ফাইব্রয়েড যা জরায়ুর ভেতর বা এর চারিদিকে সৃষ্ট হয়ে থাকে

  • তাশফিয়া আমিন 
  • অক্টোবর ৩০, ২০১৮

ফাইব্রয়েড হলো ক্যান্সার নয় এমন সাধারন টিউমার যা গর্ভাশয়ের (জরায়ু) ভেতরে বা এর চারিদিকে সৃষ্ট হয়ে থাকে। মাংসপেশী ও ফাইব্রাস টিস্যু সহযোগে এই ধরণের টিউমার সৃষ্টি হয় এবং আকারে বিভিন্ন ধরণের হয়ে থাকে। কখনো কখনো এই টিউমারকে জরায়ুর মায়োমা অথবা লিও মায়োমা বলা হয়ে থাকে। ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও অনেক মহিলাই এটি বুঝতে পারেন না কেননা তারা কোনো লক্ষণ অনুভব করেন না। কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়ঃ

-মাসিক অর্থাৎ ঋতুস্রাবের সময় অতিরিক্ত রক্তস্রাব বা ব্যথা হওয়া

-তলপেটে ব্যথা

-ঘন ঘন প্রসাব হওয়া

-কোষ্ঠকাঠিন্য

-যৌনমিলনের সময় ব্যথা বা অস্বস্তিবোধ হওয়া

-বিরল কিছু ক্ষেত্রে ফাইব্রয়েড বন্ধ্যাত্ব কিংবা গর্ভাবস্থায় সমস্যা সৃষ্টির মতো গুরুতর জটিলতার কারণ হয়ে থাকে।

ফাইব্রয়েড আক্রান্ত হলে সাধারণত কোনো লক্ষণ প্রকাশিত হয় না, তাই কখনো কখনো গাইনোকোলোজিক্যাল রুটিন চেক আপের সময় বা পরীক্ষার সময় ফাইব্রয়েড ধরা পড়ে। তবে, আপনি যদি ফাইব্রয়েডের উপসর্গ অনুভব করে থাকেন, তাহলে ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন, ডাক্তার এর সম্ভাব্য কারণ নির্ণয় করতে পারবেন।

ফাইব্রয়েড কেন হয়?

ফাইব্রয়েড হওয়ার সঠিক কারণ এখনো জানা সম্ভব হয়নি। তবে এর পিছনে ইস্ট্রোজেন হরমোনের সংশ্লিষ্টতা আছে। ইস্ট্রোজেন হলো মহিলা প্রজনন হরমোন যা ডিম্বাশয় থেকে উৎপন্ন হয়। ফাইব্রয়েড সাধারণত মহিলাদের প্রজননকালীন বয়সে (১৬ থেকে ৫০ বছর) হয়ে থাকে, কারণ ঐ সময়ে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা সর্বোচ্চ মাত্রায় থাকে। ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কম থাকার সময়ে, যেমন মেনোপজ (৫০ বছর বয়সকালে মহিলাদের ঋতুস্রাব থেমে যাওয়া) শুরু হলে ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়।

কারা ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হোন?

জীবনের কোনো না কোন সময়ে ৪০% এরও অধিক মহিলা ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। ৩০-৫০ বছর বয়সী মহিলারা ফাইব্রয়েডে বেশি আক্রান্ত হয়ে থাকেন। সেই সাথে অতিরিক্ত ওজন বা মেদবহুল শরীরও ফাইব্রয়েড সৃষ্টির কারণ বলে ধারণ করা হয়, কেননা অতিরিক্ত ওজন শরীরে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সন্তান আছে এমন মহিলারা ফাইব্রয়েডে আক্রান্ত হওয়ার কম ঝুকিতে থাকেন এবং পরবর্তীতে আরো সন্তান জন্ম দেয়ার মাধ্যমে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরো কমে যায়।

ফাইব্রয়েডের ধরণ : জরায়ুর যেকোন জায়গায় বিভিন্ন আকারের ফাইব্রয়েড হতে পারে। কোনোটি মটরদানার আকারে হতে পারে, আবার কোনোটি জাম্বুরা বা তার চেয়েও বড় হতে পারে।

ফাইব্রয়েডের চিকিৎসা : যদি লক্ষণ প্রকাশিত না হয়ে থাকে তাহলে ফাইব্রয়েডের চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। এগুলো প্রায়ই সময়ের সাথে সাথে, বিশেষ করে মেনোপজের (রজঃনিবৃত্তি) সময় সঙ্কুচিত হয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। যদি আপনি ফাইব্রয়েড সৃষ্ট লক্ষণগুলো অনুভব করে থাকেন, তাহলে প্রথমে ঔষধ গ্রহণের মাধ্যমে উপসর্গ উপশমের পরামর্শ দেয়া হবে। যদি ঔষধ গ্রহণ ফলপ্রসূ না হয়ে থাকে, তবে সার্জারি বা কম কাটা-ছেড়ায় সম্ভব অন্যান্য পদ্ধতি গ্রহণের পরামর্শ দেয়া হয়ে থাকে।

Leave a Comment