নারীদের লড়াইয়ের শেষ কোথায় ?

  • ফারজানা আক্তার 
  • জুলাই ১০, ২০২১

ফেসবুকে গৃহিণীদের কিছু গ্রুপ রয়েছে। যদিও সেই গ্রুপগুলোতে গৃহিনী, চাকরিজীবী সকলেই আছেন। সকলে নিজ নিজ জায়গা থেকে নিজেদের সুখ - দুঃখ শেয়ার করেন। কয়েকদিন আগে একজন আপু পোস্ট দিয়েছিলেন। সাথে খুব সুন্দর একটা ছবি। তার তিন বাচ্চাকে সাথে নিয়ে একটি ছবি পোস্ট করেছেন। তৃতীয় বাচ্চাটা ৮ / ৯ মাসের। তার তিনটা বাচ্চা এবং তিনজনই সিজারের। তৃতীয় বাচ্চা হওয়ার পর আপুর পেট বেশ বড় হয়ে গেছে। তার ভাষ্যমতে এই পেট দেখে যে কেউ তাকে গর্ভবতী ভাবতে বাধ্য। তার শরীর তেমন মোটা না, তবে পেট বেশ মোটা। 

তার স্বামী তাকে দ্রুত পেট কমাতে বলছেন। একদিকে পেটের সমস্যা, অন্যদিকে আপু তার স্বামীকে আগের মতো শারীরিক সাপোর্ট দিতে পারছেন না। মধ্যবিত্ত পরিবারে আলাদা হেল্পিং হ্যান্ড থাকে না। তিন বাচ্চা সামলিয়ে, সংসার সামলিয়ে আপুর নিজের যত্ন নেওয়ার ইচ্ছে  এবং শারীরিক চাহিদা কোনটাই থাকে না। অন্যদিকে তার স্বামী বেশ একটিভ পুরুষ। আপু ভয় পাচ্ছেন তার স্বামী যদি পরনারীতে আসক্ত হয়ে পড়েন! গ্রুপে পোস্ট দিয়ে তিনি সমাধান চেয়েছেন। 

আরো পড়ুন:

আপনি কেন আগে সরি বলবেন ?

সরি বলার উপকারিতা 

আপনি কানকথা বিশ্বাস করছেন নাতো ? 

অনেকে তাকে ডায়েট করার বিভিন্ন টিপস দিযেছেন, অনেকে বিভিন্ন ধরণের উপদেশ। এমন কিছু নেই যা ফেসবুকে পাওয়া যায় না। এখানে ক্লাস নাইন ফেল করা মানুষটাও পিএইচডি করা ব্যক্তিকে পরামর্শ দেয়। তবে সেই পরামর্শ কতটা যৌক্তিক এবং কার্যকর সেটার খোঁজ কেউ রাখে না। সব ডায়েট সবার জন্য না। এটা বুঝতে রকেট সাইন্স লাগে না। সবার পরিস্থিতি এক নয়। এটা বুঝতেও পান্ডিত্য লাভ করার প্রয়োজন নেই। 
 
ডায়েট করার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত। এবং কেউ যদি বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তার জন্য বাধ্যতামূলক। এবং শরীরের ফিটনেস রাতারাতি ফিরে আসে না। তার জন্য সময়ের প্রয়োজন। একজন মায়ের জন্য তা আরো কঠিন। ওই আপুর স্বামী সবার আগে একটা ধন্যবাদ পাবে। কারণ তিনি পরনারীতে আসক্ত না হয়ে বউকে বলেছেন ফিটনেস ফিরিয়ে আনতে। চাইলে তিনি বাহিরে তার পছন্দমতো ফিটনেস ওয়ালা মেয়েদের সাথে সম্পর্কে জড়াতে পারতেন! তা না করে বউকে তিনি তার পছন্দের কথা জানিয়েছেন। 
 
এবার আসি আসল কথায়! সংসার সামলিয়ে, তিন তিনটা বাচ্চার জন্ম দিয়ে এবং তাদের সামলিয়ে কার পক্ষে সম্ভব নিজের ফিটনেস ধরে রাখা ? কার পক্ষে সম্ভব নিজের ত্বক, চুলের নিয়মিত যত্ন নেওয়া ? ফিটনেস, সৌন্দর্য নিজের প্রয়োজনে ধরে রাখা উচিত, কিন্তু সেটা কতটা দায়িত্ব পালন করে ? আমি যদি সেই আপুর স্বামীকে চিনতাম তাকে বলতাম আপু অবশ্যই আগের ফিটনেসে ফিরে আসবে। তবে তার আগে আপনাকে কিছু শর্ত মেনে নিতে হবে। 

আরো পড়ুন:

যা হয় তা কি সত্যিই ভালোর জন্য হয় ?

যদি ব্যর্থ হই?

একজন বাবার গল্প...

আপনি  আগে বাচ্চাদের জন্য বেবি সিটার রাখুন, বাসার কাজের জন্য কাজের লোক রাখুন, আপুকে জিমে ভর্তি করান, নিয়মিত পার্লারে যাওয়ার ব্যবস্থা করুন। বাকিটা আপু সামলে নিবে এবং অবশ্যই আপনার সামনে সবসময় ক্যাটরিনা সেজে ঘুরে বেড়াবে। ক্যাটরিনার মতো ফিটনেসওয়ালা বউ চাওয়া দোষের কিছু না। তবে ক্যাটরিনার ফিটনেস পেতে যে ধাপ পেরুতে হয়, সেগুলোর ব্যবস্থা না করে দিয়ে ক্যাটরিনার মতো ফিটনেসওয়ালা বউ চাওয়া অবশ্যই দোষের। 

বাচ্চা কনসিভ করার পর থেকে শুরু করে একজন মেয়ে কী পরিমাণ শারীরিক, মানসিক যন্ত্রনা এবং পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে যায় সেটা একজন পুরুষ কখনো বুঝবে না। অবিবাহিত যে মেয়েটা দিনে ১০০ বার মাথায় চিরুনি দেয়, আয়নার সামনে দিনে কয়েকশবার দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে, সেই মেয়েটা সংসারী এবং মা হয়ে উঠার পরে ৭ দিনেও একবার মাথায় চিরুনি দিতে ভুলে যায়। আয়না দেখতে রীতিমতো ভুলে যায়। 

 

আরো পড়ুন:

আপনি কি আইএসটিজে ( ISTJ ) ব্যক্তিত্বের অধিকারী ?

আপনি সফলতা ধরে রাখতে চান ?

আপনি কি সবসময় ভুল সিদ্ধান্ত নেন ?

 

অবিবাহিত যে মেয়েটা নিজের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য তেল / চর্বিওয়ালা খাবার এভোয়েড করতো, সেই একই মেয়ে মা হয়ে উঠার পর তেল চর্বি যা পায় তাই খায় যেন তার বুকে পরিমাণমতো দুধ জমে। আদরের বাচ্চাটা পেট ভরে বুকের দুধ খেতে পারে। সেই মেয়েটাকে যখন আবার তার স্বামী বলে দ্রুত আগের ফিটনেসে ফিরে আসো। এভাবে আমার হচ্ছে না!

তখন সেটা কিভাবে সম্ভব হয়? সেই মেয়ের মনের অবস্থা কেমন হয় সেটা আপনাদের ভাবতে হবে না! শুধু তার জায়গায় একবার নিজেকে বসিয়ে দেখুন তো কেমন অনুভূতি অনুভূত হয়।

মেয়েরা এক জীবনে সংসার ঠিক রাখবে ? স্বামীকে ধরে রাখবে ? সন্তান মানুষ করবে ? শারীরিক সৌন্দর্য ধরে রাখবে ? নাকি স্বপ্ন পূরণের জন্য লড়াই করবে ? সৃষ্টিকর্তা জীবন দিয়েছেন ছোট আর মেয়েদের দিয়েছেন নানান ধরণের প্রতিকূলতা। 


 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment