গর্ভকালীন সাময়িক সমস্যাগুলো কী কী?

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক 
  • অক্টোবর ৮, ২০১৮

বমিভাব ও বমি : এটা খুব সাধারণ সমস্যা এবং বলা হয়ে যে, এটা গর্ভধারণের প্রথম লক্ষণ। সাধারনত হরমোনের তারতম্যের কারণে এমনটি হয়। গর্ভধারণের প্রথম তিনমাস এ সমস্যা কারোও কারোও বেশি দেখা দিতে পারে। পরে আপনা-আপনি এ সমস্যা ভালো হয়ে যায়। তাই এটা নিয়ে বেশি দুচিন্তা করবেন না। সকালে উঠে খালি পেটে শুকনো টোস্ট খেলে এবং ক্ষিধে লাগার আগেই খেয়ে ফেললে বমির ভাব কম হয়। সাধারণ বমি ডাক্তারের পরামর্শ মতে কিছু ওষুধ খেলে সেরে যায় বা কমে যায়। কিন্তু কিছু রোগীর ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বমি হয় তখন চিকিৎসকের নির্দেশমত চিকিৎসা ও প্রয়োজনে হাসপাতালেও ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। বমি বা বমি ভাব প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন :

১৷ গর্ভবর্তী মাকে আশ্বস্ত করতে হবে। 

২৷ ঘুম থেকে উঠে শুকনা খাবার খেতে হবে যেমন- মুড়ি, বিস্কুট। 

৩৷ খাবারের অন্তত ঃ ১/২ ঘণ্টা পর পানি খেতে হবে ৷ বারেবারে অল্প করে খেতে হবে৷

৫৷ তাড়াতাড়ি ঢকঢক করে দুধ বা পানি পান করবেন না। 

৬৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

রক্তস্বল্পতাঃ  অনেক সময় গর্ভাবস্থায় রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়৷

১৷ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী প্রথম মাস থেকে ফলিক এসিড এবং ৩ মাসের পর থেকে পরিমাণমতো আয়রন ও ক্যালসিয়াম খেতে হবে৷

২৷ আয়রন সমৃদ্ধ খাবার যেমন- কচুর শাক, কলার মোচা, তেঁতুল, তরমুজ, কলিজা, ডিম ইত্যদি খেতে হবে৷ ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ খাবার যেমন- আমলকি, লেবু, কাঁচামরিচ, পেয়ারা, আঁনারস এবং কাঁচা ফলমূল খেতে হবে৷

কোষ্ঠকাঠিন্য : গর্ভাবস্থায় অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন৷ অনুপযুক্ত খাবর গ্রহণ, প্রয়োজনমতো পানি পান না করা ও অনিয়মিত পরিশ্রমের ফলে এ ধরনের সমস্যা দেখা দেয়৷ প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন :

১৷ প্রচুর পরিমানে পানি পান করা৷

২৷ প্রচুর পরিমাণ শাক-সবজি ও টাটকা ফল খেতে হবে৷ যেমন - কলা, আম, গাছপাকা পেয়ারা, খেজুর, পেঁপে, আপেল ইত্যাদি৷ এছাড়াও দুধ-ভাত, কলা কিংবা আটার রুটি ও দুধ খাওয়া যেতে পারে৷

৩৷ নিয়মিত ঘরের কাজ ও হাঁটাচলা করতে হবে। 

৪৷ প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ইসবগুলের ভুষি খেতে পারেন৷

অনিদ্রা :  গর্ভাবস্থার শেষের দুই-তিন মাস অনিদ্রার ভাব হয়৷ প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন :

১৷ বিকেলে হাঁটা, শোবার আগে গরম দুধ খাওয়া বা বই পড়া ইত্যাদিতে উপকার হতে পারে৷

২৷ ঘুমের অসুবিধা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷

হাত-পায়ে টান ধরা : বিশেষ করে রাতে অনেক সময় পায়ে টান ধরে৷ হালকা ম্যাসেজ বা গরম সেক দিলে উপকার পাওয়া যায়৷ এ অবস্থায় ডাক্তারের পরামর্শ নিন৷

পিঠে ব্যথা :  গর্ভের প্রথমাবস্থা থেকে এ কষ্ট অনেক সময় দেখা দেয় যা শেষের দিকে খুব বেড়ে যেতে পারে৷ প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন :

১৷ শক্ত বিছানা ঘুমালে উপকার পেতে পারেন। 

২৷ শিরদাঁড়ায় ম্যাসেজ করতে পারেন। 

৩৷ হাঁটাচলার সময় কোমরে বেল্ট ব্যবহারে উপকার পাওয়া যায়৷

৪৷ সামনে ঝুঁকে কোনও কাজ করা যাবে না৷

৫৷ ভারী জিনিস উঠানো যাবে না৷

৬৷ ব্যথার ওষুধ বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া খাওয়া উচিত নয়৷

৭৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

পায়ের শিরা ফুলে যাওয়া : অনেক সময় গভবর্তী মায়ের পায়ের শিরা ফুলে যেতে পারে৷ প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন :

১৷ দীর্ঘ সময় দাঁড়ানো যাবে না। 

২৷ পা তুলে বসতে হবে। 

৩৷ প্রয়োজনে ক্রেপ ব্যান্ডেজ বাঁধতে হবে৷

৪৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

পা ফোলা : গর্ভাবস্থায় পা ফুলতে পারে, বিশেষ করে গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাস সময়ে পা ফুলে গেছে কিনা দেখার জন্য উভয় গোড়ালির চারপাশে বুড়ো আঙুল দিয়ে চাপ দিন৷ যে পয়েন্টে চাপ দেওয়া হয় সেখানে যদি একটি ছোট গর্ত হয়ে যায় এবং শীঘ্র তা মিলিয়ে যায় তবে বুঝতে হবে পায়ে পানি নেমেছে৷ শরীরে লবণ বৃদ্ধির ফলে পায়ের গোড়ালি ফুলে যায় ও পানি জমে৷ শরীরে পানি জমলে বা শরীর ফুলে গেলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী রোগীর রক্তচাপ, প্রস্রাব পরীক্ষা করা ও ওজন দেখা উচিত৷ প্রতিকারের জন্য প্রয়োজন :

১।পা উঁচুতে রেখে বিশ্রাম নেওয়া। 

২।খাবারের সাথে বাড়তি লবন না খাওয়া। 

৩।প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

বুক ধড়ফড় ও নিঃশ্বাসের কষ্ট : গর্ভাবস্থায় হার্টের কাজ বেড়ে যায়৷ কারণ মা ও শিশু দুইয়ের শরীরের রক্ত সঞ্চালনের প্রয়োজন হয়৷ অনেক সময় মায়ের রক্তশুন্যতা দেখা দেয়৷ এসব কারণে বুক ধড়ফড় করে৷ জরায়ুর বৃদ্ধির ফলে ফুসফুসের ওপর চাপ পড়ে এবং তার স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হয়৷ তাই নিঃশ্বাসের নিতে কষ্ট হয়৷

মূত্র নালীর সংক্রমণ : গর্ভবস্থায় প্রসাবে জ্বালা পোড়া হতে পারে৷ তাই -

১৷ প্রচুর তরল পানীয় খেতে হবে। 

২৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

জ্বর : গর্ভাবস্থায় খুব জ্বর হলে মা ও বাচ্চার উভয়ের জন্যে খুব বিপজ্জনক হতে পারে৷ এরূপ হলে হাসপাতালে বা ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত৷

অর্শ : কোষ্ঠকাঠিন্য ও অর্শ যদি একই সঙ্গে থাকে তবে তা গর্ভাবস্থায় বেড়ে যায়৷ সুতরাং পায়খানা পরিষ্কার হওয়া দরকার৷ এ অবস্থায় দেরী না করে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

মাথাব্যথা : অতিরিক্ত পরিশ্রম, ক্ষুদা এবং গরম লাগলে মাথা ব্যথা হতে পারে৷ একারণে এগুলো এড়িয়ে চলা উচিত৷

তলপেটে ব্যথা : জরায়ু ধীরে ধীরে বড় হয়ে এর আশে-পাশের লিগামেন্টে টান পড়ার জন্য তলপেটে ও কুঁচকিতে হালকা ব্যথা হতে পারে। এই ব্যথা স্বাভাবিক। এই ব্যথা পাঁচ-ছয় মাসের দিকে হয়।

সাদা স্রাব : গর্ভাবস্থায় হরমোন ইস্ট্রোজেন ও রক্ত সরবরাহ বেড়ে যাওয়ার জন্য সাদা শ্রাব কোন কোন সময় যেতে পারে। ঢিলেঢালা পোষাক ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সাদা শ্রাবের সাথে যদি দুর্গন্ধ থাকে বা চুলকানি হয় তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

গলা ও বুক জ্বালা :  এটাও গর্ভকালীন একটা সাধারণ সমস্যা। অতিরিক্ত ঝাঁল, তেলচর্বিযুক্ত খাবার বাদ দিলে এসমস্যা কমে যায়। তবে গর্ভাবস্থার শেষের দিকে শুয়ে থাকলে বড় জরায়ু পাকস্থলীতে চাপ দেয়ার জন্য এটা হতে পারে। তখন উচুঁ বালিশে কাত হয়ে শোয়া, খাবার পর কিছুক্ষণ হাঁটা-হাঁটি করার পর পানি খেলে এন্টাসিড জাতীয় ওষুধ খেলে উপকার পাওয়া যায়। সহজপাচ্য খাবার বারে বারে অল্প অল্প খেতে হবে -

১৷ খাওয়ার পর পরেই শোয়া চলবে না, শোয়ার প্রয়োজন বেশি হলে মাথার নিচে দুটি বালিশ দিয়ে অর্ধ শয়ন অবস্থায় শুতে হবে। 

২৷ মসলাযুক্ত ভাজা খাবার খাওয়া যাবে না। 

৩৷ প্রচুর পরিমাণে ঠাণ্ডা পানি পান করতে হবে। 

৪৷ প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে৷

এছাড়াও আরও কিছু সমস্যা বিশেষ করে প্রথমদিকে মাথাঘোরা, অরুচি, দুর্বল লাগা, আলসেমি লাগা-শেষের দিকে ওঠতে বসতে বা শোয়া থেকে উঠতে কষ্ট লাগা, হাত-পা গরম ভাব, গায়ে মুখে বিশেষ করে গলায় কালো দাগ পড়া, পেঁটের চামড়া ফেটে যাওয়া বেশী পিপাসা লাগা বা ক্ষিধে পাওয়া এগুলো হতে পারে।

সূত্র : গুগল 

Leave a Comment