গর্ভকালীন পানি ভাঙ্গা নিয়ে বিস্তারিত জানুন

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ৯, ২০১৮

গর্ভবতী মহিলার জরায়ুতে, শিশুকে আ‍্যম্নিওটিক স‍্যাক্ নামক একটি চামড়ার মতো পাতলা আস্তরণ ঢেকে রাখে। সারা গর্ভকাল ধরে এই আস্তরণের মধ্যে অ্যামনিওটিক তরল থাকে যেটা শিশুকে গদির মতো ঘিরে রক্ষা করে। অ্যামনিওটিক তরলের কাজ শুধু শিশুকে ধাক্কা লাগা থেকে রক্ষা করা নয়। তার আরো কিছু দরকারী কাজ হলো শিশুর ফুসফুস তৈরি করা, জরায়ুর তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা। শিশুকে প্রসবের সময় বের করতেও সাহায্য করে এই তরলটি। 

তৃতীয় ট্রাইমিস্টার এর শেষে, এই আস্তরণটি ফেটে গিয়ে অ্যামনিওটিক তরল বেরিয়ে আসে এবং তার ফলে শরীরে কিছু হরমোন বেরোয় আর জরায়ুর পেশীতে সংকোচন শুরু হয়। এ্যামিনিওটিক তরল ৩৪ তম সপ্তাহে সবচেয়ে বেশি থাকে, ৮০০ মি.লি., এবং ধীরে ধীরে ৪০ তম সপ্তাহে ৬০০ মি.লি.তে কমে আসে। এই প্রতিক্রিয়াটি হয় কারণ শিশু ক্রমাগত এই তরলটি গিলতে এবং নিঃশ্বাসে প্রশ্বাসে টেনে নিতে থাকে। গর্ভাবস্থা পুরো শেষ হওয়ার পরেই যে পানি ভাঙবে তার কোন মানে নেই, এটা অকালেও হতে পারে। অ্যামনিওটিক আস্তরণ ভেঙ্গে গেলে যোনিতে হালকা গড়িয়ে বা জোরে তরল নিঃসৃত হতে পারে।

যেভাবে পার্থক্য বুঝবেন : গর্ভকালে, মূত্রাশয় চাপ থাকা সত্ত্বেও মাঝেমধ্যে প্রস্রাব আপনাআপনি একটু বেরিয়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। এক্ষেত্রে, মহিলারা চিন্তায় পড়ে যান যে পানিভাঙ্গা আর প্রস্রাব হয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য কি করে বুঝবেন। আপনি সেটা বুঝে যাবেন যদি এই কয়েকটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন:

১. বাথরুমে গিয়ে প্রস্রাব করে মূত্রাশয় খালি করুন। যদি তা সত্তেও কোনো তরল যোনি থেকে নিঃসৃত হতে থাকে, তাহলে আপনার পানি হয়তো ভেঙে গেছে।

২. তরল জোরে বেরিয়ে আসা। প্রস্রাব কখনো অ্যামনিওটিক তরলের মতো জোরে আপনাআপনি বেরিয়ে আসে না।

৩. মেটারনিটি প্যাড ব্যবহার করুন। যদি তরল হলদেটে এবং গন্ধ যুক্ত হয়, তবে প্রস্রাব। কিন্তু যদি স্বচ্ছ এবং গন্ধহীন হয়, তাহলে এমনিওটিক তরল।

৪. শ্রোণী তলের (বা পেলভিক ফ্লোরের) পেশি চেপে ধরুন (যেভাবে আপনি কেগেল এক্সারসাইজ করেন) এবং দেখুন প্রস্রবণ বন্ধ হচ্ছে কিনা। যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেটা প্রস্রাব। কিন্তু যদি তা সত্ত্বেও তরল নিঃসৃত হয় তার মানে আপনার পানি ভেঙ্গে গেছে।

পানি ভাঙ্গার পর যে যে সাবধানতা অবলম্বন করবেন :

১. চিকিৎসককে সঙ্গে সঙ্গে ফোন করে জানিয়ে দিন, যাতে তাঁরা সব সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে পারেন।

২. যোনীদেশ পরিষ্কার রাখুন এবং চিকিৎসকের উপদেশ অনুযায়ী কাজ করুন।

৩. জামা কাপড় যাতে না ভিজে যায়, তাই ম্যাটারনিটি প্যাড বা মোটা কাপড় ব্যবহার করুন। জোরে প্রস্রবণ এর ক্ষেত্রে গামছা বা টাওয়েল ব্যবহার করুন।

যদিও গর্ভকাল শেষ হলে পানিভাঙ্গা একটি স্বাভাবিক ব্যাপার এবং এর ফলে প্রসব ঘটে, তবুও একটা উদ্বেগ তো থেকেই যায়। এক্ষেত্রে, আপনার সঙ্গী, পরিবারের সদস্য বা আশেপাশে যাঁরা আছেন, তাদের কাছে হাসপাতালে পৌঁছানোর জন্য তখনই সাহায্য চেয়ে নিন। ধীরে ধীরে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিন নিজেকে নিয়ন্ত্রণে এবং শান্ত রাখার জন্য। মনে রাখবেন, আপনি নয় মাস ধরে সেই ছোট্ট প্রাণটির প্রতীক্ষা করে আছেন, তারা আসার সময় হয়ে গেছে।

Leave a Comment