শিশুদের সুস্বাস্থ্যে ম্যাসাজের গুরুত্ত্ব ও উপকারিতা

  • ডা: রীপা চক্রবর্তী
  • ফেব্রুয়ারি ১১, ২০১৮

শিশুর সুস্বাস্থ্যে নানি-দাদিদের আমল থেকেই বাবুদের তেল মালিশ করা রেওয়াজ। তবে বর্তমান সাইন্সও এর উপযোগিতাকে অস্বীকার করে না। বিভিন্ন গবেষণায় ম্যাসাজ এর গুরুত্তই প্রতিস্থাপিত হয়েছে। ছোটো শিশুরা নরম কোমল ফুলের মত হয়। তাই শিশুর যত্নে সতর্কতা অবলম্বন করা সেই সাথে রুটিন মেনে চলা খুব গুরুত্ববহ। অনেক মা-ই অভিযোগ করেন শিশু ঠিকমত ঘুমায় না,খেতে চায় না,খিটমিটে হয়ে গিয়েছে.এর কারন হতে পারে:

১.শিশু কোন কারনে ক্লান্ত বোধ করছে। 

২.অতিরিক্ত ক্ষুধার্থ,পিপাসার্ত কিংবা হজমের ত্রুটিতে পেটে ব্যাথা। 

৩.শিশুর প্রতিনিয়ত বৃদ্বিকালিন শরীরে ব্যাথা অনুভূত হয়। ডাক্তারদের ভাষায় একে গ্রওইং পেইন বলে। ছোট শিশুরা বলতে পারেনা বিধায় এটা বোঝা যায় না সবসময়। 

৪.অতিরিক্ত ঠান্ডা বা গরম তাপমাত্রায় শিশুর অস্বস্তি বোধ হয়। তখন তা বোঝাতে শিশু কান্নার সাহায্য নেয়। 

এই সময়টায় ম্যাসেজ আপনার  শিশুকে আরাম দেয়ার সাথে সাথে ভালো ঘুম প্রদান,ক্ষুধাবর্ধক ও মানসিক স্থিতিশীলতা দিবে বহুলাংশে। 
বাবুদের ম্যাসাজ নিয়ে আজ তাই বিস্তারিত আলোচনা করছি। 

যা যা প্রয়োজন:

১.একটি পরিষ্কার পাত্র

২.অয়েল ক্লথ

৩.যেকোন শিশুদের উপযোগী ম্যাসাজ অয়েল: অলিভ,আমন্ড অথবা সরিষার তেল কালোজিরা ও রসুনদিয়ে ফুটিয়ে নেয়া। 

৪.শিশুর মনোযোগ আকর্ষনে রং-বেরং এর সফট টয়। 

৫.নিরিবিলি ও শান্ত পরিবেশ। 

কিভাবে করবেন: শিশু ও মা উভয়েই যখন শান্ত সাথে হাসি-খুশি থাকবেন তখন দিনের যেকোন একটি সুবিধাজনক সময়ে ম্যাসাজ শুরু করুন। শিশুকে অয়েল ক্লথে শুইয়ে দিয়ে প্রথমে তার মনোযোগ আকর্ষন করুন,দিতে পারেন সফট টয় কিংবা শিশুর প্রিয় ছড়াগান চালু করে দিন। এরপর হাতের তালুতে তেল নিয়ে আঙ্গুলের সাহায্যে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে সার্কুলার মোশোনে ম্যাসাজ করতে থাকুন। 

(১) প্রথমে শুরু করুন বুকে,এরপর আস্তে আস্তে পিঠে,হাতে,পায়ে,সবশেষে মাথা ও মুখে।  বুকে ও পিঠে ভালো করে সার্কুলার ও রাব্বিং দুইভাবেই ডোলে ডোলে তেল মালিশ করুন। এতে শিশুর ঠান্ডা-কাশির সমস্যা সেরে যাবে। 

(২) হাতে ও পায়ে তেল মালিশ করুন টেনে টেনে,এরপর হাত ও পায়ের পেশির ব্যায়াম হয় এমন যেমন: শিশুর পা নিয়ে একবার হাটু মুড়িয়ে আবার সোজা করুন,সাইক্লিং করার মতো করে পা ঘুরান ও আগের অবস্থা আনুন,হাত সোজা করুন আবার ভাঁজ করুন,এইভাবে ১থেকে শুরু করে ১০পর্যন্ত গণনা করে প্রতিটি ব্যায়াম করুন শিশুর হাতে ও পায়ে। 

(৩) মুখে আলতোকরে মালিশ করুন,কপাল ও নাকে টেনে টেনে তেল দিন,শিশুর সাইনাস এর উপকার হবে,মাথা ব্যাথা থাকলে সেরে যাবে। মাথার তালুতে সার্কুলার মোশোনটাই বেস্ট। 

(৪) সামনে ম্যাসাজ করা হলে বাবুকে সাবধানে উল্টে বুকের উপর ভর দিয়ে শোয়ান। এরপর ঠিক আগের প্রক্রিয়াগুলো অবলম্বন করে ম্যাসাজ করতে থাকুন। তবে পিঠের পেশিগুলোকে ঘাড় থেকে কোমর পর্যন্ত প্রথমে সোজা টেনে টেনে এরপর আঙুলের সাহায্য টিপে টিপে ম্যাসাজ করুন। এতে পিঠের পেশিগুলো সবল হয় ও যেকোনো ব্যাথা সেরে যায়। 

(৫) এছাড়া কানের লতি, হাত ও পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ,দুই পায়ের ফাঁকে তেল দিন,এতে শিশু আরামবোধ করবে সাথে এসব স্পর্শকাতর জায়গা পরিষ্কার থাকবে। 

(৬) নিয়মিত ম্যাসাজ আপনার শিশুর শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দ্রুত বেড়ে উঠা,ভালো ঘুম ও ক্ষুধা বর্ধনে সাহায্য করবে। 

(৭) সর্বোপরি, মা ও শিশুর আত্মিক বন্ধনের দৃড়তা প্রদান করে এই ছোট ছোট মুহুর্তগুলো, যা আসলেই অমূল্য। 

Leave a Comment