নাক ডাকার কারণ ও প্রতিকার

  • প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার
  • জুন ২২, ২০২০

বিশ্বে প্রাপ্ত বয়স্ক লোকের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মানুষ নাক ডাকে। গবেষণায় দেখা গেছে মধ্যবয়স্ক ৪০ শতাংশ পুরুষ এবং ২০ শতাংশ মহিলা ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষ অবসট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপ্যিনিয়ায় ভুগে থাকেন । এটি অতি সাধারণ কিন্তু মারাত্মক অসুস্থতা । যারা অবসট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপ্যিনিয়ায় ভোগেন তাদের শ্বাস ১০ সেকেন্ড বা এর ও বেশী সময় অটকে থাকে ফলে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ  কমে যায়।

নাক ডাকার কারণ : জিহ্বা, মুখ এবং গলার উপরের অংশের মাসেল গুলো শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ মাংসপেশী । এ মাংসপেশী গুলো আমাদের খাওয়া, কথা বলা এবং শ্বাস প্রশ্বাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে । এছাড়াও ঘুমানোর সময় বাতাস চলাচলের রাস্তা বা এয়ারওয়ে খোলা রাখতে সাহায্য করে । সুতরাং জিহ্বা, মুখ এবং গলার উপরের অংশের মাংস গুলো যখন দুর্বল থাকে, তখন মাংসগুলো  শ্বাস নালীর উপরে চাপ সৃষ্টি করে । শ্বাস নালীর উপরে চাপ পড়ার ফলে বাতাস ভেতরে যেতে পারে না অর্থাৎ শ্বাস যাওয়ার রাস্তা ব্লক হয়ে যায় । তখন আমরা স্লিপ অ্যাপিনিয়া বা নাক ডাকায় ভুগে থাকি ।

আরো পড়ুন :  বাচ্চার ওজন বাড়াতে সহায়ক ঘী মেশানো পুষ্টিকর খাবার রেসিপি!

নাক ডাকার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল ওজন বৃদ্ধি অর্থাৎ ওবেসিটি। যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশী তারা নাক ডাকা বা স্লিপ অ্যাপিনিয়ায় বেশী ভুগে  থাকেন ।  কেননা ওজন বেশী হওয়ার কারণে শ্বাস নালীর আশে পাশে  অনেক ফ্যাট বা চর্বি জমা হয় যা শ্বাসনালীর রাস্তা সরু করে দেয় ফলে বাতাস যেতে বাঁধা প্রাপ্ত হয় ।

গবেষকগণ বলছেন যাদের স্লিপ অ্যাপিনিয়া বা নাক ডাকেন তাদের ব্লাড প্রেসার, কার্ডিওভেসকুলার সমস্যা (যেমণ স্ট্রোক, হার্ট এ্যটাক, হার্ট ফেইলর, ডায়বেটিকস, ঘাড় ব্যথা এবং মাথা ব্যথা ইত্যাদি সমস্যায়ও  বেশী থাকে ।

আসুন আমরা জেনে নেই  কিভাবে আমরা নাক ডাকা থেকে পরিত্রাণ পেতে পারি : স্ট্রেদেনিং এক্সারসাইজ বা মায়োফাংশনাল থেরাপির মাধ্যমে আমরা স্লিপ অ্যাপিনিয়া বা নাক ডাকা থেকে মুক্তি পেতে পারি । যেহুতু আমাদের  মুখ, জিহ্বা এবং গলার উপরের মাংস দুর্বল থাকে সেহেতু এসব মাংসগুলো শক্তিশালী করতে হবে । জিহ্বা, চোয়ালের মাংসপেশীকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে নাক ডাকার সমস্যা দূর হতে পারে । 

আরো পড়ুন :  শিশু বাড়তি খাবার খাওয়া শুরু করেছে? কি কি খাবার দেবেন জানুন!

এক্ষেত্রে নিম্মে  বর্ণিত এক্সারসাইজ করে আমাদের প্রাকটিস এর রুগীরা নাক ডাকা রোগ থেকে মুক্তি পেয়েছেন ।

১. শ্বাস স্বাভাবিক রেখে জিহ্বা দিয়ে চিন বা থুতনি স্পর্শ করুন । তারপর ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন । ধরে রাখার সময় ১০ -১৫ বার মনে মনে সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি পড়–ন । এ এক্সারসাইজ ১০ বার করুন । সবগুলো এক্সারসাইজ করার সময় স্বাভাবিক শ্বাসপ্রশ্বাস রাখুন ।

২. জিহ্বা দিয়ে নাক স্পর্শ করতে হবে । অথবা মাথা উঁচু করে জিহ্বা দিয়ে নাকস্পর্শ  করার চেষ্টা করুণ । তারপর ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন । ধরে রাখার সময় ১০ -১৫ বার মনে মনে সুবহানআল্লাহি ওয়াবি হামদিহি পড়ুন বা ১০০১ থেকে ১০১০ পর্যন্ত গুনুন । এ এক্সারসাইজ ১০ বার করুন ।

৩. ইনডেক্স ফিংগার ব্যবহার করে মুখের মধ্যে হাত দিয়ে চোয়াল বাইরের দিকে  টানুন। তারপর ৫-১০ সেকেন্ড ধরে রাখুন । ধরে রাখার সময় ১০ -১৫ বার মনে মনে পড়–ন সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি বা ১০০১ থেকে ১০১০ পর্যন্ত গুনুন ।  এ এক্সারসাইজ ৫-৭ বার করুন এবং উভয় দিকে করুন ।

৪. মুখের ভেতরে বাতাস নিয়ে অর্থাৎ মুখ ফুলিয়ে ধরে রাখুন ১০ সেকেন্ড । ধরে রাখার সময় ১০ -১৫ বার মনে মনে পড়–ন সুবহানাল্লাহি ওয়াবি হামদিহি বা ১০০১ থেকে ১০১০ পর্যন্ত গুনুন ।  এ এক্সারসাইজ ৫-৭ বার করুন এবং উভয় দিকে করুন ।  এরপর ধীরে ধীরে বাতাস ছেড়ে দিন।  এ এক্সারসাইজ ৫ বার করুন ।

ঘুমানোর পূর্বে অবশ্যই ভালোভাবে নাক পরিষ্কার করতে হবে। হালকা গরম পানির সাথে লবণ মিশিয়ে লবণ পানি দিয়ে গড়গড়া করুন ৫ বার। পাঠক অবশ্যই এক্সারসাইজগুলো সঠিক নিয়ম অনুযায়ী নিয়মিত করতে হবে ।

আরো পড়ুন :  শিশুর রুচি কমে যায় কেন?

উপদেশ :

১. চিৎ হয়ে শোয়া যাবে না । যে কোনো এক পাশে কাত হয়ে শুতে হবে ।

২. ওজন কমাতে হবে । যদি ওজন বেশী থাকে ।

৩. ধূমপান বর্জন করুন ।

৪. এ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকুন ।  

৫. প্রচুর পানি পান করুন ।

লেখক : প্রফেসর ডা. আলতাফ সরকার, মাস্কুলোস্কেলিটাল ডিজঅর্ডারস বিশেষজ্ঞ

 

Leave a Comment