ননদ ভাবীর সম্পর্ক! তিতা নাকি মিষ্টি?

  • ফারজানা আক্তার 
  • এপ্রিল ২৬, ২০১৮

ননদ ভাবীর সম্পর্ক হতে পারে বন্ধুদের কিংবা খুব বেশি তিক্ততার। চাইলেই ননদ ভাবীর সম্পর্ক হতে পারে খুব মধুর।  কিন্তু আদৌ কি তা আমাদের সমাজে দেখা যায়? কিছু কিছু ননদ ভাবীর সম্পর্ক আসলেই খুব মধুর হয়ে থাকে।  কিন্তু সেই মধুর সম্পর্ক লাখে একটা দেখা যায় কিনা তাও সন্দেহ! 

ঘটনা ১ : লাবনীর বিয়ে হয়েছে ৬মাস। নিজে বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।  বন্ধু বান্ধবের মুখে ছোট ছোট ভাই বোনের গল্প শুনে নিজের বাবা মায়ের প্রতি খুব রাগ হতো।  ভাবতো বাবা মা আরেকটা বাবু নিলে কি এমন ক্ষতি হতো! সেই রাগের পরিমান অনেকটা কমে আসলো যখন শুনলো সে যে পরিবারের বউ হতে যাচ্ছে সে পরিবারে ছোট ছোট দুইটা পিচ্চি আছে।  লাবনীর ছোট দুইটা ননদ রয়েছে। বিয়ের মাত্র ৬মাসেই লাবনী বুঝতে পারলো মায়ের পেটের ছোট বোন আর শাশুড়ির পেটের ননদের মধ্যে বিস্তর ফাঁরাক। লাবনীর দুই ননদ একজন কলেজে পড়ে আর অন্যজন ভার্সিটিতে। দুই বোন মিলে তাদের কাপড় চোপড় ধোয়া থেকে তাদের রুম পরিষ্কার সব লাবনীকে দিয়ে করায়। লাবনীর নতুন পোশাক, কসমেটিক্স, গহনা কিছুই আর লাবনীর নেই।  সব দুই বোনের দখলে চলে গেছে।  লাবনীর শাশুড়ি এসব দেখেও দেখে না। বাড়ির কাজের লোককেও মানুষ এভাবে খাটায় না, যতটা লাবনীকে লাবনীর ননদরা খাটিয়ে নেয়। যেদিন লাবনী মাথা তুলে ২-১টা কথা বলে সেদিন তার ননদদেরা লাবনীর জামাই আর শাশুড়িকে ইনিয়ে বিনিয়ে হাজারটা কাহানি শুনাবে।  তারপর আবার জামাই আর শাশুড়ির কাছে লাবনীকে কথা শুনতে হয়।  লাবনীর মাঝে মাঝে মনে হয় তার পুরো সংসার তার ননদদের কাছে জিম্মি। 

ঘটনা ২ : রিসি এবার ভার্সিটিতে উঠলো।  ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই ক্লাসের একটি ছেলেকে তার খুব ভালো লেগে যায়।  গত সপ্তাহে সেই ছেলেটি রিসিকে প্রপোজ করলো। রিসি কিছুদিনের সময় নিয়েছে। রিসি কার সাথে নিজের মনের কথা শেয়ার করবে ভেবে পাচ্ছে না। পরে ভাবলো তার ভাবীকে সব বলবে। রিসি বাসায় যেয়ে তার ভাবীকে সব খুলে বললো। রিসির ভাবী রিসির কথা শুনে চিৎকার চেঁচামেচি করে বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো। রিসির ভাবি বারবার বলছে, "আমার জামাই এতো কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে তোমাকে পড়াচ্ছে প্রেম করার জন্য? ভার্সিটি পড়তে যাও, নাকি প্রেম করতে?" আরো কি ইত্যাদি। রিসি অবাক হতে হতে একেবারে চুপসে গেলো। ভাবীকে বন্ধু মনে করে কথাগুলো বলেছিলো আর ভাবী!!! রিসির খুব কান্না পাচ্ছিলো। ভাবীর জামাই কষ্ট করে টাকা ইনকাম করে কিন্তু ভাবীর জামাই তো তার নিজের ভাইও হয়। ভাবী এভাবে কেন কথাটা বললো রিসি বুঝতে পারলো না। 

উপরের ঘটনা দুইটি ধারা বোঝা যাচ্ছে ননদ কিংবা ভাবী কেউ কাউকে সহজে গ্রহণ করতে পারে না।  কিন্তু কেন? কারণ এমন মানসিকতার নারীদের মনের গভীরে কাজ করে নিরাপত্তাহীনতা। ঘরে ভাবী আসার পর ননদ মনে করে এই বাড়ি তার নিজের আর নেই। সব এখন ভাবীর দখলে চলে যাবে। ভাবী ভাবতে থাকে সে ঘরের বউ তাই তাকে অন্যদের তুলনায় ছোট করে দেখা হচ্ছে। তার থেকে বেশি তার ননদকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। দুইজনের মনে দুই ধরণের চিন্তা ভাবনা খেলা করতে থাকে। 

পরিবারের সদস্যের প্রতি যদি পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকে, তবে এই সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। এখানে কিন্তু শাশুড়ির দায়িত্ব অনেকটা বেশি। কারণ সংসারে বউ আসার পর তার জায়গাটা কিছু নড়েচড়ে যায় সেটা তিনি বুঝতে পারেন। কখনো তিনি সেটা প্রকাশ করেন, আবার কখনো করেন না। তখন তিনি অন্যভাবে ঘুঁটি চালান। নিজের মেয়েকে অনেকেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন। নিজের অধিকার আদায় আর সম্পর্কের বিদ্বেষ কিন্তু এক জিনিস নয়। একটা পরিবারে একজন বউয়ের অধিকার, সম্মান, মর্যাদা, সংসার পরিচালনায় নেতৃত্ব কখনোই ননদের অধিকারকে খর্ব করে না। দুপক্ষের মধ্যে সহনশীলতা, সমঝোতা সংসারকে সুন্দর করে তুলে। শাশুড়ির মনে রাখতে হবে তাঁর মেয়েও অন্যের বাড়ি যাবেন এবং ননদকে মাথায় রাখতে হবে তিনিও অন্য বাড়ি বউ হয়ে যাবেন। তিনি নিজের বাড়িতে ভালো ব্যবহার করলে, অন্যের বাড়িতে ভালো ব্যবহার পাবেন।  সবাইকে মনে রাখতে হবে একটি শুভ কাজ আরেকটি শুভ কাজের জন্ম দেয়।


 

Leave a Comment