সাইকোথেরাপি নিয়ে কিছু মিথ এবং বাস্তবতা 

  • ফারজানা আক্তার 
  • জুন ২৮, ২০২১

সিনেমা, নাটকে দেখি বা গল্পে পড়ি একটি বেডে মানসিক রোগীকে শুয়িয়ে তার কাছে তার অতীত সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করা হয়। সেই অতীতের ঘটনা ধরে ধরে সেই রোগীর থেরাপি চলে। কিন্তু বাস্তবতা কি জানেন ? বাস্তবে থেরাপিতে শুধুমাত্র বর্তমানের সমস্যার সমাধান আর ভবিষৎ জীবনের দিকে ফোকাস রাখা হয়। কিছু কিছু পরিস্থিতিতে অতীতের ঘটনা টানতে হয় তবে সেটা শুধুমাত্র কিছু পরিস্থিতিতে এবং সব রোগীর ক্ষেত্রেও প্রয়োজন হয় না। 

বাস্তবে থেরাপিতে আপনাকে কিছু গাইডলাইন দেওয়া হবে। আপনি যদি সেই গাইডলাইনগুলো সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন তাহলে আপনার জীবনযাত্রার মানের অনেক উন্নতি হবে। এই গাইডলাইনগুলো কিভাবে সম্পর্ক মেইনটেইন করতে হয়, কিভাবে নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, কিভাবে নিজের চিন্তাশক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে হয়, পরিস্থিতি অনুযায়ী নিজেকে শান্ত রেখে কিভাবে রিএকশন দেখাতে হয় ইত্যাদি বিষয়ে আপনাকে দক্ষ করে তুলবে। 

আরো পড়ুন : কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ডিম!

অনেকে মনে করেন কেউ থেরাপি নিচ্ছে মানে সে পাগল হয়ে গেছে অথবা পাগল হওয়ার পর্যায়ে আছেন। কিন্তু সত্যিকার অর্থে বিষয়টা এইরকম নয়। মানসিকভাবে অসুস্থ হলেই আপনাকে থেরাপি নিতে হবে অথবা পাগলরাই শুধু থেরাপি নেয় বিষয়টা তা নয়। কখনো কখনো জীবনের কিছু বিষয়ে আমরা কিছুটা এলোমেলো হয়ে যাই বা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি। সেইটুকু মানসিক বিপর্যস্ততা  কাটিয়ে সুশৃঙ্খল জীবনে ফেরার জন্য থেরাপি একটি বেস্ট অপশন। 

বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে আমাদের সকলের ব্যস্ততা বহুগুনে বেড়ে গেছে। চাকরি, পড়াশোনা, পরিবারের পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় বহু সময় দিতে গিয়ে আমরা রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যাচ্ছি। চাকরি, পড়াশোনা, পরিবার, সোশ্যাল মিডিয়া প্রতিটা সেক্টরই কতটা সুন্দরভাবে একইসাথে হ্যান্ডেল করা যায় থেরাপি সেই পথ আপনাকে দেখাবে।   

ভিডিওটি দেখুন :  অন্যের মন খারাপে নিজের মমতার হাত বাড়িয়ে দিন

অনেকে মনে করেন থেরাপি হয়তো বছরের পর বছর ধরে নিতে হয়। কিন্তু এই মনে করাটা ভুল। যাদের মানসিক অসুস্থতা কিছুটা গভীর বা দীর্ঘদিন মানসিক অসুস্থতায় ভুগে থেরাপি নিতে গিয়েছে তাদের একটু বেশি সময় ধরে থেরাপি নিতে হয়। কিন্তু যারা প্রাইমারি স্টেজেই থেরাপি নিতে যায় বা যারা তাদের জীবনের কোন একটা পরিস্থিতি গুছিয়ে উঠতে পারছে না তাদের জন্য এক বা দুই সাপ্তাহই যথেষ্ট।  

অনেকে মনে করেন শর্ট টাইম থেরাপি কোন কাজের নয়। এই মনে করাটাও ভুল। শর্ট টাইম থেরাপি স্ট্রেস কমায়, সম্পর্কের ভাঙ্গন জোড়া লাগাতে সাহায্য করে, ঘুমের সমস্যা দূর করে, প্যারেন্টিং বিষয়ে ভয় দূর করে, ওয়েট ম্যানেজমেন্টে সাহায্য করে ইত্যাদি।   

ভিডিওটি  দেখুন : তুমি কি নিজেকে কিছুটা বদলাবে ?

থেরাপিস্ট সম্পর্কে একটি প্রচলিত জোক্স আছে। থেরাপিস্টরা শুধু শুনে এবং একটি কমন প্রশ্ন করে যেমন : ' এই বিষয়ে আপনার অনুভূতি কী ? ' যদিও শোনাটা গুরুত্বপূর্ণ, তার অর্থ এই নয় তিনি শুধু শুনে যান কিন্তু সমাধান দেন না। শুনে বুঝে তার মতো করে তিনি গাইডলাইনে দেন। ডাক্তার যেমন রোগীর ধরণ বুঝে ওষুধ দেন, থেরাপিস্টরা রোগীর সমস্যা বুঝে প্রশ্ন করেন এবং গাইডলাইন দেন।  

অনেকে মনে করেন থেরাপি অনেক ব্যয়বহুল। এটা মনে করা আমাদের দেশের জন্য ঠিক আছে। তবে অন্য দেশের জন্য সত্য নয়। আমাদের দেশে এখনো মানসিক সমস্যাকে সেভাবে মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তবে নিকট অতীতের তুলনায় এখন অবশ্য আমাদের দেশেও মানসিক সমস্যা নিয়ে বেশ আলোচনা হচ্ছে, এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে অনেক প্রচার - প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সত্যিকার অর্থে কতটা কার্যকরী হয় সেটা অদূর ভবিষৎতে বুঝা যাবে। 

ভিডিওটি  দেখুন : ইতি আমি কারো কেউ নই

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment