এসিডিটি

  • রোজী আরেফিন
  • জুন ১, ২০১৯

এসিডিটি,লোকাল বংলায় যাকে বলা হয় গ্যাস্ট্রিক। আপনারা কি জানেন ইদানিংকালে আমাদের বাঙালিদের সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যগত সমস্যা কি?সোজা উত্তর এসিডিটি। ভোজন রসিক বাঙালিদের রসনাবিলাস স্বভাবের জন্যই হোক আর স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতনতার অভাব ই হোক নিত্যনতুন এসিডিটির সমস্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে যেন।

এসিডিটি কিঃ আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হলো পাকস্থলী। এই পাকস্থলীর বেশ কয়েকটি লেয়ার রয়েছে।এইসব লেয়ারের একটি থেকে সবসময় হাইড্রোক্লোরিক এসিড সিক্রেশন হয়। এই সিক্রেশন কিন্তু সবসময় একই থাকে না।কখনো বেশী কখনো বা কম হয়। সাধারণত কিছু কিছু আনওয়ান্টেড সিচুয়েশনে এই হাইড্রোক্লোরিক এসিড সিক্রেশন স্বাভাবিকের চাইতে অনেক বেড়ে যায়,তখনি পাকস্থলীর যে এবনরমালিটি সৃষ্টি হয় তাকেই এসিডিটি বলে।

এসিডিটির সাইন এন্ড সিম্পটমসঃ

প্রাথমিক অবস্থায় :

- পেটে হালকা ব্যাথা

- বমি বমি ভাব

- বুকে জ্বালাপোড়া  এবং

- পেট ভার ইত্যাদি হতে পারে।

কিন্তু ক্রনিক অবস্থায় পেটে প্রচন্ডরকম ব্যাথা, বুক অসহ্য রকমের জ্বালাপোড়া,বেশ কয়েকবার বমি, হার্ট বার্ন এমনকি শ্বাসকষ্ট ও হতে পারে।

এসিডিটির কারনঃ

১. এসিডিটির প্রথম এবং প্রধান কারন হলো আমাদের খাদ্য অভ্যাস। অনিয়মিত এবং অসময়ে খাবারের নিয়মিত চর্চাতে এই এসিডিটির সৃষ্টি হয়।

২.ভাজাপোড়া এবং অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবারের জন্য ও এসিডিটির সৃষ্টি হয়।

৩.অতিরিক্ত জাঙ্কফুড বা ফাস্ট ফুড গ্রহনের অভ্যাস থাকলেও এসিডিটির সৃষ্টি হয়।

৪.অতিরিক্ত চিন্তা,রাতে ঘুম না আসা, ধুমপানের অভ্যাস ইত্যাদি কারনেও এসিডিটির তৈরী হয়।

৫.অতিরিক্ত ব্যাথার ওষুধ সেবন।বিশেষ করে নন স্টেরোয়ডাল এন্টি ইনফ্ল্যামেটরী এজেন্ট সমুহের অতিরিক্ত সেবনে এসিডিটির সমস্যা অনেক বেড়ে যায়।

৬.ফাইনালি যদি কোন কারনে পাকস্থলীতে কোন ধরনের ইনফেকশন বা এবনরমালিটির সৃষ্টি হয়,তখনো এসিড সিক্রেশন বেড়ে গিয়ে এসিডিটির কারন হতে পারে।

চিকিৎসাঃ সাধারণত এসিডিটি কনট্রোলের জন্য এইচ টু ব্লকার যেমনঃরেনিটিডিন,সিমিটিডিন অথবা পি পি আই ইনহিবিটর যেমনঃওমিওপ্রাজোল,এস ওমিওপ্রাজোল,রুবিপ্রাজোল,প্যান্ট্রোপ্রাজোল ইত্যাদি ডাক্তার রা প্রেসক্রাইব করে থাকেন।
তবে একবার অতিরিক্ত এসিড সিক্রেশনের জন্য ব্যাথা আরম্ভ হয়ে গেলে অবশ্যই এন্টাসিড  প্রিপারেশন সাথে দিতে হবে।

প্রতিরোধঃ আপনারা হয়তো জানেন পৃথিবীর প্রায় এক চতুর্থাংশ লোক এখন এই এসিডিটির সমস্যায় ভোগে।আর আমাদের এশিয়া মহাদেশে মূলত দক্ষিণ এশিয়াতে এর ভুক্তভোগীর সংখ্যা তুলনামূলক অনেক বেশী। তাই অতিরিক্ত এসিড সিক্রেশন বন্ধ করতে আমরা যা করতে পারি-

১.নিয়মিত খাদ্যভ্যাস গড়ে তুলুন।প্রতিদিন সঠিক সময়ে খাবার গ্রহন করতে হবে।

২.পরিমিত খাবার খান,অতিরিক্ত খাবার গ্রহন এড়িয়ে চলুন।একটু পরে পরে পরিমিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস করুন।

৩.ভাজাপোড়া আর অতিরিক্ত মসলাযুক্ত খাবার কে বাই বাই বলুন।তেলে ভাজা খাবার আর শুকনো মরিচ এসিডিটির অন্যতম কারন এটা মনে রাখবেন।

৪.খালিপেট পেপের তরকারি দিয়ে খাওয়া শুরু করুন।পসিবল হলে চিড়া ভেজানো অথবা পান্তা ভাত ও খালি পেটে খেয়ে দেখতে পারেন।

৫.প্রচুর বিশুদ্ধ পানি পান করুন।

৬.ধুমপান,এলকোহল ইত্যাদি ত্যাগ করুন।

৭.পর্যাপ্ত পরিমানে ঘুম আসুন,চিন্তা মানসিক অবসাদ ইত্যাদিকে বিদায় করুন।

৮.মনে রাখবেন খাবারের স্বাদ পাওয়া মাত্রই আমাদের পাকস্থলীর এসিড সিক্রেশন শুরু হয়ে যায় তাই যত্রতত্র একটু আধটু হুটহাট খাবার খাওয়া বন্ধ করুন।

৯.খাবারের মাঝে ও পরে ইচ্ছামত পানি পান করা বন্ধ করুন।খাবার গ্রহনের আধাঘন্টা আগে এবং পরে এক গ্লাস করে পানি পান করার অভ্যাস করুন।

১০.নিজে নিজে যে কোন ধরনের অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।প্রয়োজনে ফিজিশিয়ান এর প্রেসক্রিপশন  অনুযায়ী ওষুধ খাবেন।

পরিশেষে, আমাদের আমজনতার কাছে এসিডিটি এক নিত্যনৈমিত্তিক সাধারণ ব্যাপার।সাধারনত এই এসিডিটিকে আমরা আমলেই নিতে চাই না। কিন্তু এই সাধারণ ব্যাপারখানা ও যে কতটা মারাত্মক আর কতটা যন্ত্রণার হতে পারে,কেবল ভুক্তভোগীরাই ভালো জানেন।তাই এখন থেকেই শুরু করি আমাদের পাকস্থলীর যত্ন নেয়া,নিজেদের খাদ্যভ্যাস চেঞ্জ করা। আপনাদের জানিয়ে রাখি,অতিরিক্ত এসিড সিক্রেশন এর কারনেই এক সময় পেপটিক আলসার থেকে শুরু করে পাকস্থলীর ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।আর ক্যান্সার কতটা মারাত্নক ব্যাধি বোধ করি আপনাদের তা আর নতুন করে জানানোর প্রয়োজন পরবে না। তাই পাঠক এসিডিটির প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য আজকে থেকেই নিজের যত্ন নিন,নিজের অভ্যাস এর যত্ন নিন।ভালো থাকুন,ভালো রাখুন।

ধন্যবাদ।
 

Leave a Comment