আপনার নবজাতককে ইনফেকশন থেকে রক্ষা করছেন তো ?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক  
  • ডিসেম্বর ১২, ২০১৭

জন্মের পর থেকে ২৮দিন পর্যন্ত সময়কালকে নবজাতক সময় ধরা হয় ৷ এ সময়টিতে আপনার এবং আপনার শিশু উভয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷ ভালবাসা আর আদরের মাঝে তার সুস্থ-সুন্দর জীবন নিশ্চিত করতে, নিরাপদ রাখতে পরিষ্কার- পরিচ্ছন্নতার কোন বিকল্প নেই ৷ ওর নাজুক কোমল শরীর  খুব সহজেই বিভিন্ন রোগজীবাণু দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে ৷ এছাড়া কাঁচা নাভির মাধ্যমে সামান্য অপরিচ্ছন্নতায় ইনফেকশনও হয়ে যেতে পারে ৷     

আপনার ছোট্ট বাবুর ছোট্ট শরীরকে অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে রাখতে চাইলে তার শারীরিক পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। আজ জেনে নিন ছোট্ট বাবুটিকে কিভাবে বিভিন্ন রোগ - বালাই এবং ইনফেকশন থেকে রক্ষা করার উপায়গুলো - 

জন্মমুহূর্তের পরপর:

হাসপাতালে বা ক্লিনিকে জন্মালে Operation Theatre এই শিশুর গা মুছিয়ে তাকে নরম কাপড়ে মুড়িয়ে দেয়া হয় ৷ পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড়ে মুছে শিশুর মাথাসহ সমস্ত শরীর শুকানো হয় ৷ এক টুকরা বড় পরিষ্কার কাপড়ে শিশুকে জড়িয়ে নিয়ে প্রথমে মাথা তারপর গলা , কাঁধ, বুক ও পেট মুছতে হয় ৷ এরপর পিঠ ও কোমর থেকে পায়ের পাতা অবধি ৷ মোছা হলে কাপড়টি ফেলে অন্য আরেকটি নরম কাপড়ে মাথাসহ সমস্ত শরীর (মুখমন্ডল বাদে) জড়িয়ে নিন ।

জন্মের সময় শিশু তার ত্বকে একটি প্রাকৃতিক সুরক্ষা-প্রাচীর নিয়ে জন্মায় ৷ এটা হলো এমিওনিটিক ফ্লুইড ৷ এর ওপর ভারনিক্স ক্যাসোসা নামে আরেকটি লেয়ার থাকে ৷ এই পাতলা সাদাটে আবরনটি শিশুর রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ৷ ছয়-সাতদিনের মধ্যে এটি আপনা আপনি পরিষ্কার হয়ে যায় ৷ কিন্তু ভুলেও ঘষে মেজে এটি তুলতে যাবেন না ৷

পরবর্তী পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা:

নবজাতকের শরীরের সবটুকুই পরিচ্ছন্ন থাকা জরুরি তবে কয়েকটি বিশেষ অঙ্গের আলাদা যত্ন প্রয়োজন ৷ যেমন নাভি, দুপায়ের ফাঁক, চোখ, নাক ,কান ,নখ এবং জিহ্বা ইত্যাদি৷

বাচ্চা জন্মের পর থেকেই তাকে জীবাণু সংক্রমণ থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলুন - 

হাত ধুয়ে নিন :

শিশুর সংস্পর্শে আসার আগে নিজের হাতটি সবসময় ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন ৷ ব্যবহার করতে পারেন জীবাণুনাশক হ্যান্ডওয়াশ অথবা ইন্সট্যান্ট হ্যান্ড স্যানিটাইজার। শিশুকে কেউ কোলে নেবার আগে তার হাত ধুয়ে নিতে বলুন ৷ এছাড়া শিশুকে পরিষ্কার করার আগে নিজের হাতটি ধুয়ে তবেই স্পর্শ করুন শিশুকে ৷ হাত ধুয়ে নিন শিশুর ডায়াপার বা প্রস্রাব-পায়খানা করা কাপড়-কাঁথা পাল্টাবার পরেও৷

Umbilical cord বা নাভি :

শিশুর জন্মের পরপরই প্লাসেন্টা থেকে কাটা হয় ৷ নাভি কাটার পর ডাক্তাররা তা ক্ল্যাম্প করে বা পেঁচিয়ে ক্লিপের মত প্লাস্টিক বা মেটালের কর্ড ক্ল্যাম্প বা টেইপ লাগিয়ে দেন ৷ এতে নাভিতে রক্তপ্রবাহ বন্ধ হয় আর ইনফেকশনের সম্ভাবনা কমে আসে ৷

নাভি শুষ্ক রাখুন ৷ যত বেশি শুষ্ক রাখা যাবে তত দ্রুত নাভি শুকিয়ে ঝরে যাবে ৷ এজন্য নাভিকে তেল, সাবান, লোশন , পানি থেকে দূরে রাখুন ।  তবে কখনো কখনো ডাক্তাররা নাভিতে আলকোহল দিয়ে মুছে দিতে বলেন ৷ একটি তুলোর বলে বা কটন বাডে এলকোহল লাগিয়ে নিয়ে আস্তে আস্তে নাভি পরিষ্কার করুন ৷

হয়তো সঠিকভাবেই শুকাচ্ছে কিন্তু তারপরও কখনো কখনো নাভি থেকে বাচ্চার কাপড়ে হলদে দাগ পড়তে পারে ৷ বদলে দিন কাপড় আর ধুয়ে নিন। সাধারণত সাত থেকে চোদ্দ দিনের মধ্যে নাভি আপনাআপনি শুকিয়ে ঝরে যায় ৷

নবজাতকের নখ :

বাচ্চাদের নখ খুব দ্রুত বাড়ে ৷ ওর নখের আঘাতে ওর ত্বকে আঁচড় লাগতে পারে ৷ আঁচড় গভীর হলে ঘা হবার সম্ভাবনা থাকে ৷ সুন্দর করে কেটে দিন ছোট্ট নখগুলো ৷ শিশু ঘুমিয়ে গেলেই কাটুন তাহলে নড়াচড়ার বা কেটে যাবার ভয় থাকবে না ৷ আর জেগে থাকা অবস্থায় কাটতে চাইলে কারো সাহায্য নিন ৷ তবে খুব বেশি চেপে ধরবেন না ৷ সাধারণ বেবি নেইলকাটার বা কাঁচির মত বেবি নেইলকাটার যেটাই ব্যবহার করুন না কেন ব্যবহারের আগে তা জীবাণুনাশক মেশানো পানিতে একবার ধুয়ে নিন ৷  বাচ্চাদের নখ সাধারণত নরমই থাকে তবে শক্ত মনে হলে গোসলের পর নখ কাটুন ৷

শিশুর চোখের যত্ন :

বাচ্চার চোখের ময়লা পরিষ্কার করতে ভুলেও খালি হাতে খুটতে যাবেন না ।  কুসুম গরম পানিতে নরম কাপড়ের টুকরো চুবিয়ে নিন ৷ হালকা করে চেপে পানি ঝরিয়ে মুছে নিন বাচ্চার চোখ ৷ অনেক সময় অসাবধানে বাচ্চার চোখে বুকের দুধ যেতে পারে ৷ চোখে বুকের দুধ ঢুকে গেলে বাচ্চার চোখে প্রদাহ হতে পারে ৷ তাই সতর্ক থাকুন ৷

কিছু কিছু শিশুর চোখ থেকে পানি পড়তে থাকে । নরম কাপড়ে বারবার মুছে নিন । এ সমস্যা এক দুই মাস পর ঠিক হয়ে যায় । বেশি সমস্যা মনে হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন ।

নবজাতকের জিহ্বা পরিস্কার রাখুন : দুধ খাবার কারনে শিশুর জিহ্বায় সাদা আস্তর পড়তে দেখা যায় ৷ পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড় ব্যবহার করে মুছে দিন আপনার ছোট্ট সোনাবাবুর জিভ ৷

বাচ্চার কান পরিষ্কার রাখা :

কানের ভেতরে কটনবাডস দিয়ে পরিষ্কার করতে যাবেন না ৷ কানের পর্দায় আঘাত লাগতে পারে ৷ এছাড়া কানের ভেতরে কিছু লোম থাকে যা বাইরের ময়লাকে ঠেলে দেয় ৷ কটনবাডের আঘাত থেকে এদের রক্ষা করা জরুরি ৷ পরিস্কার রাখুন কানের উপরিভাগ ৷ কটনবল বা নরম কাপড়ে মুছে দিন ৷

নাকের যত্ন :

কানের মত নাকেও কটনবাডস না দিয়ে নরম সুতি কাপড়ে কোনা পেঁচিয়ে পরিষ্কার করে নিন ৷ এতে শিশুর আঘাত পাবার সম্ভাবনা থাকবে না ৷ নাকে সর্দি বা ময়লা জমে বন্ধ হয়ে থাকলে শিশু মুখ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাস নেয় এবং দুধ টানতে চায় না । সুতরাং খেয়াল রাখুন এবং পরিস্কার রাখুন ।

নবজাতকের পোষাক :

এ সময় শিশুর প্রজনন অঙ্গ বা জেনিটাল অনেক বেশি নরম কোমল থাকে ৷ শিশুকে পোষাক পরানোর সময় এবং ডায়াপার বাছতে গিয়ে খেয়াল রাখুন তা আরামদায়ক এবং উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন কি না ৷

ছেলেশিশু ও মেয়েশিশুর জেনিটাল এর যত্ন ও পরিচ্ছন্নতায় পার্থক্য রয়েছে :

মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে তার যোনিপথের বাইরে ফোলা ফোলা ভাব ও লালচে থাকা স্বাভাবিক ৷ ভেজা নরম পরিষ্কার কাপড় দিয়ে নিয়মিত পরিষ্কার করুন ৷ সামান্য বেবি সোপ ব্যবহার করুন ৷ মুছুন সামনে থেকে পেছনে( front to back)৷ প্রতিবার ডায়াপার পাল্টানোর পর বা পায়খানার পর এভাবে মুছে সামান্য বেবি অয়েল ব্যবহার করতে পারেন ৷ মুছতে পারেন ওয়াইপস দিয়েও ৷ ব্যবহৃত ওয়াইপস দ্রুত ফেলে দিন ৷

ছেলে শিশুর জননাঙ্গের ব্যাপারেও যত্নশীল হোন ৷ পেনিসের মাথায় চামড়ার নিচে ময়লা জমে যায় ৷ পরিষ্কার করুন  ভেজা নরম কাপড়ে। সামান্য বেবি সোপ লাগিয়ে মুছে নিয়ে পেট্রোলিয়াম জেলি বা বেবি অয়েল লাগিয়ে নিন ৷ তাহলে ডায়াপার বা কাপড়ের ঘষায় ব্যথা পাবে না ৷ এছাড়া আপনি ওয়াইপস (wipes) ব্যবহার করতে পারেন ৷

ডায়াপার পরানোর সঠিক নিয়ম :

ডায়াপার পরানোর আগে যদি ঐ জায়গাতে বেবি অয়েল মাখিয়ে নেন তাহলে ডায়াপারের ঘষা থেকে ত্বক সুরক্ষিত থাকবে ৷ অনেকে ডায়াপার পরাবার আগে পাউডার ব্যবহার করেন ৷ কিন্তু পাউডার ব্যবহারে শিশুর ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় ৷ ডায়াপারে র‍্যাশ হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে ডায়াপার র‍্যাশের ওষুধ ব্যবহার করুন ৷ তখন তেল ব্যবহার করবেন না ৷

ডায়াপার লাইন খেয়াল করুন এবং পাল্টে দিন প্রয়োজনে ৷ ব্যবহৃত ডায়াপার প্যাচিয়ে প্যাকেটমত করে ফেলুন এবং দ্রুত ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন  ৷বাচ্চার জন্য সবসময়ই উচ্চ শোষণ ক্ষমতা সম্পন্ন ডায়াপার ব্যবহার করবেন।

শিশুকে গোসল করানো :

প্রথমবার শিশুর গোসল দেয়াটা অন্য এক অভিজ্ঞতা ৷ এত ছোট একটা শরীর যাকে ঠিকমত ধরাই মুশকিল ভাবছেন তাকে গোসল দেবেন কিভাবে?

নাভি না শুকানো পর্যন্ত ডাক্তাররা সাধারণত শিশুর গোসল দিতে বারণ করে থাকেন ৷ ততদিন পর্যন্ত আপনি বরং শিশুর গা মুছে দিন ৷ দেখে নিন যা যা লাগবে ৷

(১) তোয়ালে

(২) নরম কাপড় ( ভেজানোর জন্য)

(৩) নরম কাপড়( গা মোছার জন্য)

(৪) পরিষ্কার পোষাক

একটা সমতল জায়গায় তোয়ালে পেতে শিশুকে শোয়ান ৷ প্রথমে নরম কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে চিপে নিয়ে শিশুর মাথা মুছে দিন ৷ সাথে সাথে আবার শুকনো কাপড় দিয়ে মাথা মুছে দিন ৷ মাথা ভেজা থাকলে ঠান্ডা লেগে যেত পারে ৷ এরপর গলা বুক ও হাত মুছুন ৷


তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment