শিশুর পরিমিত ঘুমের জন্য অবশ্যই যা করবেন

  • তন্ময় আলমগীর
  • অক্টোবর ২৯, ২০১৮

মানসিক ও শারীরিকভাবে বেড়ে ওঠার জন্য শিশুদের দরকার পরিমিত ঘুম। তবে প্রথম তিন মাস খিদে, ডায়াপার বদলানো কিংবা শারীরিক কোনো অসুবিধার কারণে একনাগাড়ে অনেক শিশুই ঘুমায় না। কিছুক্ষণ পরপরই ঘুম ভেঙে যায়। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, তিন মাস পর থেকে শিশুদের জন্য একটা নির্দিষ্ট ঘুমের সময় ঠিক করে ফেলা ভালো। ঝামেলা ছাড়া বাচ্চাকে ঘুম পাড়ানো বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার এবং কখনো কখনো বাবা-মাই বিষয়টাকে আরও জটিল করে তোলেন। তাই নিম্নের বিষয়গুলোর প্রতি খেয়াল রাখুন -

সুনির্দিষ্ট একটা ঘুমানোর সময় নির্ধারন করুন। গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, শিশুর ক্লান্ত হওয়ার লক্ষণগুলোর দিকে নজর রাখা। শিশু শান্ত এবং ধীরস্থির হয়ে গেলে, চোখ কচলালে, হাই তুললে বা কান্না করলে বুঝতে হবে এগুলো ঘুমের ইঙ্গিত। ঘুমের এই ধরনের ইঙ্গিত পেলে শিশুদের ঘুম পাড়িয়ে দিন।বাচ্চার ঘুমের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে তাকে বিছানায় শুয়ে দিলে সে নিজে নিজে ঘুমিয়ে পরা শিখবে। বাচ্চা যখন বড় হয়ে ওঠে তখন ঘুমানোর সময়ের আগে করে তার খেলাধুলা বা অন্যান্য কাজ করতে দিন। এতে তার ঘুম ভালো হবে এবং সহজেই ঘুমিয়ে পড়বে।

বাচ্চাকে দুলিয়ে বা কোলে ঘুম পাড়ানো : শিশুকে দোলনায় দোল দিয়ে ঘুম পাড়ানোর ঐতিহ্য আমাদের দেশে বেশ পুরোনো। দুলিয়ে ঘুম পাড়ানোর কারণে শিশুর ভাল ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে। মার্ক ওয়েসব্লুথ (শিশু বিশেষজ্ঞ) বলেন, “ শিশুকে যদি দুলিয়ে ঘুম পাড়ানো হয় বা সে যদি গাড়িতে বা স্ট্রলারে ঘুমায় তবে তার গভীর ঘুম হবেনা”।  তিনি শিশুর এভাবে ঘুমানোকে তুলনা করেছেন একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্লেনে ঘুমানোর সাথে। শিশুকে শান্ত করার জন্য দোল দিন, তন্দ্রা বা ঘুমানোর জন্য নয়। শিশু পুরোপুরি ঘুমিয়ে পরা পর্যন্ত দোলনা বা কোলে নিয়ে হাঁটার প্রয়োজন নেই। বাচ্চার যখনি চোখ মুদে আসবে তাকে  বিছানায় শুইয়ে দিন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।

শিশুর রুম অন্ধকার ও নিরব রাখুন। দুর থেকে শিশুর মনোযোগ কাড়ে এমন জিনিস বিছানার আশপাশ থেকে সরিয়ে ফেলুন। অন্ধকারে বাচ্চার ঘুম ভাল হয়। ফ্যান চালিয়ে রাখুন যাতে বাসা বা রাস্তার শব্দ তার রুমে না আসে  । সব ধরনের স্ক্রীন যেমন টিভি, র্স্মাটফোন এবং টেবলেট বেডরুম থেকে সরিয়ে ফেলুন। ইলেকট্রনিক স্ক্রীনের আলো শিশুর মস্তিস্কে সংকেত পাঠায় যে এখন দিনের বেলা এবং সেটা তাকে ঘুমাতে বাধা দেয়।

আরামদায়ক ঘুমানোর নিয়ম চালু করুন। ঘুমাতে যাওয়ার আগে কিছু কিছু কাজ নিয়ম মেনে করুন, যেমন বাচ্চাকে গোসল দেয়া, কাপড় পাল্টানো, আদর করা, গল্প বলা বা ঘুম পাড়ানি গান শোনান ইত্যাদি। ঘুমের আগে পরপর কয়েক দিন কাজগুলো করলে সে-ও বুঝতে পারবে এখন ঘুমের সময় হয়েছে এবং তাকে ঘুম পাড়ানো সহজ হবে। যে কোন বয়সের বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই রুটিন প্রযোজ্য।
 
ঘুম ভাঙার পর শিশুর কাছে যাওয়ার অগে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করুন। প্রাপ্তবয়স্কদের মতন, স্বাভাবিক ভাবে শিশুদের রাতের বেলায় কয়েকবার ঘুম ভেঙ্গে যায়। যেহেতু জন্মের আগে থেকে তারা শিখে আসেনা, যে কি করে ঘুমে ফিরে যেতে হয়, সুতরাং তাদের শেখার সুযোগ দিতে হবে। যখন বাচ্চারা কেঁদে উঠে, তখণ তাকে নিজে থেকে শান্ত হওয়ার সময় দিন- উদাহরণ স্বরূপ, হাতের বৃদ্ধা আঙ্গুল বা আঙ্গুলের ঘাঁট চুষতে পারে। এবং এভাবে একদিন সে কোন কিছু ছাড়াই আবার ঘুমিয়ে পরা শিখে যাবে।

খাওয়ানোর সময় বাচ্চাকে ফিডার বোতল দিন, তবে ঘুমানোর সময় না। ঘুমানোর জন্য ধারাবাহিক রুটিনের উপর নির্ভর করুন। বাচ্চা ধীরে ধীরে এতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। সাধারণত ছয় মাস পর থেকে শিশুরা রাতের বেলায় কিছুটা সময় ধরে ঘুমায়। রাতে বুকের দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়ানোর অভ্যাস থাকলে সেটা এ সময়ে ছেড়ে দেওয়া ভালো।

কোথায় ঘুমাতে হবে তার দৃঢ় নির্দেশনা প্রস্তুত করুন।প্রতিদিন একই বিছানায় বা রুমে শোয়ানোর অভ্যাস করুন। যদি আপনি শিশুকে আলাদা বিছানায় রাখতে চান, বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন কেন তাকে তার বিছানায় সারা রাত থাকতে হবে। 

শিশুকে ঘুমানোর জন্য জোর করা উচিত নয়। শিশুর জন্য ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন, পাশে থেকে তার বুকে আলতো করে চাপড় দিতে থাকুন, সে এমনিতেই ঘুমিয়ে পড়বে। বাচ্চার প্রয়োজন বুঝে তার ঘুমানোর রুটিন ঠিক করুন এবং এ রুটিন তৈরিতে তাকে মতামত দেয়ার সুযোগ দিন। ঘুমাতে যাওয়ার আগেই তার প্রয়োজনীয় কাজগুলো সেরে নিন যাতে সে বিছানা থেকে ওঠার কোন অজু্হাত দিতে না পারে । যেমন, শুতে যাওয়ার আগেই বাচ্চাকে পানি পান করিয়ে নিন বা বিছানায় তার নমনীয় খেলনা বা কাপড়ের তৈরী পুতুল গুলো সঙ্গে দিন।

ছোটবেলায় আমরা সবাই চাঁদ মামার ঘুমপাড়ানি গান শুনেছি। তেমন ঘুমপাড়ানি গান আপনার শিশুকে রাতে ঘুমানোর আগে শুনান। ঘুমপাড়ানোর সময় তার গালে চুমু দিয়ে গুডনাইট বলুন। বুকে ও পিঠে আলতো চাপড় দিন। এই সবকিছুই তার কাছে ঘুমের সিগন্যালের মত মনে হবে এবং এতে তার মাথায় একটা রুটিন ডুকে যাবে। তখন সে ধীরে ধীরে ঘুমিয়ে পড়বে।

Leave a Comment