অটিজম নিয়ে জানা অজানা অনেক কথা 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • নভেম্বর ২২, ২০১৭

“অটিজম” বা “অটিস্টিক” শব্দটার সাথে আমরা সবাই কম বেশি পরিচিত। অটিজম নিয়ে আমাদের জানাটা কতটুকু স্বচ্ছ সে ব্যাপারে কিন্ত যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে। গ্রামে অটিজম শিশু বা ব্যক্তিদের মনে করা হয় জিন বা ভুতের আছরের শিকার। অনেকে তাদের পাগলও মনে করেন। 

শুধু গ্রামে না, শহরের অনেক জায়গায়ও এই চিন্তা ধারণা বিদ্যমান। অনেক ডাক্তারও এ বিষয় নিয়ে তাদের জ্ঞানকে অপ্রতুল মনে করেন। অনেক পরিবার তখনই অটিজম সম্পর্কে জানতে পেরেছে যখন তাদের পরিবারের কোন সদস্য অটিজম সমস্যায় পড়েছে। অটিজম একটি সমস্যা, মনবিকাশগত সমস্যা কিন্ত কোনো রোগ নয়।  অটিজম কোনো রোগ নয়। 

অটিজম (Autism) একটি ছোট শব্দ কিন্তু এর গভীরতা ব্যাপক। বর্তমানে অনেকেই এ শব্দের সাথে পরিচিত হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। ফুটফুটে এ সকল শিশুদের দেখে বোঝার উপায় নেই যে, কি তাদের সমস্যা! কারণ অটিস্টিক শিশুদের চেহারা বা অবয়ব স্বাভাবিক শিশুদের মতো এবং সাধারণত তাদের শারীরিক কোন সমস্যা থাকে না। অটিজম যার বাংলা অর্থ করলে দাঁড়ায় নিজের মধ্যে মগ্ন ব্যক্তি। অর্থাৎ যে ব্যক্তি একা একা নিজের মনে, নিজের জগতে বিচরণ করে কারও সাথে কথা বলে না, কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দেয় না।

অটিজম হচ্ছে স্নায়ু সংক্রান্ত একাধিক বিকাশজনিত জটিলতা যা শিশুর ১৮ মাস থেকে ৩ বছর বয়সের মধ্যে পরিলক্ষিত হয়। যার কারণে শিশুর স্নায়ু সংক্রান্ত ক্রিয়া ও শক্তির সুষ্ঠু বিকাশ ব্যাহত হয়। সহজ ভাবে বললে বলা যায় যে অটিজম একটি মানসিক বিকাশগত সমস্যা যা সাধারনত জন্মের পর প্রথম তিন বছরের মধ্যে হয়। এই সমস্যার জন্য সামাজিক বিকাশ ও সামাজিক যোগাযোগ যেমন কথা বলা ভাব বিনিময় করার ক্ষমতা বৃদ্ধিতে বাধাপ্রাপ্ত হয়। মস্তিষ্কের স্নায়ুবিক সমস্যার দরুন মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা ব্যাহত হওয়াকে অটিজম বলা যায়।

অটিজম বংশগত  বা মানসিক রোগ নয়, এটা স্নায়ুগত বা মানসিক  সমস্যা। এ সমস্যাকে ইংরেজিতে  নিউরো ডেভেলপমেন্টাল ডিজঅর্ডার বলে। অটিজমকে সাধারণভাবে শিশুর মনোবিকাশগত জটিলতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অটিজমের লক্ষণগুলো একদম শৈশব থেকেই বুঝা যায়। সাধারণত তিন বছর থেকে প্রকাশ পেতে থাকে। অটিজমে আক্রান্তরা সামাজিক আচরণে দুর্বল হয়, পারস্পরিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে কম সক্ষম হয়। মানসিক সীমাবদ্ধতা ও একই কাজ বারবার করার প্রবণতা দেখা যায়। 

এই রোগে আক্রান্ত শিশু কারো সাথেই সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারে না। এদের নাম ধরে ডাকলেও সাড়া দেয় না। এরা অনেকেই আকার ইঙ্গিতে কথা বলতে পছন্দ করে।  এ ধরণের শিশু আপন মনে থাকতে পছন্দ করে। নিজের মনের ইচ্ছায় চলাফেরা করতে পছন্দ করে । যখন যা করতে ইচ্ছে হয় তা করতে না পারলে এদের খিঁচুনি ভাব হয়। এরা কারো চোখের দিকে তাকাতে পারে না । কারো সাথে নিজের ব্যবহারের জিনিস পত্র শেয়ার করতে চায় না।  কারো দিকে তাকিয়ে হাসে না কিংবা আদর করলেও ততটা সাড়া দেয় না। অনেকে আবার আদরও পছন্দ করে না। সাধারণভাবে অটিষ্টিক শিশুরা একই কথা বারবার বলে এবং একই কাজ বার বার করতে পছন্দ করে। তবে অটিস্টিক শিশুরা সব একই রকম আচরন করবে টা ঠিক নয়।

অটিজম বিষয়টি দিন দিন একটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেননা অটিজম সারাবিশ্বে দিন দিন বিস্তার লাভ করছে। অটিস্টিকের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। একটা জরিপে দেখা গেছে বাংলাদেশে ১৬-১৭ হাজারেরও বেশি অটিস্টিক শিশু রয়েছে । তবে ডোর টু ডোর হিসেব করলে এর সংখ্যা আরও বেশি। বোঝাই যাচ্ছে সারাবিশ্বসহ বাংলাদেশেও এর হার দিন দিন বেড়েই চলছে। অথচ অটিজম চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও আমরা অনেক পিছিয়ে।
 
তথ্য এবং ছবি : গুগল 
 


 

Leave a Comment