যমজ সন্তান ধারণের লক্ষণ  ও পরিচর্যা

  • তন্ময় আলমগীর
  • অক্টোবর ২৮, ২০১৮

গর্ভে একের অধিক সন্তান ধারণ করা অস্বাভাবিক কিছু নয়। এটি প্রকৃতি প্রদত্ত বা গড গিফটেড বলা যেতে পারে। একটি নিষিক্ত ডিম্বাণু প্রথমে দুইটি পৃথক কোষে বিভক্ত হয়। পরবর্তীতে প্রতিটি কোষ থেকে একেকটি শিশুর জন্ম হয়। এভাবেই অভিন্ন যমজ শিশুর (আইডেন্টিক্যাল টুইন) জন্ম হয়। এখানে দুটি কোষ যেহেতু পূর্বে একটি কোষ ছিল, তাই এদের সব জীন একই হয়ে থাকে। একারণে এরা দেখতে অভিন্ন হয় এবং একই লিঙ্গের হয়। সাধারণত একই সময়ে একটি মাত্র ডিম্বাণু দুটি ডিম্বাশয়ের যে কোনও একটি থেকে নির্গত হয়। যদি দুটি ডিম্বাশয় থেকেই একটি করে ডিম্বাণু একই সময়ে নির্গত হয়, তবে ওভ্যুলেশন পিরিয়ডে তার শরীরে মোট দুটি ডিম্বাণু থাকে। এসময় মিলন হলে পুরুষের শুক্রাণু উভয় ডিম্বাণুকেই নিষিক্ত করে। এভাবেই নন-আইডেন্টিক্যাল টুইন শিশুর জন্ম হয়। এসব শিশু সবসময় একই লিঙ্গের নাও হতে পারে এবং তারা দেখতে ভিন্ন হয়।

সন্তান যমজ কিনা তা বুঝবেন যেভাবে?

গর্ভধারণের শুরু থেকেই বেশি মাত্রায় শরীর খারাপ লাগতে থাকে। আপনি স্বাস্থ্যবান হলেও এবং বড় ধরনের কোন সমস্যা আপনার না থাকলেও গর্ভাবস্থায় ছোটখাটো অস্বস্তিও আপনার জন্য দ্বিগুণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। যেমন পিঠে আরও বেশী ব্যথা, অবসাদ বোধ করা, বুক জ্বালা ও বমির ভাব, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাইলস ইত্যাদি। ওজন বৃদ্ধি ও গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত হরমোনের কারণে সব গর্ভাবস্থাতেই এসব উপসর্গ দেখা দেয়। তবে যমজ বাচ্চার ক্ষেত্রে এই সমস্যাগুলো একটু বেশী হতে পারে।

স্বাভাবিক গর্ভাবস্থায় যেমনটা হওয়ার কথা তার চাইতে আপনার গর্ভাশয় যমজ সন্তানের ক্ষেত্রে বেশী বড় হয়ে যায়। ফলে পেটের আয়তন স্বাভাবিক নিয়মের তুলনায় বেশী থাকে। তবে শুধু এ ধরনের লক্ষণ দেখেই যমজ সন্তান সম্পর্কে নিশ্চিত ধারণা করা যায় না।আল্ট্রাসনোগ্রাফির মাধ্যমেই নিশ্চিত হওয়া যায় গর্ভে একাধিক শিশুর উপস্থিতি। গর্ভের সন্তান যমজ কিনা জানতে দুই মাস পর আলট্রা সাউন্ড করে জেনে নিতে পারেন।

যমজ শিশুর জটিলতা : গর্ভে একাধিক সন্তান ধারণকারী মায়ের অতিরিক্ত রক্তচাপ, খিঁচুনি, ডায়াবেটিস, সিজারিয়ান অপারেশনের প্রয়োজনীয়তা, প্রসব-পরবর্তী অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ ইত্যাদি ঝুঁকি থাকে। তাই এসব মায়ের ঘনঘন চেকআপের প্রয়োজন হয়। অপরদিকে গর্ভস্থ যমজ শিশুরও জটিলতা হতে পারে। গর্ভে একাধিক শিশু থাকলে গর্ভপাত, গর্ভে সন্তানের মৃত্যু বা মৃত বাচ্চা প্রসবের ঝুঁকি বেশি। অনেক সময় যমজের একটি মারাও যেতে পারে। গর্ভে যমজ বাচ্চা থাকলে সময়ের আগেই প্রসব হয়ে গেলে বাচ্চাগুলোর ওজন কম ও অপরিপক্ব থাকে। তাই জন্মের পর তাদের বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। দেখা যায়, যমজ শিশুদের জন্ম সাধারণত ৩৭ সপ্তাহের আগেই হয়ে যায়। যমজ শিশুর একটির জেনেটিক রোগ থাকলে অন্যটিরও তা থাকার ঝুঁকি বেশি। এক ধরনের রোগ আছে, যা টুইন-টু-টুইন ট্রান্সফিউশন সিনড্রোম বা টিটিটিএস নামে পরিচিত-এটি যমজদের হয়। এ রোগটি যথাসময়ে নির্ণয় করে চিকিৎসা না করা হলে সময়ের অনেক আগেই শিশুর জন্ম হতে পারে, শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।

গর্ভবতীর পরিচর্যা : গর্ভে একাধিক সন্তান থাকলে ওই মায়ের অধিক পুষ্টি ও যত্নের প্রয়োজন। বিষয়টি পরিবারের সবাইকে গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ উভয় সন্তানের পুষ্টিই গর্ভকালীন পুরোপুরি নির্ভর করে মায়েরপুষ্টিগুণের ওপর। যমজ শিশু গর্ভে থাকা মানে সময়ের আগে জন্মদানের ঝুঁকি থাকা। তাই জরুরি প্রয়োজনে কোথায় কোন চিকিৎসাকেন্দ্রে যেতে হবে, যানবাহন, প্রয়োজনীয় অর্থ, রক্তের জোগাড় ইত্যাদি বিষয়ে পূর্বপ্রস্তুতি থাকা অতি জরুরি।

Leave a Comment