গর্ভাবস্থায় শারীরিক কিছু পরিবর্তন যা মোকাবিলা করতে হবে আপনাকেই!

  • তাশফিয়া আমিন 
  • অক্টোবর ২৪, ২০১৮

ডেলিভারির পর বা গর্ভাবস্থায় এমন অনেকেই বিভিন্ন সময় এ বিষয়টি বলে থাকেন যে গর্ভাবস্থা অবর্ণনীয় আনন্দ ও খুশি নিয়ে আসে। পাশাপাশি সকাল বেলার অসুস্থতা (মর্নিং সিকনেস) এবং অদম্য-ক্ষুধা সহ অনেক ধরণের অদ্ভুত সমস্যা নিয়েও আসে, যার জন্য আপনি প্রস্তুত নাও থাকতে পারেন। এরকম কিছু সমস্যার বিবরণ এখানে দেয়া হলো যা জানার মাধ্যমে আপনি এগুলোর জন্য প্রস্তুত থাকতে পারেন।

ত্বকের সমস্যাঃ গর্ভবতী থাকাকালে অনেক নারীর ত্বক বহুগুণে উজ্জ্বল হয়ে পড়ে। তবে সব ক্ষেত্রে এটি ইতিবাচক হয় না, ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরণ উচ্চ মাত্রায় উপস্থিতির কারনে ত্বক তৈলাক্ত হয়ে পড়ে এবং ফলশ্রুতিতে ব্রণ দেখা দেয়। ত্বকে কালো দাগ পরিলক্ষিত হতে পারে যা সূর্য রশ্মির সংস্পর্শে গেলে আরো কালো হয়। গর্ভবতী থাকা কালে ত্বকের যেসব অংশে মেলানিন বেশি মাত্রায় থাকে সেসব অংশে এসব দাগ সৃষ্টি হয়। কিছু কিছু নারীর ক্ষেত্রে শরীরের ত্বক বেশি মাত্রায় বেড়ে যেতে দেখা যায়। শরীরের যেসব অংশ একে অন্যের সাথে বেশি ঘষা খায় বা সংস্পর্শে থাকে, যেমন গলা ও বুক, সেসব অংশে এরকম ভাবে ত্বকের বৃদ্ধি হতে দেখা যায়।

যা করতে পারেন : রোদ থেকে ত্বককে রক্ষা করতে মাথায় রোদটুপি পরিধান করতে পারেন বা ছাতা সাথে রাখতে পারেন। সকাল ১০টা থেকে দুপুর ২টা’র কড়া রোদ এড়িয়ে চলুন। এসপিএফ ৩০ অথবা ততোধিক মাত্রাযুক্ত ভালো মানের সানস্ক্রিন লোশন ব্যবহার করুন। একটি ভালো মানের ক্লিনজার বা ফেসওয়াস দ্বারা দিন ২বার মুখ ধুতে পারেন। তৈলমুক্ত প্রসাধন সামগ্রী অথবা মেকআপ ব্যবহার করুন। ত্বক বৃদ্ধি পাওয়ার সমস্যাটি খুব বিরক্ত করে থাকলে তা ক্ষুদ্র কিছু প্রক্রিয়ার দ্বারা দূর করা যায় যা ডাক্তার দিয়ে করানো হয়। তবে নিজে নিজে টানতে যাবেন না।

চুল : যাদের চুল হালকা বা কম, গর্ভবতী থাকাকালে সেসব মহিলার চুল দীর্ঘ ও বেশি হয়ে যায়, যা তারা সবসময় চেয়ে থাকে। অন্যদের দৃষ্টিতে, এ চুল বৃদ্ধি অগোছালো, এলোমেলো ও ঘন মনে হয়।

যা করতে পারেন : চুলের যত্ন নিন। চুলে শ্যাম্পু অথবা ভালো মানের কন্ডিশনার ব্যবহার করুন। চুল আরো আদ্র বা ভেজা করে তোলার জন্য ঘরে বসে মাথায় তেল দিতে অথবা গরম তেলের মালিশ নিতে পারেন। চুল যদি খুব ঘন হয়ে পড়ে, তাহলে কিছুটা কেটে হালকা করে নিতে পারেন এবং হেয়ার স্টাইলিস্টকে চুল হালকা করতে এমন কিছু করতে বলুন যাতে চুল সহজে শুকানো ও বেঁধে রাখা যায়।

নখ দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়া : আগের থেকে নখ দ্রুত বাড়তে থাকলে প্রায়ই ম্যানিকিউর করানোর প্রয়োজন দেখা দিতে পারে। কিছু কিছু মহিলার শক্ত নখ এবং কারো কারো নরম বা ভঙ্গুর নখ থাকে।

যা করতে পারেন : হাত এ নখের ক্রীম কিংবা সাধারণ ক্রীম ব্যবহার করতে পারেন যাতে নখ শক্ত হয়। কাপড় অথবা থালাবাসন ধোয়ার সময় রাবারের গ্লাভস ব্যবহার করুন।

পেটের সমস্যা : গর্ভাবস্থায় কোষ্ঠকাঠিন্য একটি সাধারণ সমস্যা। প্রোজেস্টেরণের সঞ্চলন ও জরায়ু বৃদ্ধির কারনে খাবার নিচে নামার গতি ধীর হয়ে যেতে পারে। খাদ্য পরিপূরক হিসেবে গৃহীত লোহা বা আয়রন সমস্যাকে দ্বিগুণ করে দিতে পারে।

যা করতে পারেন : আঁশযুক্ত খাবার বেশি পরিমাণে গ্রহণ করুন। গর্ভাবস্থায় খেতে পারেন এমন সব শাকসব্জি ও ফল প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করুন। প্রসবপূর্ব ভিটামিন ও অন্যান্য দিন গৃহীত আয়রনমুক্ত মাল্টিভিটামিন খেতে পারবেন কি না সে সম্পর্কে ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করুন।

পা মোটা বা ফুলে যাওয়া : রিলাক্সিন নামক হরমোনের কারনে পায়ের লিগামেন্ট শিথিল হয়ে যেতে পারে যার ফলশ্রুতিতে জুতার সাইজ অর্ধেক বা তারও বেশি বেড়ে যেতে পারে। অনেক মহিলার ক্ষেত্রে শোথ বা পায়ে অতিরিক্ত পানি জমে যায় যার কারনে পা ফোলে যায়। এটি সব ক্ষেত্রে স্থায়ী হয় না, শিশু জন্মের পর পা পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে অথবা নাও যেতে পারে।

যা করতে পারেন : পায়ের সাইজ বা আকারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে আরামদায়ক জুতো কিনুন।

মাড়ি ও নাক দিয়ে রক্ত পড়া : গর্ভাবস্থায় জিংজিভাইটিস (মাড়ির প্রদাহ) একটি প্রচলিত বা সাধারণ সমস্যা। এস্ট্রোজেনের উচ্চ মাত্রায় উপস্থিতির কারনে দাঁতে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ সৃষ্টি হয় এবং রক্ত প্রবাহ বেড়ে যাওয়ার কারণে মাড়ি ফুলে যায়। ফলে দাঁত ব্রাশ বা ফ্লস করার সময় মাড়ি থেকে রক্তক্ষরণ হতে পারে। নাকের অভ্যন্তরীণ প্রাচীরও (মিউকাস মেমব্রেন) এস্ট্রোজেনের আধিক্যের কারনে ফুলে যেতে পারে, যার ফলে রাতে ঘুমানোর সময় নাক ডাকতে পারে। গর্ভাবস্থায় যেসব মহিলাদের ওজন অধিক হারে বেড়ে যায়, তাদের ক্ষেত্রে উক্ত সমস্যাসমূহ আরো খারাপ অবস্থা ধারণ করে। এমনকি নাক থেকে রক্ত ঝরতে পারে।

যা করতে পারেন : মুখের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং নিয়মিত দাঁতের চিকিৎসকের কাছে যান। শ্বাস বন্ধ হওয়া অনুভব করলে নাকের ড্রপ ব্যবহার করার জন্য ডাক্তার পরামর্শ দিতে পারেন। একদিকে পাশ ফিরে ঘুমান এবং ওজন যাতে অনিয়মিত হারে না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

স্তনবৃন্ত ও অ্যারিওলা বড় ও কালো হয়ে পড়া : অ্যারিওলা, যা হচ্ছে স্তনবৃন্ত ঘিরে রাখা গাঢ় রঙের অংশ, তা আরো গাঢ় ও বড় হতে পারে। স্তনবৃন্তের চারপাশে আরো সুস্পষ্ট উচু অংশ দেখা দিতে পারে, এগুলোকে মন্টেগোমেরি’র টিউবারকল বলা হয়। এগুলি সাধারণত তেল উৎপন্ন হওয়ার জন্য সৃষ্ট গ্রন্থির মুখ, এর থেকে ব্যাকটেরিয়া বিরোধী এবং পিচ্ছিলকারক সুবিধা পাওয়া যায়।

যা করতে পারেন : এসব পরিবর্তন নিয়ে বিন্দুমাত্র দুশ্চিন্তার কিছু নেই।

Leave a Comment