কিডনী নালীতে পাথর

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • সেপ্টেম্বর ১৭, ২০১৮

কিডনি মানুষের শরীরের পিছন দিকে মেরুদ-ের কাছে সীমের বিচির আকৃতির দুটি অঙ্গ। কিডনির সাথে মূত্রথলির সংযোগকারী নালী রয়েছে যাকে ইউরেটার বা কিডনি নালী বলে। এই কিডনি নালী ২৫ সে. মি.-এর মত লম্বা। এর তিনটি জায়গায় একটু চাপা রয়েছে। প্রথমটি হল কিডনির পেলভিসের সাথে ইউরেটারের সংযোগ স্থল, দ্বিতীয়টি যখন পেলভিক ব্রিজ ক্রস করে এবং তৃতীয়টি যখন মূত্রনালী প্রস্রাবের থলিতে প্রবেশ করে। কিডনি থেকে যখন পাথর কিডনি নালীতে নেমে আসে তখন এই জায়গাগুলোতে পাথর আটকানোর সম্ভবনা থাকে। এখানে উল্লেখ্য যে, মূত্রনালীর পাথর মূত্রনালীতে উৎপন্ন হয় না এটি কিডনিতে উৎপন্ন হয়ে কিডনি নালীর দিকে নেমে আসে। কিডনি নালীতে নেমে আসার সময় এটি কিডনি নালীকে সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে বন্ধ করে দিতে পারে। এর ফলে কিডনির ভিতর প্রস্রাব জমে কিডনি আকারে বড় হতে পারে যাকে বলা হয় হাইড্রোনেফ্রোসিস।

দীর্ঘদিন এই অবস্থা বিরাজমান থাকলে কিডনি ধীরে ধীরে নষ্ট হতে পারে। কিডনির পাথর ইউরেটারে নেমে আসলে দেহের পিছনে বক্ষ খাঁচার নিচে তীব্র ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই ব্যথা ক্রমশ নিচের দিকে যেমন তলপেট বা উরুর দিকে অনুভূত হতে পারে। ব্যথা ক্রমশ তীব্র হতে থাকে এবং আবার কমে আসে, এই ভাবে পুনঃপৌণিকভাবে ব্যথা চলতে থাকে। প্রস্রাব করার সময় ব্যথা হতে পারে। প্রস্রাব রক্তবর্ণ, ঘোলা ও দুর্গন্ধযুক্ত হতে পারে। কখনও কখনও কিছুক্ষণ পর পর প্রস্রাবের বেগ হতে পারে। যদি সংক্রমণ থাকে তবে বমি বমি ভাব, কাঁপুনি দিয়ে তীব্র জ্বর আসতে পারে। ইউরেটারে পাথরের অবস্থান পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যথার তীব্রতা ও অবস্থান পরিবর্তন হয়।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে মূত্রনালীতে পাথরের অবস্থান, আকার ও কি ধরনের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে তা বিবেচ্য। সাধারণত ৫ মি. মি. আয়তনের পাথর পানি বেশি খেলে নিজে নিজে প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যেতে পারে।

৭ মি. মি. আয়তন পর্যন্ত পাথরের ক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসা দিয়ে ৩ সপ্তাহ পর্যন্ত অপেক্ষা করা হয়। যদি এর মধ্যে পাথর বেরিয়ে যায় তবে ভাল অন্যথায় শল্য চিকিৎসা প্রয়োজন। শল্য চিকিৎসার ক্ষেত্রে- ক্ষেত্র বিবেচনায় ESWL, URS ও ICPL মেশিন দিয়ে পাথরকে চূর্ণ করা হয়। পরে পাথরের চূর্ণ প্রস্রাবের সাথে বেরিয়ে যায়।

অনেক ক্ষেত্রে পাথরকে কিডনিতে ঠেলে দিয়ে ESWL করা হয়। পাথরের আকৃতি বেশি বড় হলে কেটে বের করে আনা শ্রেয়।  এই পাথুরে রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি অর্থাৎ ২ থেকে ২.৫ লিটার পানি পান করা উচিৎ।  যেসব খাদ্যে অক্সালেট বেশি  আছে যেমন বিট, মিষ্টি আলু, বাদাম, চা, চকলেট ইত্যাদি কম খাওয়া প্রয়োজন। যদি কিডনিতে পাথর হতে পারে এমন কোন রোগ শরীরে থাকে তার যথাযথ চিকিৎসা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে যার একবার কিডনি পাথর রোগ হয় তার বার বারই এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আর/এস 

Leave a Comment