গর্ভাবস্থায় নিতে হবে স্তনের যত্ন

  • তন্ময় আলমগীর
  • অক্টোবর ২৬, ২০১৮

গর্ভাবস্থার প্রাথমিক লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে স্তন অতি সংবেদনশীল হয়ে যাওয়া, ব্যথা করা ও শিরশির করা। গর্ভাবস্থার তৃতীয় বা চতুর্থ সপ্তাহ থেকে আপনার এই অনুভূতিগুলো শুরু হবে। এটি একটি ক্রমাগত প্রক্রিয়া। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

গর্ভাবস্থায় স্তনের পরিবর্তন কেমন হতে পারে?

গর্ভাবস্থায় স্বাভাবিক কারনেই স্তনের আকৃতিগত পরিবর্তন দেখা দেয়। এটিই প্রকৃতির নিয়ম। ৬-৮ সপ্তাহের দিকে স্তন এর আকার বৃদ্ধি পাওয়া শুরু হতে পারে যা পুরো গর্ভকালীন সময় ধরে চলে। এসময় স্তনের স্নেহ গ্রন্থি গুলো ক্রমশ পুরু হতে থাকে এবং দুগ্ধ গ্রন্থিতেও অতিরিক্ত রক্তও যোগ হয়। এর ফলে শিশুকে বুকের দুধ দেওয়ার জন্য আপনার স্তন প্রস্তুত হয়ে ওঠে। গর্ভাবস্থায় এরিওলার সেবাসিয়াস গ্রন্থিগুলো বেশি সক্রিয় হবার ফলে সেখানে ১৫/২০টি বড় বড় দানা দেখা যায়, যাকে ডাক্তারি ভাষায় মন্টগোমেরী’স টিউবারকল বলে এবং স্তনকে breast feeding এর জন্য প্রস্তুত করতে সাহায্য করে। এগুলোকে চাপবেন না বা দূর করার চেষ্টা করবেন না। এগুলো অপ্রয়োজনীয় নয়।

এমতাবস্থায় আপনার স্তন এতটাই পরিবর্তিত হবে যে, সামান্য কাপড়ের ঘষাও আপনার কাছে অসহ্য লাগবে। আপনার স্তনে হাত দিলেও এখন আর আপনার ভালো লাগবে না। এ অবস্থা অবশ্য ঠিক হয়ে যাবে। প্রথম তিন মাস পার হয়ে গেলেই এই অসহ্য ব্যথার অনুভূতি কমে যাবে। গর্ভাবস্থায় স্তন থেকে তরল নিঃসৃত হতে পারে। পুরু, চটচটে, হলদেটে কমলা রঙের যে তরল পদার্থ বেরিয়ে আসে তা আসলে দুধ নয়, সেটি প্রকৃতপক্ষে কোলোস্ট্রাম। কোলোস্ট্রাম শিশুর জন্য পুষ্টিগুণ সম্পন্ন একটি তরল।
 
অপরদিকে যদি পুরো গর্ভাবস্থায় আপনার একবারও স্তন থেকে নিঃসরণ না হয়, তবুও চিন্তার কিছু নেই কারণ সেটিও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক এবং কোনোভাবেই শিশুর জন্মের পর বুকে দুধ আসা না আসা কে প্রভাবিত করে না। তবে, যদি আপনার কাছে পুঁজের মতন মনে হয় অথবা ব্যথা অনুভব হয়, নিজের কাছে অস্বাভাবিক মনে হয় তবে দ্রুত আপনার চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ করবেন। কখনো কখনো গর্ভবতী মায়েদের স্তনে মাংসপিণ্ডের মত কিছু অনুভূত হতে পারে। এগুলো সাধারণত তেমন ভয়ের কারণ নয়। দুধ জমে যাওয়ার জন্য এমন হতে পারে। গর্ভাবস্থায় সাধারণত স্তনে তেমন কোনও জটিলতা দেখা দেয়না, যেমন- স্তন ক্যান্সার। তবু এধরনের কিছু দেখা গেলে একবার ডাক্তারের কাছ থেকে চেক আপ করিয়ে নেয়া দরকার।

গর্ভাবস্থায় যেভাবে স্তনের যত্ন নিবেন : স্তনের এমন পরিবর্তনের কারণে অস্বস্তি এবং কোন সময় যন্ত্রণাও হতে পারে। নীচে কিছু পরামর্শ দেওয়া হল যা হয়তো আপনাকে স্তনের পরিবর্তনের সাথে যুক্ত অস্বস্তি নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করতে পারে: প্রথমত একটা ভালো আর মাপসই ব্রা পরা। কিন্তু সেটা যেন কাপের নিচে তার দেয়া ব্রা না হয়। আপনার পরিবর্তনশীল স্তনের জন্য সেগুলো এখন উপযোগী নয় এবং আপনি আরামও পাবেন না। গর্ভাবস্থায় আপনার একাধিকবার ব্রা-এর মাপ বদলাতে হতে পারে। স্তনের আকার বদলানোর সাথে সাথে মাপসই ব্রা পরার চেষ্টা করুন। সিন্থেটিক ব্রায়ের পরিবর্তে সুতির ব্রা বেছে নিন কারন ওগুলি বেশি আরামদায়ক।

কিভাবে বুঝতে পারবেন আপনার ব্রা সঠিক মাপের হয়েছে? যদি ব্রাটি অত্যন্ত আঁটসাঁট অথবা অত্যন্ত ঢিলে না হয়। ব্রাটি নীচে, ওপরে অথবা পাশে কোন স্ফীতি ছাড়াই সমস্ত স্তন আচ্ছাদন করে থাকে। মাতৃত্বকালীন ব্রা পড়ার চেষ্টা করুন। এরকম ব্রাগুলিতে বোতামের আরও অধিক সারি থাকে যাতে আপনার শরীর পরিবর্তনের সাথে সাথে আপনি তা মানিয়ে নিতে পারেন। 

Leave a Comment