গান বাজিয়ে গালিগালাজ করতে করতে আল নুর মসজিদে হামলা!

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • মার্চ ১৫, ২০১৯

নিউজিল্যান্ডের দুটি মসজিদে বন্দুকধারী সন্ত্রাসীর হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া লোকরা ওই ঘটনার ভয়াবহতার বর্ণনা দিয়েছেন। হামলায় নিহত হয়েছে ৪৯ জন। যার বাঁচতে পেরেছেন তারা সৌভাগ্যবান। বেঁচে ফেরা মানুষরা বর্ণনা দিয়েছে ভয়াবহ ওই হত্যাকাণ্ডের। ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের বাইরে সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে খালেদ আল-নোবানি নামের ওই প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলার সময় সে গালিগালাজ করছিল, গান বাজাচ্ছিল এবং কয়েকজন বন্ধুকেও ফোন করেছিল।

তিনি জানান, গুলিতে তার এক বন্ধু মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং তার তিন সন্তান সেখান থেকে পালিয়ে যায়। নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নোবানির বর্ণানুযায়ী, দুটি বন্দুক নিয়ে আল নুর মসজিদে প্রবেশ করে সবাইকে গুলি করতে শুরু করে হামলাকারী।
তিনি বলেন, ওই সন্ত্রাসী সেখানে সম্ভবত দুই মিনিট দাঁড়িয়েছিল। তারপর সে শিশু, বৃদ্ধসহ সবাইকেই গুলি করতে শুরু করে। প্রথমে সে মসজিদের মূল ফটকে গুলি চালায়। পরে করিডোরে থাকা দু'জনকে এবং তারপর সবাইকে। আমি মসজিদের একটি দরজা থেকে বেরিয়ে গিয়ে মূল ফটকটা ভেঙে বন্ধুদের সহায়তায় আমার বাচ্চাদেরকে নিরাপদে সরিয়ে নিই।

নোবানি আরো জানান, হামলাকারীর কাছ থেকে একজন বন্দুক ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেছিল। বন্দুক কেড়ে নিতে একজন তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। সে সরাসরি তাকে গুলি করে দেয়। এই ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছেন আল-নোবানির এক বন্ধু এবং তার পাঁচ বছরের মেয়ে। তবে, পুলিশের ভূমিকায় কিছুটা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন আল-নোবানি। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, পুলিশ আসতে ২০ মিনিট সময় নিয়েছে। অথচ আমরা শহরের একেবারে মাঝখানে ছিলাম।’’ পথে কোনও ট্র্যাফিক জটিলতা না থাকায় পুলিশ আসতে সর্বোচ্চ দু'মিনিট নিতে পারত বলে মনে করেন তিনি।

এই ঘটনায় ইতোমধ্যে তার দুই বন্ধু মারা গেছেন। নিহত ওই সিরীয় শরণার্থীর পরিবারে রয়েছেন এক স্ত্রী এবং চার সন্তান। এছাড়া, হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ১০জন ‘কাছের বন্ধু’।পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার জুম্মার নামাজে অংশ নেয়া মুসল্লিদের ওপর হামলা চালানো হয়। মুসজিদে ঢুকে এলোপাতাড়ি গুলি করে বেশ কয়েকজনকে হত্যা করা হয়। হামলা চালানোর সময় সামাজিক মাধ্যমে লাইভে ছিলেন ওই হামলাকারী। ১৭ মিনিট ধরে ওই হামলার লাইভ ভিডিও প্রচারিত হয়। ২৮ বছর বয়সী অস্ট্রেলিয়ান-বংশোদ্ভূত ওই হামলাকারী নিজেকে সাধারণ শ্বেতাঙ্গ নাগরিক বলে উল্লেখ করেছেন।

নিজের লেখা ওই ম্যানোফেস্টোতে ব্রেনটন জানিয়েছেন, তিনি একটি নিম্নবিত্ত শ্রমজীবী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি নিজের পরিবারের লোকজনের ভবিষ্যত নিশ্চিতের জন্য পদক্ষেপ গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, ইউরোপের মাটিতে সরাসরি অভিবাসীদের সংখ্যা কমাতেই তিনি এই হামলা চালিয়েছেন। এই ন্যাক্কারজনক হামলা চালিয়ে তিনি অভিবাসী ও ইসলামপন্থি জঙ্গিদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, এই হামলা চালানো হয়েছে তাদের এটা দেখানোর জন্য যে, আমাদের দেশ কখনওই তাদের হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত একজন শ্বেতাঙ্গও বেঁচে আছেন ততক্ষণ আমাদের দেশ আমাদেরই। তারা কখনোই আমাদের ভূমি দখল করতে পারবে না। তারা কখনোই আমাদের লোকজনের জায়গা দখল করতে পারবে না। দু'বছর ধরেই হামলা চালানোর পরিকল্পনা করে আসছেন বলে জানিয়েছেন ব্রেনটন। তিনমাস আগেই ক্রাইস্টচার্চে হামলার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

তবে নিউজিল্যান্ডই হামলার মূল লক্ষ্য ছিল না বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তার ওই বক্তব্যে তিনি ইসলামপন্থি জঙ্গি ও অভিবাসীদের 'হামলাকারী' উল্লেখ বলেন, নিউজিল্যান্ডে হামলার মাধ্যমে তিনি সবার মনোযোগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন। তিনি বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত এই 'হামলাকারী'রা আমাদের দেশে থাকবে পৃথিবীর কোথাও আমাদের জন্য নিরাপদ হবে না। এমনকি বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলও না। শ্বেতাঙ্গদের জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং শ্বেতাঙ্গ শিশুদের ভবিষ্যত নিশ্চিত করা উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বিদেশি 'হামলাকারী'দের হাতে হাজার হাজার মানুষের মৃত্যুর জন্য প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন ব্রেনটন। ২০১৭ সালের সুইডেনের স্টকহোমে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ১১ বছর বয়সী শিশু এব্বা একেরলান্ডের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিতেও এই হামলা চালানো হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। উজবেকিস্তানের এক অভিবাসী ওই হামলা চালিয়েছিল।

সূত্র : বিডিমর্নিং 
 

Leave a Comment