"একটু জোরে হাঁচি বা কাশি দিলেই আমার প্রসাব বের হয়ে আসে !"

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • অক্টোবর ৩০, ২০১৭

প্রশ্ন :  আমার বয়স ৩৫ বছর। গত কয়েকমাস ধরে আমি একটু জোরে হাঁচি বা কাশি দিলেই আমার প্রসাব বের হয়ে আসে। প্রসাব পেলেই আমি চেষ্টা করি তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে যেতে। তারপরেও মাঝে মাঝে আমার কাপড় ভিজে যায়। সমস্যাটা আমার জন্য বিব্রতকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার জন্য আমি এখন বাহিরে বা কোথাও বেড়াতে যেতে সাহস পাই না। এই সমস্যাটা কেন হচ্ছে বা এর সমাধান কি ? জানালে খুব উপকৃত হবো।

উত্তর : সুন্দর করে অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরার জন্য ধন্যবাদ।

এই সমস্যাটা কেন হয় ?

নরমাল ডেলিভারিতে এই সমস্যা হতে পারে।  তবে সিজারিয়ান ডেলিভারিতে এমনটা হবে না , এটা ভাবার কোনো কারণ নেই। যার কোনো সন্তান নেই তারও এমন সমস্যা হতে পারে। ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স দুই রকম। আর্জ ইনকন্টিনেন্স আর স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্স। আর্জ ইনকন্টিনেন্স থাকলে পেশির দেওয়ালের সক্রিয়তা কমে যায়। তার জন্য প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। স্ট্রেস ইনকন্টিনেন্সে শারীরিক কসরত করলেই প্রস্রাব বেরিয়ে আসে। যেমন, হাসলে কাশলে এমনকি দৌড়ালেও ইউরিন বেরিয়ে আসতে পারে।

চিকিৎসা:

দিনে কতবার আপনাকে টয়লেটে যেতে হচ্ছে বা রাতে কয়বার আপনাকে উঠতে হচ্ছে তার ওপর নির্ভর করে এর চিকিৎসা করা হয়। এর কার্যকরী চিকিৎসা হল মূত্রাশয় বা ব্লাডারের উপযুক্ত ট্রেনিং।

এই সমস্যার প্রাথমিক চিকিৎসা হচ্ছে : দিনে কয়বার আপনি টয়লেটে যাচ্ছেন তা নোট করে রাখুন। কতক্ষন পর্যন্ত আপনি প্রসাব আটকিয়ে রাখতে পারেন সে সময় টুকু নোট করুন।  চেষ্টা করেন বেগ এলেও কিছুক্ষন প্রসাব না করে  থাকতে। আপনি যদি ২০মিনিট আটকিয়ে রাখতে পারেন তাহলে ঠিক ২০মিনিটই আটকিয়ে রাখুন। কাপড় ভিজে গেলেও টয়লেটে যাবেন না। এতে আপনার মনের জোর বাড়বে। আপনি ২-৪ দিনের মধ্যেই ফলাফল পাবেন।  এই প্রাথমিক ধাপের পর ৯০% মহিলারই অন্য কোনো ওষুধের প্রয়োজন হয় না।

অনেকের ক্ষেত্রে এই ধাপে কাজ হয় না।  এই সমস্যায় অনেকের মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। পারিবারিক ও কাজের ক্ষতি হয়। এ সব ক্ষেত্রে যোগাসন, সাইকোথেরাপি এবং হিপনোসিসও ভাল ফল দিতে পারে।

পেলভিক ফ্লোরে পেশির দুর্বলতার জন্য এই সমস্যা হতে পারে। পেশির জোর বাড়ানোর চেষ্টা করেন। একই সঙ্গে চেষ্টা করা হয় মূত্রথলি বা ব্লাডারের সাপোর্ট দেওয়া। এক জন অভিজ্ঞ ফিজিয়োথেরাপিস্টের সাথে যোগাযোগ করুন তিনি আপনাকে পেলভিক ফ্লোরের এক্সারসাইজ শেখাবেন। যে পেশিগুলোর সংকোচন শেখানো হয়, সেগুলি আসলে মূত্র ত্যাগের মাঝখানে প্রয়োজনে মূত্রত্যাগ বন্ধ করতে পারে। অল্প স্বল্প ইউরিন ইনকন্টিনেন্স থাকলে তা সারাতে এই পেলভিক ফ্লোরের পেশির এক্সারসাইজের জুড়ি নেই। যতক্ষণ ব্যায়াম, তত ক্ষণ ভাল থাকবেন। বন্ধ করলেই পেশির টানটান ভাব কম। উপসর্গ আবার ফিরে আসবে।

ব্যায়ামে কাজ না হলে সার্জারির দরকার হয়। একই উদ্দেশ্য সাধন সম্ভব টেনশন ফ্রি ভ্যাজাইনাল টেপ-এ। এতে ভ্যাজাইনা দিয়ে একটি পাতলা টেপ প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয়। তা প্রস্রাবের থলি বা ব্লাডারকে ওপরের দিকে টেনে তোলে। যার ফলে হাঁচলে কাশলে বা কোনও রকম পেটে চাপ পড়লেও প্রস্রাবের  থলির মধ্যে যে প্রেসার আছে, তা প্রস্রাবের রাস্তায় চলে আসতে পারে না। তখন তাকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেয়া হয়। এখন অত্যাধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতিতে কোলোজেন জাতীয় ইনজেকশন দিয়ে ইউরেথ্রার কোষ কলাকে সাপোর্ট দেওয়া হয়।

ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্স থাকলে কী করবেন?

  • সারা দিনে পানি খাওয়ার পরিমান কমাতে হবে।
  • কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তা কমাতে হবে।
  • মোটা হয়ে যাওয়া ইউরিনারি ইনকন্টিনেন্সের অন্যতম কারণ।

শারীরিক সমস্যা কোনো লজ্জার ব্যাপার না। আমরা অনেকেই লজ্জার জন্য চিকিৎসা করতে চাই না।  তাতে সমস্যা বাড়ে বৈকি কমে না।  যেকোনো শারীরিক সমস্যায় ডাক্তারের  শরণাপন্ন হওয়ায় উত্তম। তাতেই সমস্যা মিটবে।

আপনার সুস্থতা কামনা করছি।  ভালো থাকবেন সবসময়।

Leave a Comment