ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণ এবং চিকিৎসা 

  • তাসফিয়া আমিন
  • সেপ্টেম্বর ১১, ২০১৮

এ বছর ডেঙ্গুর প্রভাব অনেক বেশি। একই পরিবারের ছোটবড় একাধিক সদস্য আক্রান্ত হচ্ছেন ডেঙ্গুতে। ডেঙ্গু একটি ভাইরাল ইনফেকশন। এটা একজন ডেঙ্গু আক্রান্ত মানুষ থেকে আরেকজনে ছড়ায় না কিন্তু এডিস মশা থেকে ছড়ায়। এডিস মশা সাধারণত দিনে কামড়ায় বিশেষ করে ভোর বেলা এবং বিকেলবেলায়।এখনো পর্যন্ত এই অসুখের কোনো টিকা আবিষ্কৃত হয়নি এবং এর নির্দিষ্ট কোনো ওষুধ নাই। তাই ডেঙ্গু জ্বর সম্পর্কে সম্যক ধারণাই কেবল এর থেকে মুক্তি দিতে পারে। বাংলাদেশে জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসে ডেঙ্গু জ্বরের প্রকোপ বেশি দেখা যায়।

ডেঙ্গু রোগের লক্ষণ : সাধারণভাবে, ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্তরা হয় উপসর্গবিহীন (৮0%) অথবা সাধারণ জ্বরের মত সামান্য উপসর্গ। ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হলে চার থেকে দশ দিনের মধ্যে সাধারণত উপসর্গ দেখা যায়, যেমন-

*জ্বর, তাপমাত্রা 105 /106 ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে

*মাথা ব্যথা

*চোখের পিছনে ব্যথা

*মাংস পেশী এবং জয়েন্টে ব্যথা

*বমিভাব এবং বমি

*এই পর্যায়ে ৫০-৮০% উপসর্গে র‍্যাশ বেরোয়। এটা উপসর্গের প্রথম বা দ্বিতীয় দিনে লাল ফুস্কুড়ি হিসাবে দেখা দেয়, অথবা পরে অসুখের মধ্যে (দিন ৪-৭) হামের মত র‍্যাশ দেখা দেয়। কিছু ছোট লাল বিন্দু এই জায়গায় আবির্ভূত হতে পারে যেগুলি ত্বকে চাপ দিলে অদৃশ্য হয় না, যেগুলি দেখা যায় ত্বকে চাপ দিলে এবং এর কারণ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্থ রক্তবাহী নালী।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে 7 থেকে 10 দিনের মধ্যে সকল উপসর্গ কমে যায়। কিন্তু হেমোরেজিক ডেঙ্গু সাধারণ ডেঙ্গুর তুলনায় বেশি মারাত্মক এবং সময়মতো সঠিক চিকিৎসার অভাবে তা রোগীর মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে জ্বরের সাথে সাথে রোগীর শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে রক্ষক্ষরণ হয়। রোগীর জ্বরের সাথে দাঁত ও মাড়ির গোড়া থেকে রক্ত পড়া, নাক দিয়ে বা বমির সাথে রক্ত পড়া, গায়ে রক্ত জমে ছিটা ছিটা দাগ, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। এছাড়া পায়ুপথ দিয়ে রক্তপাত শুরু হতে পারে। আরো মারাত্মক আকার ধারণ করলে এ রোগ থেকে সার্কুলেটরি ফেইলিওর হয়ে আরো নানা জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে।

চিকিৎসা : ডেঙ্গু রোগের কোনো নির্দিষ্ট চিকিৎসা নাই। বেশির ভাগ ডেঙ্গু জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায় এবং অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। এর জন্য প্রয়োজন –

*যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান,বিশ্রাম ও যথেষ্ট পরিমাণ তরল খাবার।

*জ্বর কমানোর জন্য এসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধ সেবন করতে হবে। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে অ্যাসপিরিন বা ক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।

*হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু, যা খুবই কম হয়ে থাকে এবং এটা বেশি ভয়াবহ। রক্তের প্লেটিলেট রেগুলার টেস্ট করতে হবে, এর মাত্রা কমতে থাকলে রোগী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় চলে যায়। এতে মৃত্যুও হতে পারে। জ্বরের সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। জ্বর কমানোর জন্য বারবার গা মোছাতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে। আইভি ফ্লুইড দিতে হবে এবং ব্লাড প্রেসার মনিটর করতে হবে। প্রয়োজনে বেশি রক্তপাত হলে প্লেটিলেট বা ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা দিতে হবে।

Leave a Comment