়ে বিচার না পেয়ে লাশ হয়ে যাবে ?

একটি দেশের উন্নয়ন সে দেশের নাগরিকদের জন্য খুশির খবর, আনন্দের খবর। কিন্তু যে দেশে ৩মাসের শিশুকন্যা ধর্ষিত হয়, যে দেশে ধর্ষক কালো চশমা পরে গায়ে হাওয়া লেগে ঘুরে বেড়ায়, যে দেশে ধর্ষণের বিচার চাইলে তাকে আবার ধর্ষণ করে খুন করা হয়, সে দেশের উন্নয়নে খুশি না হয়ে উল্টা শংকিত হতে হয়। কারণ সবাই সেই উন্নয়ন দেখছে, অবনতিটা কারো চোখে পড়ছে না। আইন তখন উন্নয়ন নিয়ে ব্যস্ত, অপরাধী ধরে তাকে সাজা দেওয়ার মতো সময় কারো নেই। বিভিন্ন সংগঠন, রাজনৈতিক দল তখন উন্নয়নের আনন্দ মিছিল করে, বিউটিদের বিচার চাওয়ার লোকের বড্ড অভাব। অপরাধীকে আইনের হাতে তুলে দেওয়ার লোকের বড্ড অভাব এই দেশে। একটি দেশের এতো উন্নয়ন দিয়ে কি হবে, যে দেশের নারীর পদে পদে ধর্ষিত হয়!

Leave a Comment