বাচ্চা নেওয়ার আগে মা‍‍`কে যে বিষয়গুলো জানতে হবে 

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ২৩, ২০১৭

আমাদের জীবনের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো পরিবার। একজন সন্তান ছাড়া স্বামী - স্ত্রীর সংসার কখনোই সম্পূর্ণ হয় না। যেকোনো দম্পতি সংসার শুরু করার পর থেকেই  সন্তানের অভাব অনুভব করেন। একজন সুস্থ এবং সবল বাচ্চার স্বপ্ন দেখে সব দম্পতিরাই। স্বপ্নের সূচনা যদি ভালো থাকে তখন স্বপ্নটি পূরণ হবার সম্ভাবনাও বেশী থাকে।

একটি সার্থক গর্ভধারণ কিছু প্লানের উপর নির্ভর করে। যদি গর্ভধারণের আগের প্লান সম্পর্কে প্রাথমিক জ্ঞান থাকে তাহলে সব মহিলারাই উপকৃত হতে পারেন। 

মানসিক প্রস্তুতি:

যখনই আপনি সন্তান নেওয়ার কথা চিন্তা করবেন, সবার প্রথমে মানসিকভাবে প্রস্তুতি নিবেন। সন্তানের দেখভাল করার মত লোকজন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ সময় আছে কিনা? ক্যারিয়ারের গঠনের মাঝে সন্তান নিলে সামলাতে পারবেন কিনা? স্বামী - স্ত্রী দুজনের মাঝে ভালো বোঝাপড়া আছে কিনা? মানসিকভাবে বর্তমানে আপনি বিপর্যস্ত কিনা? এই প্রশ্নগুলো নিজেকে করুন। যদি আপনার উত্তর হাঁ হয় এথলে আপনি মানসিকভাবে প্রস্তুত। যদি উত্তর না হয় তাহলে গর্ভধারণের চেষ্টা করার আগে আরেকবার ভাবুন। 

আর্থিক প্রস্তুতি :

আমরা সবাই কম-বেশি জানি অর্থই সকল অনর্থের মূল। বাস্তব সত্যি এটাই যে অর্থ ছাড়া জীবন অচল। আপনার পরিবারে কোন নতুন অতিথিকে আনতে চাইলে তার ভবিষ্যতটা যতটা পারেন সুরক্ষিত করার চেষ্টা করবেন। কেননা সন্তান পালন বর্তমান যুগে অনেক ব্যয়সাপেক্ষ একটি ব্যাপার। তাই গর্ভধারণ করার ইচ্ছা থাকলে আগে অর্থনৈতিক দিকটাও ভেবে দেখবেন। একটা প্লানও করে নিতে পারেন। একটা ফিক্সড ডিপোজিট অথবা ইন্সুরেন্স করিয়ে নিতে পারেন গর্ভধারণের আগে। এতে আপনার অনাগত সন্তানের ভবিষ্যত সিকিউর থাকবে। এছাড়া একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমানো উচিত্‍ গর্ভধারণের চেষ্টাকালীন সময়ে। কেননা গর্ভাবস্থায়,বাচ্চা প্রসবকালীন ও বাচ্চা জন্মদানের পরবর্তী অবস্থায় অনেক বেশি অর্থের দরকার হয়।

শারীরিক প্রস্তুতি:

মেডিকেল চেকআপ : আপনি কি খুব শ্রীঘ্রই বাচ্চা নিতে চাচ্ছেন?যদি বাচ্চা নিতে চান তবে গর্ভধারণের জন্য একটা বিশেষ সময়ের পরিকল্পনা করুন। এরপর মেডিকেল চেকআপ করুন। এতে করে আপনি জানতে পারবেন যে,বাচ্চা নেয়ার জন্য আপনার শরীর প্রস্তুত কিনা? কেনোনা একটি স্বাস্থ্যবান বাচ্চা জন্ম দেওয়া একটি সুস্থ ও স্বাস্থ্যবান মায়ের উপর নির্ভর করে।এজন্য প্রি কন্সেপসন,প্রি প্রেগনেন্সি চেকআপ বা গর্ভধারণ করার আগের চেকআপটা করে নেওয়া উচিত্‍। কিছু মেডিকেল কন্ডিশন ও জীবনযাত্রার মান গর্ভধারণকে প্রভাবিত করে, এমনকি গর্ভধারণ করার ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করে।

জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি:

যদি আপনি সন্তানধারণের চেষ্টা করেন এবং আগে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকেন তাহলে আপনার চিকিত্‍সককে বলুন কবে নাগাদ তা বন্ধ করবেন? সাধারণত গর্ভধারণ করার চেষ্টা করার কিছু মাস আগে থেকেই জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিটি বন্ধ করতে বলেন ডাক্তাররা। আপনার কিছু স্বাভাবিক মাসিক হওয়া দরকার গর্ভধারণের আগে।এতে করে গর্ভধারণ পরবর্তী বাচ্চা প্রসবের সময় নির্ধারণ করতে সুবিধা হয়।

স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরীক্ষা করুন :

আপনার কোন রোগ থাকলে তা সারিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবেন। এমনকি আপনার স্বামীর কোন অসুখ থাকলেও তার চিকিত্‍সা করাতে হবে। এরপর ডাক্তার আপনার শারীরিক কিছু পরীক্ষা যেমন ,ওজন ,রক্তচাপ ,ও আপনার নিতম্ব স্বাস্থ্যবান কিনা তা পরীক্ষা করবেন। কেননা খুব ছোট ও চাপা নিতম্বে বাচ্চা জন্মের সময় জটিলতা দেখা দেয়। তাই আগে থেকেই পরীক্ষা করা থাকলে প্রসবকালে আপনার ডাক্তার সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিবেন।

আপনি সন্তান ধারণ করতে পারবেন কিনা? মানে বন্ধ্যা কি না তা পরীক্ষা করেন। অনেক কারণে একটি দম্পতি বন্ধ্যা হতে পারে। মহিলা ,পুরুষ উভয়ই এর জন্য দায়ী হতে পারে। এজন্য যথাযথ পরীক্ষা করে সমস্যা ধরা পড়লে, যার সমস্যা তার চিকিত্‍সা করাতে হবে।

প্যাপ টেস্ট :

জরায়ুমুখে কোন সমস্যা আছে কিনা তা জানার জন্য প্যাপ টেস্ট করাবেন। কেনোনা একটি সার্থক প্রসব সুস্থ জরায়ু ও গর্ভাশয়ের উপর নির্ভর করে। এছাড়াও ডায়াবেটিস,উচ্চরক্তচাপ আছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হবে। কারণ এইসব অসুখ মারাত্মক সমস্যা করে গর্ভাকালীন ও পরবর্তী সময়ে। তাই গর্ভধারণের আগেই এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করুন ও ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলুন। এছাড়া HIV ও herpes এই টেস্ট গুলো করা ভালো কেনোনা এগুলো থাকলে গর্ভধারণ করা ঝুকিপূর্ণ।

আপনি যদি দ্বিতীয় বারের মত মা হতে যান এবং আপনার যদি আগের গর্ভকালীন অবস্থায় নিচের সমস্যাগুলো হয়ে থাকে যেমন -

(১) বাচ্চা নষ্ট হয়ে যাওয়া
(২) জন্মের সময় বাচ্চা মরে যাওয়া
(৩) অকালে বাচ্চা হওয়া
(৪) বাচ্চার শারিরীক গঠনে সমস্যা থাকা

এইসব হয়ে থাকলে পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার সময় আপনাকে আরো অনেক বেশি সচেতন হতে হবে ও চিকিত্‍সকের পরামর্শমত গর্ভধারণ করতে হবে। এছাড়া আরো কিছু  বিষয় রয়েছে সেগুলোর দিকেও নজর দিন। 

(১) এজমা , ডায়াবেটিস, ডিপ্রেসনের ও অন্যান্য কোন ওসুধ খাওয়ার অভ্যাস থাকলে গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময়ই এগুলো খাওয়া থেকে বিরত থাকুন এবং চিকিত্‍সকের পরামর্শ নিন। কেননা এতে সন্তান বিকলাঙ্গ হবার চান্স থাকে।

(২) রুবেলা,চিকেন পক্স এর টিকা আগেই নিয়ে রাখুন। এছাড়া ১৫ বছরের পর সব মেয়েলি টিটি টিকা নেওয়া উচিত্‍। যে কোন ভ্যাক্সিন নেয়ার কমপক্ষে ১ মাস অপেক্ষা
করুন গর্ভধারণের চেষ্টা করার জন্য।

(৩) দাঁতের যত্ন নিন। দাঁতের সমস্যা হলে একজন ডেন্টিস্ট কে দেখান। কারণ এটা প্রমাণিত যে দাঁতের মাড়ীতে কোন অসুখ থাকলে কমওজনের ও অকালে জন্ম হয় শিশুর।

(৪) আপনার যদি ২৮ দিন অন্তর রেগুলার পিরিয়ড হয় তাহলে পিরিয়ড হওয়ার ১০ তম দিন থেকে ১৮ তম দিনে গর্ভধারণের চেষ্টা করলে গর্ভবতী হওয়ার সম্ভাবনা বেশী থাকে আর যাদের অনিয়মিত পিরিয়ড হয় তারা তাদের সবচেয় কম সময় যেই পিরিয়ড হয় সেই সময়ের সাথে ১৮ বিয়োগ করে ও সবচেয়ে বেশী সময়ে যে পিরিয়ড হয় তার সাথে ১০ বিয়োগ করে তার ওভুলেশন ডেট গণনা করতে পারে । যেমন কারো যদি ২৬ থেকে ৩১ দিন অন্তর অন্তর পিরিয়ড হয় তাহলে ২৬-১৮=৮ এবং ৩১-১০=২১ অর্থাত্‍ তার পিরিয়ড হবার ৮তম দিন থেকে ২১ তম দিনে গর্ভধারণের চেষ্টা করলে তা সফল হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে ।

আপনার ডাক্তারের কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনি নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন - যেমন :

১. কখন জন্মনিয়ন্ত্রন পদ্ধতি বন্ধ করবেন ?
২. ওভুলেশনের ডেট ক্যালকুলেট করে নিবেন ।
৩. কি কি উপসর্গ দেখে বুঝবেন যে আপনি প্রেগন্যান্ট ।

তথ্য এবং ছবি : গুগল 

Leave a Comment