দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে লাগে পতিতালয়ের মাটি, কিন্তু কেন?

  • ওমেন্স কর্নার ডেস্ক
  • সেপ্টেম্বর ২৬, ২০২২

হিন্দু শাস্ত্র মতে, প্রতিমা তৈরিতে কয়েকটি বিশেষ উপকরণ লাগে। যেগুলি ছাড়া দুর্গা প্রতিমা গড়া সম্ভব নয়।‌

পবিত্রতার প্রতিমূর্তি 'মা' দুর্গার মূর্তি তৈরি করতে প্রথমে লাগে বিশেষ কিছু জায়গার মাটি। রাজবাড়ীর মাটি, চৌমাথার মাটি, গঙ্গার দুই তীরের মাটি, অশুচি এলাকা বা নিষিদ্ধ পল্লীর মাটি। এর সঙ্গে লাগে গাভীর মুত্র, গোবর, ধানের শীষ ও পবিত্র গঙ্গার জল।
একদিকে পবিত্রতা, শুভ্রতার প্রতিমূর্তি মা দুর্গা,

অন্যদিকে তাঁর মূর্তি তৈরিতেই দরকার হয় তথাকথিত 'অশুচি' 'অপবিত্র' এলাকার মাটি। এক পুজো চলে যেতেই শুরু হয়ে যায় পরের বছরের পুজোর প্রস্তুতি।
পুজোর কয়েক মাস আগে থেকেই কুমোরপাড়ায় ব্যস্ততা উঠে তুঙ্গে। কাদা মাখা শিল্পী হাত থামতেই চায়না। মৃন্ময়ীরূপে জেগে ওঠেন মা দুর্গা। একমেটে, দোমেটে থেকে ধাপে ধাপে পূর্ণ অবয়বে ফুটে ওঠেন তিনি।

আরো পড়ুনঃ ঘরবাড়ি গুছিয়ে রাখতে সহজ করবে যেসব উপায়

কিন্তু প্রতিমা নির্মাণের জন্য বেশ্যালয়ের মাটির প্রয়োজন পড়ে। এখানের মাটি ছাড়া মায়ের মূর্তি গড়া সম্ভব নয়। কিন্তু কেন দেবী প্রতিমা নির্মাণের সময় পতিতালয়ের মাটি দরকার হয়। চিরাচরিতভাবে মানুষ বিশ্বাস করেন যে, মানুষের মধ্যে যে কামনা, বাসনা, লালসার বাস। পতিতারা তা নিজেদের মধ্যে নিয়ে নেন। তারা নিজেদের 'অশুদ্ধ' 'অপবিত্র' করে সমাজকে শুদ্ধ রাখতে চান। পবিত্র রাখতে চান।

ফলে হাজার হাজার পুরুষের পুণ্যে বেশ্যাদ্বারের মাটি হয়ে ওঠে পবিত্র। সে কারণেই এই মাটি দিয়ে গড়তে হয় দেবী মূর্তি। এই আচার থেকে বোঝানো হয় যে, নারী মায়ের জাতি। নারীর মধ্যেই পুরুষের জন্ম। নারীকে পতিতা বানায় পুরুষরাই। তাই ঐ পুরুষটাই অপবিত্র। মায়ের প্রতিমা তৈরিতে ফুলতলার মাটি দিতে হয় অর্থাৎ যারা এই পরিস্থিতির শিকার তাঁদের সম্মান করতে হবে।

নারী কখনো অপবিত্র হতে পারে না এই ধারণাটি লুকিয়ে থাকে এই রীতির আড়ালে। শরৎকালে হয় দেবীর অকালবোধন। এ সময় মহামায়া নয়টি রূপে পূজিত হন।

দেবী দুর্গার নয়টি রূপ। এগুলি হল-

১. নর্তকী বা অভিনেত্রী,

২. কাপালিক,

৩. ধোপানী,

৪. নাপিতানী,

৫. ব্রাহ্মণী,

৬. শূদ্রাণী,

৭. গোয়ালিনী,

৮. মালিনি,



৯. পতিতা।

আরো পড়ুনঃ কিবোর্ড পরিষ্কার করার সহজ উপায়

এই নয়টি রূপকে মায়ের নবকন্যার রূপ বলা হয়। এই নয় গৃহের মাটি ছাড়া মায়ের রূপ নির্মাণ করা যায় না। দেবের মূর্তি গড়ার জন্য এই নয় শ্রেণীর বাড়ি থেকে মাটি নিয়ে আসা হয়। অন্যান্য শ্রেণীর নারীর মতো পতিতালয়ের মাটি এই একই কারণে নিয়ে আসা হয়।
এ নবম রূপটি আসলে পতিতালয়ের প্রতিনিধি। মনে করা হয়, সে কারণেই এই রীতির জন্ম হয়েছে।

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment