গর্ভাবস্থায় ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার মারাত্মক ক্ষতিকর

  • ওমেন্সকর্নার ডেস্ক
  • নভেম্বর ৯, ২০১৮

গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে যে, গর্ভাবস্থায় ক্ষতিকর নয় এমন বস্তুও আপনার জন্য ক্ষতিকর ও বিপদজনক হয়ে ওঠার আশঙ্কা রয়েছে।  তাই এই সময় কোন কিছু ব্যবহার করতে সর্বোচ্চ সচেতনতার পরিচয় দেওয়া উচিত।  এরকমই একটি বস্তু হল ক্যাস্টর অয়েল বা রেড়ির তেল। 

ক্যাস্টর অয়েল চুলের বৃদ্ধিতে, চামড়ার সমস্যার সমাধানে, হাড়ের জয়েন্টের ব্যথা উপশমে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও ক্যাস্টর অয়েল সংবহনতন্ত্র এবং যকৃৎ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি আমাদের শরীরে বিষাক্ত উপাদানগুলিকে অপসারণ করতে এবং কোষ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে যা ব্যক্টেরিয়া, ভাইরাস, ছত্রাককে আমাদের শরীর থেকে দূরে রাখে।

ক্যাস্টর অয়েলের আছে ক্ষতিকর প্রভাবও। এটির জোলাপ জাতীয় বা রেচক বৈশিষ্টের (Laxative properties) কারণ এটি গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয়। একমাত্র কোন কারণে প্রসব প্রক্রিয়াকে প্ররোচিত (যা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মোটেও উচিত নয়) করা ছাড়া, গর্ভবতী মহিলাদের ক্যাস্টর অয়েলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই উচিত। যে যে কারণে ক্যাস্টর অয়েল গর্ভবতী মহিলাদের জন্য নিরাপদ নয় তা হলো-

প্রসব প্রক্রিয়াকে প্ররোচিত করে : জোলাপ বা রেচক বৈশিষ্টের কারনে গর্ভাবস্থায় থাকাকালীন ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে গর্ভে এবং জরায়ুতে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। এই পরিস্থিতি আরো গুরুতর হলে জরায়ু সংকোচন এর মত সমস্যা তৈরি হতে পারে। জরায়ুতে এই প্রকার সমস্যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক, এবং সেক্ষেত্রে ‘সিজার’ পদ্ধতিতে প্রসবের সম্ভাবনা বাড়তে পারে।

ডিহাইড্রেশন : ক্যাস্টর অয়েলের রেচক বৈশিষ্টের কারণে ডায়রিয়া বা উদরাময় এর মত সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে, এবং অতি পরিমাণে ডায়রিয়া হলে আপনার শরীরে ডিহাইড্রেশনের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। ডিহাইড্রেশনের কারণে শরীরের পুষ্টি হারাতে পারেন, যা প্রেগনেন্সির সময় আপনার অত্যন্ত প্রয়োজন। মাথাঘোরা, ক্লান্তি, মাথাব্যথা ছাড়াও এটির প্রভাব অনেক দিন পর্যন্ত থাকে, এবং পরবর্তী কালে পোস্টপারটাম ডিপ্রেশনের মত সমস্যাও সৃষ্টি করতে পারে।

মিকোনিয়াম অ্যাসপিরেসন সিনড্রোম : মিকোনিয়াম হল গর্ভস্থ শিশুর মল যা গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরেও গর্ভাশয়েই থেকে যায়। গর্ভাবস্থায় ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করলে তা গর্ভস্থ শিশুর মল ত্যাগ প্রক্রিয়ার গতি বাড়িয়ে দেয়, ফলে গর্ভাশয় ( অ্যামিনিওটিক স্যাকে ) মিকোনিয়াম বা গর্ভস্থ শিশুর মল দ্বারা ভরতি হতে থাকে। ফলে গর্ভস্থ শিশুটির শ্বাস গ্রহন করার সময়, মিকোনিয়াম এবং অ্যামিনিওটিক পদার্থের মিশ্রন শরীরে ঢুকে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে, এর ফলে শিশুটির শ্বসনতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এটি আপনার সন্তানের শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা এবং ফুস্ফুসে সংক্রমনের মত সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।

স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায় : গর্ভবতী মায়েদের স্তন্যদুগ্ধের প্রায় ৯০ শতাংশই জল দ্বারা তৈরি হয়। তাই প্রসবের পর ডাক্তাররা মায়েদের সাধারণ পরিমাণের তুলনায় অন্তত ৭০০ মিলিলিটার জল বেশি পান করার উপদেশ দিয়ে থাকেন। কিন্তু, ক্যাস্টর অয়েল এর কারণে আপনার শরীর ডিহাইড্রেট হয়ে পড়তে পারে, এবং এর ফলে আপনার স্তন্যদুগ্ধ উৎপাদন ক্ষমতাও হ্রাস পেতে পারে। তবে, শরীরের বাইরের অংশে, স্তন প্রদাহ, স্তনের বন্ধ নালি ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে ক্যাস্টর অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।

অকাল প্রসব : যে সকল মায়েরা কয়েকদিনের মধ্যেই প্রসব করার ব্যাপারে চিন্তা ভাবনা করছেন তাদের ক্ষেত্রে ক্যাস্টর অয়েল ভালো ফলদায়ক হতে পারে। কিন্তু যে সকল মায়েদের গর্ভকাল বা প্রেগনেন্সি এখনো ৪০ সপ্তাহ পেরোয়নি, তাদের ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে। এর প্রভাবে অপরিণত প্রসব বা অকাল গর্ভপাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। অপরিণত প্রসবের কারণে শিশুদের বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয় যেমন শ্বাস প্রশ্বাসে সমস্যা, ইনফেকশন, ব্রেন ড্যামেজ ইত্যাদি। এবং তারা যত বড় হতে থাকে, এই সমস্যা গুলি আরো বাড়তে থাকে, এবং সময়নুসারে তাদের মধ্যে ব্যবহারজনিত সমস্যাও লক্ষ্য করা যায়।

অপ্রীতিকর প্রসব অভিজ্ঞতা : প্রত্যেকদিনই আপনি সন্তান প্রসব করবেন না। প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করা সত্যিই কঠিন। তার ওপর আপনি নিশ্চয়ই প্রত্যেক ঘন্টায় ঘন্টায় বাথরুমে যেতে চাইবেন না। ক্যাস্টর অয়েল খাওয়ার ফলে আপনার পেটে যে গ্যাস তৈরি হবে তাতে আপনার পেটে শুধু যে অসহ্য ব্যথা সৃষ্টি করবে তাই নয়, সবার সামনে বাথকর্মের মত একটি লজ্জাজনক পরিস্থিতিও সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং, বাথরুমের ভেতর প্রসব না করতে চাইলে প্রেগনেন্সির সময় ক্যাস্টর অয়েলের থেকে দূরত্ব বজায় রাখাই ভাল।

অতিরিক্ত বমি বমি ভাব : বিশ্রী গন্ধের কারণে এটি খেলে প্রেগন্যান্ট মহিলারা শরীরে বমি বমি ভাব অনুভব করতে পারেন। শুধু তাই নয়, বিভিন্ন জলীয় দ্রব্য যেমন অরেঞ্জ জুস বা অন্যান্য ফলের রসের সাথে মিশিয়ে খেলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।

Leave a Comment