শিশুর খেলনা হোক মেধা বিকাশের উপাদান

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ৬, ২০১৮

শিশুর স্বাভাবিক বিকাশে খেলাধুলার বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। তাই শিশুর জন্য সঠিক খেলনা নির্বাচন করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বয়সভেদে শিশুর খেলনা কেমন হবে, তা হলো-

যেমন হবে খেলনা : ভালো খেলনার বৈশিষ্ট্য হলো, খেলনা হবে আবিষ্কারধর্মী, নাটকীয় ও সৃজনশীল। শিশুর ক্ষেত্রে তার শারীরিক ও মানসিক বিকাশ উপযোগী খেলনা নির্বাচন করতে হবে। বয়সের সঙ্গে শিশুর খেলনাও বদলে যাবে।

খেলনা শিশুর তুলনায় হালকা ও ছোট হলে ভালো, যাতে শিশু নিজেই সেটা নাড়াচাড়া করতে পারে। ঘরে ও বাইরে দু-জায়গায়ই খেলা যায় এমন খেলনা শিশু বিকাশে বেশি সহায়ক হয়। শিশুর দলবদ্ধভাবে খেলার সুযোগ থাকতে হবে। খেলনার কোনো অংশ যেন ধারালো বা শিশুর জন্য ক্ষতিকর না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। যেকোনো বয়সী শিশুর ক্ষেত্রেই খেলা সময়ের অপচয় নয়; বরং শিশুর বিকাশ ও ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য আবশ্যক। খেলার মাধ্যমেও অনেক সময় শিশুর গঠনমূলক সৃজনশীলতা প্রকাশ পায়। নিজের অজান্তেই খেলার মাধ্যমে শিশুর প্রাথমিক ও সামাজিক শিক্ষা শুরু হয়। তাই খেলার বহুমুখী দিক মাথায় রেখে শিশুর খেলনা নির্বাচন করতে হবে।

বয়স অনুযায়ী খেলনা : বিভিন্ন বয়সে শিশুরা বিভিন্ন ধরনের খেলনার প্রতি আগ্রহী হয়। শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে খেলনা ও খেলার ধরন পরিবর্তন হবে। জন্মের পর থেকে প্রায় ছয়-সাত মাস পর্যন্ত শিশুরা নিজে থেকে খেলতে পারে না, কিন্তু রঙিন, নরম ও মিউজিক হয় এমন খেলনা দিলে সে আনন্দ পায় এবং প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই বয়সের শিশুর খেলনা অবশ্যই সব সময় পরিষ্কার রাখতে হবে। কেনার পর জীবাণুমুক্ত লিকুইড দিয়ে ধুয়ে-মুছে শিশুর হাতে দিতে হবে এবং নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।

এক বছরের কম বয়সী শিশুরা সাধারণত কোনো খেলনা পেলে প্রথমেই তা মুখে দেয়, শব্দ করে ছুড়ে ফেলে বা টানাটানি করে। এতে তারা কোনটা নরম, শক্ত ও হালকা তা বুঝতে শেখে। দুই বছর বয়স থেকে শিশুরা কল্পনাপ্রবণ হয়ে ওঠে। এবং খেলনাকে জীবন্ত মনে করে খেলনার সঙ্গে অভিনয় করে। যেমনঘরবাড়ি খেলা, পুতুল খেলা, জীবজন্তু বা ডাক্তার সাজা। পুতুল বা এজাতীয় খেলনার সঙ্গে অভিনয়মূলক খেলা খেলে। আশপাশে যা দেখে, সেসব মনে রেখে সেই আচরণগুলো পুতুলের সঙ্গে বা অন্য কিছুর সঙ্গে করে। যেসব খেলনার মাধ্যমে শিশু রং, আকৃতি বা সহজ গণনা শিখতে পারে, তেমন খেলনাও দু-তিন বছর বয়সী শিশুদের জন্য উপযোগী।

চার বছর পর্যন্ত শিশুদের খেলায় প্রাণশক্তির উদ্যম প্রকাশিত হয়। দৌড়ঝাঁপ, লাফানো, চেয়ার-টেবিল ঠেলা, সাইকেলে চড়াএসব করতে পছন্দ করে। তারা সব সময় কিছু না কিছু করতে ভালোবাসে। এ সময় শিশুদের উপযোগী মাপের করাত, হাতুড়ি, ছোট কাঠের টুকরা, কাজ করার বেঞ্চ, কাগজ, শিশুদের উপযোগী কাঁচি দেওয়া যেতে পারে। কোনো কিছুর আকৃতি গড়তে ক্লে বা ফুড কালার মেশানো রঙিন আটার দলা দেওয়া যেতে পারে। খেলতে খেলতে বর্ণমালা শেখা, গুনতে শেখাও এই বয়সের জন্য ভালো। পাঁচ বছর বয়স থেকে শিশুরা পরিকল্পনা অনুযায়ী গঠনমূলক খেলায় অংশগ্রহণ করে। প্রথম দিকে তারা বালু, কাদা, গুঁড়া রং, ব্লক ইত্যাদি দিয়ে কিছু একটা তৈরি করার চেষ্টা করে।

এ সময় তারা রং-তুলি দিয়ে ছবি আঁকতে পছন্দ করে এবং তাদের আঁকা ছবি কিছুটা বোঝাও যায়। এ সময় ছবি দেওয়া গল্পের বইও দিতে পারেন। ছয় বছর বয়স থেকে শিশুদের মধ্যে সাধারণত জিনিসপত্র সংগ্রহ করার প্রবণতা দেখা দেয়। যেমনমার্বেল, টিকিট, স্টিকার, রং-পেনসিল, ছবি, পুতুল ইত্যাদি। এই বয়সের শিশুরা যেকোনো খেলা সঠিকভাবে নিয়ম মেনে খেলতে চেষ্টা করে। বড়দের দলগত খেলায় অংশ নিতে আগ্রহ দেখায়। এ বয়সে অভিনয়মূলক খেলার প্রতি আগ্রহ কমে আসে। তারা গল্প শুনতে ও দলবদ্ধভাবে খেলতে পছন্দ করে।
 

Leave a Comment