গর্ভাবস্থায় প্রয়োজনীয় টেস্টসমূহ

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • সেপ্টেম্বর ১৫, ২০১৮

নিরাপদ গর্ভাবস্থা মা ও অনাগত শিশু উভয়ের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মা ও শিশুর বৃদ্ধি, কোনো জন্মগত ত্রুটি হচ্ছে কিনা বা আছে কি না, মার থেকে শিশুর মধ্যে কোনো রোগ সংক্রমিত হচ্ছে কিনা, শিশুর থেকে মায়ের মধ্যেও কোনো রোগ যেতে পারে কি না এসব জানা জরুরি।

প্রেগনেন্সি টেস্ট বা গর্ভধারণ হওয়ার টেস্ট : মাসিক বন্ধের এক সপ্তাহ পরে কোন মহিলা গর্ভধারণ করলে প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে নির্গত হরমোন বিটা HCG-এর উপস্থিতির কারণে এ টেস্ট পজিটিভ হবে। প্রস্রাব ছাড়াও রক্তরস বা সিরাম দিয়ে এই টেস্ট করা যায়। পজিটিভ হলে বুঝতে হবে গর্ভধারণ হয়েছে।

রক্তের শর্করা বা সুগার টেস্ট : এটাও প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। OGTT টেস্ট খালি পেটে বা গ্লুকোজ খাওয়ার দু’ঘণ্টা পর সুগার টেস্ট করতে হবে। ডায়াবেটিস ধরা পড়লে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করাতে হবে। ডায়াবেটিস থাকলে পেটের বাচ্চা বড় হবে, প্রসবের সময় জটিলতা দেখা দেবে এবং পরবর্তী গর্ভধারণের সময় আবার ডায়াবেটিস হবে।

রক্তের কিছু সাধারণ টেস্ট যেমন হিমোগ্লোবিন, টিসি, ডিসি, ইএসআর, এগুলোর মাধ্যমে রক্তস্বল্পতা আছে কিনা, কোন ইনফেকশন আছে কি না এর একটা প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায় এবং এর মাধ্যমে চিকিৎসক রোগীর প্রতিকার করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। রক্তে লিপিড প্রোফাইল বা চর্বির পরিমাণ দেখা। অভুক্ত অবস্থায় যে কোনো ভাল ল্যাব থেকে এ পরীক্ষা করা যাবে। এর ফলে চর্বির কোন অস্বাভাবিকতা আছে কিনা তা নির্ণয় করা সম্ভব।

রক্তে যৌনবাহিত রোগ যেমন সিফিলিস, গণরিয়া, এইডস, হেপাটাইটিস, ম্যালেরিয়া ইত্যাদি নির্ণয় করা প্রয়োজন। এ রোগ ভয়ংকর এবং এটা বাচ্চার মধ্যেও সংক্রমিত হতে পারে। বাচ্চা নষ্ট এবং মৃত্যুও হতে পারে।

আল্ট্রাসনোগ্রাম : গর্ভাবস্থাকালীন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা। গর্ভধারণের ৭-৮ সপ্তাহের মধ্যে এ টেস্ট করে বাচ্চার অবস্থান, জীবন নিশ্চিত করা হয়। যদি কারো ডিম্ববাহী নালী বা জরায়ুর বাইরে গর্ভধারণ হয়ে থাকে তাহলে তার গর্ভাবস্থা আর অগ্রবর্তী না করাই ভাল কারণ গর্ভধারণ থাকবে না এবং এর জন্য পরবর্তীতে রক্তক্ষরণ হয়ে বাচ্চা বের হয়ে যাবে। অর্থাৎ অ্যাবরসন হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো ভাল কোনো সনোলজিস্ট দিয়ে ভাল একটি পরীক্ষা কেন্দ্রে এ পরীক্ষা করাতে হবে।

প্রস্রাব ও পায়খানা রুটিন পরীক্ষা : কোনো প্রদাহ আছে কি না, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের কারণে প্রস্রাবে বেশি প্রোটিন বা সুগার যাচ্ছে কি না এটা দেখা গর্ভবর্তী মায়ের জন্য জরুরি।
মা ও গর্ভস্থ বাচ্চার ব্লাড গ্রুপ ও আরএইচ জানা : মার থেকে রক্ত নিয়ে এবং বাচ্চার কর্ড ব্লাড নিয়ে এ টেস্ট করা যায়। যদি উভয়েই পজিটিভ হয় তাহলে সমস্যা নেই। কিন্তু মা জযউ পজিটিভ ও বাচ্চা জযউ নেগেটিভ হলে পরবর্তী গর্ভাবস্থায় বাচ্চার রক্তপাত এবং মৃত্যুও হতে পারে। এ জন্য মাকে এটা প্রতিরোধের জন্য এন্টি জযউ ইনজেকশন নিতে হবে।

জেনেটিক রোগ নির্ণয় : যে কোনো গর্ভাবস্থায় অত্যন্ত প্রয়োজনীয় টেস্ট হলো জেনেটিক বা ক্রোমোজোমাল স্টাডি। সাধারণত অনাগত শিশু সুস্থ হবে কিনা, কোন বংশগত রোগ, প্রাণসংহারী রোগ, নিরাময় অযোগ্য রোগ যা সারাজীবন বয়ে বেড়াতে হবে এগুলো নির্ণয়ের জন্য জেনেটিক স্টাডি এবং ক্রোমোজোমাল স্টাডি করানো গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণত গর্ভের শিশুর নাড়ি ফুল থেকে রক্ত নিয়ে, এমনিওটিক ফ্লুয়িড নিয়ে এ ধরনের জেনেটিক বা ক্রোমোজোমাল টেস্ট করা হয়ে থাকে। এ জন্য বিশেষায়িত রোগ নির্ণয় কেন্দ্র বা হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে এ পদার্থ বের করে আনা হয়। এ টেস্ট ব্যয়বহুল। ক্রোমোজোমাল স্টাডি করে বাচ্চার লিঙ্গ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়। জেনেটিক স্টাডি করে বিকলাঙ্গ শিশু, মাথার মধ্যে পানি জমে বড় হওয়া, অন্যান্য জন্মগত ত্রুটি যেমন- স্পাইনাবাইফিডা, মাইলোসিল, স্ফিংগোমাইলোসিল ইত্যাদি রোগ নির্ণয় করা যায়। হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফরেসিস এর মাধ্যমে প্রাণঘাতি রোগ থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় করা সম্ভব। এ রোগ নির্ণিত হলে গর্ভধারিণী তার স্বামীর ও পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে, এই বাচ্চা তিনি নেবেন কি না। এ ধরনের জেনেটিক ও ক্রোমোজোমাল টেস্ট বিশেষত যারা বেশি বয়সে মা হচ্ছেন, যাদের বংশগত রোগ আছে তাদের জন্য করানো গুরুত্বপূর্ণ।

আর/এস 


 

Leave a Comment