গর্ভাবস্থায় কিছু অসুবিধা যা নিয়ে ভয় পাবার নেই !

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ১৫, ২০১৭

গর্ভকালীন মূহুর্তটি একজন নারীর জন্য যেমন আনন্দের, অন্য দিকে বেশ দুঃশ্চিন্তা ও মানসিক চাপেরও।  এর প্রধান কারণ হচ্ছে, প্রায় সব নারীই গর্ভাবস্থায় কিছু না কিছু সাধারণ অসুস্থতা বা অস্বস্তিকর অবস্থার ( pregnancy discomfort ) মুখোমুখি হন। এর সঠিক কারণ না জানার কারণে তারা  খুবই চিন্তিত থাকেন,  যা তাদের মারাত্মক ঝুঁকির মাঝে ফেলে দিতে পারে। একটু সচেতন থাকলেই এসব এড়ানো যেতে পারে।
 
গর্ভাবস্থায় ৫টি অসুবিধা যা নিয়ে ভয় পাবার কিছু নেই, এই বিষয়টা নিয়ে আজকে আলোচনা করা হবে। 

পিঠে ব্যাথা :

গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের দেহের ওজন বেড়ে যায়, এই অতিরিক্ত ওজন মেরুদন্ডকে সামনের দিকে চাপ দিতে থাকে এবং দেহের ভারসাম্য বজায় রাখতে সমস্যা তৈরি করে।

পরামর্শ  :

  •  পিঠে ব্যথা হলে  দুঃশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। গর্ভকালীন সময়ে এরকম ব্যথা হতে পারে।
  • আপনি আপনার দেহের  অংগভঙ্গি ঠিক রাখার অভ্যাস করুন। চেষ্টা করুন দেহের ভারসাম্য বজায় রেখে চলতে।
  •  যেকোনো ধরণের জিনিস হাতে উঠানোর সময় সাবধানতা অবলম্বন করুন। মেঝে থেকে কোন জিনিস তুলতে হলে হাঁটু বাঁকা করুন, কোমর নয়।
  • উঁচু হিলের জুতো একেবারে এড়িয়ে চলুন। ফ্লাট জুতো পড়ুন, যা আরামদায়ক ও আপনার জন্য সেসময় নিরাপদ।
  •  দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন না, কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হলে অল্প করে বসে বিশ্রাম নেবেন।
  •  বিভিন্ন ধরনের হালকা ব্যয়াম করুন, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে।
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন।
  •  চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ধরণের ওষুধ পরিহার করুন। কারণ এসব ওষুধ উপকার না করে উল্টো আপনার ক্ষতির কারণ হতে পারে।

স্তনের আকৃতির পরিবর্তন :

গর্ভাবস্থায় নারীদের স্তন দুধ উৎপাদনের জন্য তৈরি হয় । এসময় দুগ্ধ গ্রন্থি বা মিল্ক গ্ল্যান্ড মোটা হয়ে যায় এবং ফ্যাটি টিসু বা চর্বি জমে স্তনের আকার বড় হতে শুরু করে। স্তনের স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাবার কারণে রক্ত কণিকাগুলো বড় হয়ে যায় এবং নীলাভ রঙের শিরাগুলো স্তনের ত্বকে দেখা যেতে পারে। এছাড়া স্তনের নিপল ও এর চারপাশের গোল কালো জায়গাটুকুতে ( যাকে আরিওলা বলে) কালো দাগ ও ছোট ছোট গুটির মত কিছু জিনিস দেখা যেতে পারে। গর্ভকালীন সময়ের শেষ ৩ মাসে অনেক নারী তাদের স্তনের নিপল থেকে তরল জাতীয় পদার্থ নিঃসরিত হতে দেখতে পারেন, যাকে শাল দুধ বলা হয়। তবে ঐ সময়ের মাঝে শাল দুধ উৎপন্ন না হলেও দুঃশ্চিন্তার কিছু নেই।

পরামর্শ :

  • আপনার জন্য আরামদায়ক ব্রা ব্যবহার করুন।
  •  ডিজপোজেবল ব্রেস্ট প্যাড ব্যবহার করতে পারেন।
  • স্তনের নিপলের অংশটুকুতে সাবান ব্যবহার করবেন না, কারণ সাবান ঐ অংশের ত্বক শুষ্ক করে দেয়। কুসুম গরম পানি ব্যবহার করতে পারেন ঐ স্থানটি পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।

কোষ্ঠকাঠিন্য :

কোষ্ঠকাঠিন্য আরেকটি  বিষয় যা নিয়ে গর্ভবতী মায়েরা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হন। কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার কারণ হচ্ছে গর্ভাবস্থায় দেহের হরমোনের প্রভাব। আরেকটা কারণ হচ্ছে এসময় দেহের পরিপাকতন্ত্র অর্থাৎ যা দিয়ে খাবার পরিপাক হয়, সেটা নিজের স্বাভাবিক অবস্থান থেকে সরে যায়। কারণ গর্ভাবস্থায় নারীদের জরায়ু বড় হতে থাকে। 

পরামর্শ :

  •  প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার বিশেষ করে পানি পান করুন।
  • প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটুন।
  • অল্প করে কিন্ত কিছুক্ষণ পর পর খাবার খাবেন এবং ভালোভাবে চিবিয়ে খাবার অভ্যাস করুন।
  • তাজা ফল ও উচ্চ আঁশ সমৃদ্ধ খাবার খান।
  • আয়রন সাপ্লিমেন্ট খেতে হলে জুস বা ফলের রসের সাথে খান, নয়তো কোষ্ঠকাঠিন্য বেড়ে যেতে পারে।
  • ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া

ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া:

গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ও শেষ ৩ মাস এ সমস্যাটি দেখা যায়। এসময় জরায়ু বড় হয়ে যাওয়াতে মুত্রথলিতে চাপ পড়ে এবং  প্রস্রাবও  ঘন ঘন হয়। 

পরামর্শ :

এ সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে  Kegel exercise করতে পারেন। যোনির চারপাশের মাংসপেশীতে চাপ দিন ও কয়েক সেকেন্ড পরে ছেড়ে দিন। এভাবে অন্তত ১০ বার করুন। 

অনিদ্রা :

গর্ভাবস্থার শুরু দিকে শরীরের এ নতুন অবস্থার সাথে মানিয়ে নিতে কিছু সমস্যা হয়, ফলে অনিদ্রার বিশাল সমস্যা দেখা দিতে পারে। 

পরামর্শ :

  • নিয়মিত ব্যায়াম করুন।
  •  ঘুমুতে যাবার আগে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করুন।
  • চারপাশে অনেক শব্দ বা আলো আছে-এরকম জায়গায় ঘুমাবেন না।
  •  ঘুমানোর জন্য নিজের জন্য সুবিধাজনক পজিশন নিজেই বেছে নিন।
  • ঘুমানোর আগে মন সতেজ রাখে এরকম বই পড়তে পারেন।
  •  চা-কফি খাবেন না। দরকার হলে শরীরে ম্যাসাজ নিন।
  • ঘুমের জন্য নির্ধারিত রুটিন তৈরি করুন ও মেনে চলুন।


বমি বমি ভাব/ বমি হওয়া :

সাধারণত গর্ভকালীন সময়ের প্রথম ৩ মাসে এ সমস্যাটি হয় ও পরে আর থাকে না। এটাকে "মর্নিং সিকনেস" বলা হলেও দিনের যেকোনো সময়ে বমির উদ্রেক ঘটতে পারে। 

পরামর্শ :

  • সকালে ঘুম থেকে উঠে বমি বমি ভাব হলে রুটি বা ক্র্যাকার খেতে পারেন। এসব খাবার রাতে ঘুমুতে যাবার আগেই বিছানার পাশে রাখতে পারেন।
  • ঘুম ভেঙ্গে হুট করেই বিছানা ছাড়বেন না। ধীরে সুস্থে উঠুন।
  •  সারাদিনই অল্প অল্প করে কিন্তু স্বাস্থ্যকর খাবার খান। তেল বা অধিক মশলাযুক্ত খাবার পরিহার করুন।
  • আদা, পুদিনা দিয়ে চা খেতে পারেন। তবে সব ভেষজ উদ্ভিত এসময়ের জন্য উপযোগী নয় তাই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
  • ঘরের দরজা জানালা খোলা রাখুন যেন বাইরের তাজা বাতাস ঘরে প্রবেশ করতে পারে।
  •  বমিভাব হলে ঠান্ডা বরফ মুখে নিয়ে চুষতে পারেন, উপকার পাবে। তবে ঠান্ডার সমস্যা থাকলে এটা এড়িয়ে যান।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment