আপু, বাচ্চা কান্না করলে মনে হয় আমি একজন খারাপ মা!

  • তামান্না ইসলাম
  • সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০

আপু,আমার বিয়ে হয়েছে ৫ বছর। আড়াই বছরের জমজ বাবু আর ৮ মাসের মেয়ে বাবু আছে। একলা সংসার। সারাদিন বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। আত্মীয়তার দিক থেকে আমাদের পরিবারের সবাই খুব আন্তরিক। বাচ্চা হবার আগে প্রতিটা উৎসবে সবাই একত্র হয়ে অনেক আনন্দ করতাম। বোনেরা একই রকম পোশাক, একই রকম সাজ নিতাম। সবার সাথে ফোনে সবসময় যোগাযোগ হতো। খালা-ফুফুরা সবাই আমাকে মেয়ের মতোই ভালোবাসে।

কিন্তু এখন সারাদিন বাবুদের সামলে নিজের দিকে তাকানোর সময় পাই না। আত্মীয় কেউ ফোন দিলেও খুব অসহ্য লাগে। কথা বলতে ইচ্ছে হয় না কারো সাথে। সারাক্ষণ মনে হয় বাচ্চাদের হয়তো আমি ঠিকভাবে সময় দিতে পারছি না। ওরা কান্না করলে মনে হয় আমার ভুলের জন্য কাঁদছে! নিজেকে খুব ছোটো লাগে। মনে হয় আমি একজন খারাপ মা....

আমার হ্যাজবেন্ড খুব হেল্পফুল। কিন্তু তাকেও আমার সহ্য হয় না! আমি দিন দিন পাগল হয়ে যাচ্ছি আপু। আমি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চাই। কিন্তু কিছুতেই নিজেকে স্থির করতে পারছি না....

পরামর্শঃ আপু "মাতৃত্ব" নিঃসন্দেহে একটা চমৎকার অনুভূতি। তবে মাতৃত্বের সাথে একজন নারীর শারীরিক ও মানসিক অনেক রকম পরিবর্তন ঘটে। আপনি সম্ভবত তেমনই প্রসব পরবর্তী ডিপ্রেশন বা পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনে ভুগছেন।

আপু, ছোটো বাচ্চা ঘরে থাকলে সাধারণত ঘরের কাজ অনেক বেড়ে যায়। পাশাপাশি তাদের জন্য আলাদা রান্না, কাপড়-বিছানা পরিস্কার সহ আরো অনেক কাজই আপনাকে সামলাতে হচ্ছে। একা একা ৩জন বাচ্চা সামলে নিজের জন্য সময় বের করা আসলেই কঠিন। আপনি ঘরের কাজে সাহায্য করার জন্য নির্দিষ্ট সময় অনুযায়ী কাউকে নিয়োজিত করতে পারেন। এতে আপনার কাজের ভার কিছুটা কমবে।

পাশাপাশি মানসিক পরিবর্তনের জন্য আপনাকে বুঝতে হবে যে ছোটো বাচ্চারা বিভিন্ন কারনে কান্নাকাটি করে। এতে সবসময় বিচলিত হবার কিছু নেই। আপনি মোটেই একজন খারাপ মা নন.... আপনার ঘুমের রুটিন বাচ্চাদের ঘুমের সময়ের সাথে মিলিয়ে সেট করার চেষ্টা করুন। বাচ্চা ঘুমালে আপনিও একটু ঘুমিয়ে নিন। বাচ্চার খাবারের পাশাপাশি নিজের খাবারটাও ঠিক সময়মত গ্রহন করুন।

আত্মীয়দের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে না করলেও সাধারণত কুশল বিনিময় রক্ষা করুন। তারা কেউ ই আপনার খারাপ চায় না। বরং অভিজ্ঞ আত্মীয়দের থেকে আপনি বিভিন্ন বিষয়ে টিপস নিতে পারেন। হ্যাজবেন্ডের সাথে সরাসরি কথা বলুন। যেহেতু আপনি বলেছেন সে হেল্পফুল, সেহেতু আশাকরি সে আপনাকে বুঝবে। সম্ভব হলে কিছুদিন মায়ের কাছে ঘুরে আসুন।

আপু, সন্তানের পাশাপাশি নিজেরও যত্ন নিন। শারীরিক, মানসিক ভাবে আপনি ভালো না থাকলে তার প্রভাব সন্তানের উপরেও পড়বে। তাই চেষ্টা করুন একটা নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলার। দিনে অন্তত ৩০ মিনিট নিজেকে সময় দিন। খুব বেশি প্রয়োজন মনে করলে কাউন্সিলিং এর জন্য সাইকোলজিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন।

Leave a Comment