জেনে নিন মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না কতটুকু নিরাপদ

  • ওমেন্স কর্নার
  • এপ্রিল ২৯, ২০২৪

কম সময়ে ঝামেলাহীনভাবে খাবার গরম করে নেওয়ার সহজ মাধ্যম হিসেব মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার বেশ জনপ্রিয়; যদিও এ নিয়ে নানা প্রশ্নও উঁকি দেয় অনেকের মনে।

কারো ধারণা, মাইক্রোওয়েভ ওভেন থেকে রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তা ছড়ায়। কেউ মনে করেন, এতে খাবারের স্বাদ কিংবা গুণগত মান নষ্ট হয়। আবার কীভাবে ওভেনে খাবার প্রস্তুত করতে হয়, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা- এ নিয়েও রয়েছে মতপার্থক্য।

বিবিসি লিখেছে, মাইক্রোওয়েভের ক্ষতিকর তেজস্ক্রিয়ার ঝুঁকি নেই। কিন্তু ওভেনে খাবার গরম করার ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের পাত্র ব্যবহারের আগে ভাবতে হবে কিছু বিষয়।

মাইক্রোওয়েভ ওভেনের ব্যবহার নিয়ে সাধারণ যত প্রশ্ন রয়েছে, গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সেগুলোর উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে বিবিবি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সঠিকভাবে ব্যবহার করলে মাইক্রোওয়েভের রেডিয়েশন নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। তবে অন্যান্য যে উদ্বেগ রয়েছে, সেগুলোর উত্তর এমন সোজাসাপ্টা নয়। যেমন- মাইক্রোওয়েভে তৈরি খাবারে পুষ্টিগুণ হারায় কিনা বা প্লাস্টিকের পাত্রে গরম করা খাবার হরমোনের ব্যাঘাত ঘটাতে পারে কিনা। এমন সব প্রশ্নের উত্তর পুরোপুরি স্পষ্ট নয় এখনও।

আরো পড়ুন:
পনির সংরক্ষণের সহজ টিপস
খাঁটি ঘি চিনবেন যেভাবে
বারবিকউ সস বানানোর সহজ উপায়
পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়?

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, মাইক্রোওয়েভে সবজির কিছু পুষ্টিগুণ হারায়।

যেমন- মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে ব্রোকলির ৯৭ শতাংশ ফ্ল্যাভোনয়েড নষ্ট হয়ে যায়। অথচ শরীরের প্রদাহপ্রতিরোধী গুণ রয়েছে ফ্ল্যাভোনয়েডের। ব্রোকলি সিদ্ধ করার চেয়ে ওভেনে রান্না করলে এক তৃতীয়াংশ বেশি ক্ষতি হয় ফ্ল্যাভোনয়েডের ক্ষেত্রে।

এক্ষেত্রে আবার বাজারের সাধারণ বা গতানুগতিক ওভেন আর মাইক্রোওয়েভ ওভেনের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ২০২০ সালের একটি হিমায়িত খাবার মাইক্রোওয়েভ ও সাধারণ ওভেনে রান্না করে এর পুষ্টিগুণের পার্থক্য খুঁজে দেখেন গবেষকরা। ওই গবেষণায় একমাত্র পার্থক্য দেখা যায়, ‘সামান্য পরিমাণে’ বেশি ভিটামিন সি ধরে রাখে মাইক্রোওয়েভ। এটি কী কারণে হতে পারে, তার কোনো ব্যাখ্যা পাননি গবেষকরা।

মাইক্রোওয়েভে ব্রোকলির পুষ্টিগুণ হারানোর বিষয়ে ২০১৯ সালে একটি গবেষণা হয়। সেখানে বলা হয়, একই বিষয়ে আগের গবেষণাগুলোতে রান্নার সময়, তাপমাত্রা এবং ব্রোকলি পানিতে ছিল কিনা, এসব বিষয়ে ভিন্নতা ছিল। ওই গবেষণায় দেখা যায়, ব্রোকলি অল্প সময় মাইক্রোওয়েভে দিলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয় না। গবেষকরা ব্রোকলি এক মিনিট মাইক্রোওয়েভে রেখে পুষ্টিগুণ পরীক্ষা করে এই ফলাফল তুলে ধরেন।

ওই গবেষণায় আরো বলা হয়, পানিতে সরাসরি সিদ্ধ না করে বাষ্পের মাধ্যমে সিদ্ধ করা এবং মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে বরং খাবারে বেশি ফ্ল্যাভোনয়েড রাখা সম্ভব, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। গবেষকরা দেখেছেন, বেশি পরিমাণ পানি দিয়ে (যে পরিমাণ পানি সিদ্ধ করতে ব্যবহৃত হয়) মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে ফ্ল্যাভোনয়েড কমে যায়।

২০১৯ সালের এ গবেষণার প্রধান ইউএস ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচারের বেল্টসভিল হিউম্যান নিউট্রিশন রিসার্চ সেন্টারের জিয়ানলি উ বলেন, মাইক্রোওয়েভে রান্না করলে ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান কীভাবে বাড়ে, তা ব্যাখ্যা করার সর্বসম্মত কোনো উপায় নেই। হতে পারে মাইক্রোওয়েভিং ফ্ল্যাভোনয়েড উপাদান পরিমাপের পথ সহজ করে দেয়। সম্ভবত এটি সবজির টিস্যুগুলো নরম করে এবং গণণা করা সহজ হয়।

ফলে অন্য কোনো উপায়ের চেয়ে মাইক্রোওয়েভে প্রস্তুত করা সবজি বেশি পুষ্টি ধরে রাখবে কিনা- সেই বিষয়ে কোনো সোজাসাপ্টা উত্তর নেই। কারণ প্রতিটি খাবার গঠন আর পুষ্টির দিক থেকে আলাদা।

জিয়ানলি উর ভাষ্য, “সাধারণভাবে রান্নার ক্ষেত্রে মাইক্রোওয়েভিং পছন্দের হলেও বিভিন্ন সবজির ক্ষেত্রে এতে রান্নার সময়টাও ভিন্ন হবে। ঘরোয়া রান্নার পদ্ধতি বিবেচনায় মাইক্রোওয়েভিং জনপ্রিয়। অনেক উদ্ভিজ্জ খাবারই মাইক্রোওয়েভ ওভেনে রান্না করা হয়, তব সবকিছু নয়।”

অন্য আরেকটি গবেষণায় বিভিন্ন সবজি সিদ্ধ, বাষ্পে সিদ্ধ ও মাইক্রোওয়েভিংয়ের মাধ্যমে রান্না করে সেগুলোর ফেনোলিক উপাদানের (স্বাস্থ্যের পুষ্টিগুণ উপাদান) মাত্রা পরীক্ষা করে দেখেন গবেষকরা। দেখা যায়, মাইক্রোওয়েভিং ও বাষ্পে সিদ্ধ করলে স্কোয়াশ (লাউ-মিষ্টিকুমড়ার মত সবজি), মটরশুটি ও লিকসের মত সবজির ফেনোলিক উপাদান কমে যায়। কিন্তু পালংশাক, মরিচ, ব্রোকলি বা সবুজ শিমের ওই পুষ্টি উপাদান কমছে না।

গবেষকরা অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ক্রিয়াকলাপও পরীক্ষা করে দেখেছেন। উভয়ক্ষেত্রে সিদ্ধ করার চেয়ে মাইক্রোওয়েভে প্রস্তুত সবজিই উত্তম।

গবেষকরা বলেন, মাঝারি তাপমাত্রায় রান্না করা কিছু সবজি স্বাস্থ্যের পুষ্টিগুণের জন্য দরকারি হতে পারে।

আরো পড়ুন:
হাঁড়ি-পাতিলের পোড়া দাগ তুলুন সহজ উপায়ে
ফ্রিজে রাখা দুধ কতদিন পর্যন্ত খাওয়া স্বাস্থ্যকর?
কর্মজীবী নারীদের জন্য ঝটপট কিচেন টিপস

২০২৩ সালের একটি গবেষণাতেও মাইক্রোওয়েভে রান্নায় ভালো ফলাফল দেখা গেছে। গবেষকরা বিভিন্ন শাকসবজি সিদ্ধ, বাষ্পে সিদ্ধ ও মাইক্রোওয়েভে দিয়ে সেগুলোর পুষ্টিগুণ বিবেচনা করেছেন। ফলাফলে দেখা গেছে, পুষ্টি বজায় রাখার জন্য মাইক্রোওয়েভিংই সবচেয়ে কার্যকর।

মাইক্রোওয়েভে প্লাস্টিক পাত্র বিপজ্জনক?

প্রতিদিনের ব্যবহারে মাইক্রোওয়েভে অহরহই প্লাস্টিক পাত্রে খাবার গরম করেন অনেকে। এ ক্ষেত্রে সাবধান করছেন বিজ্ঞানীদের কেউ কেউ।

তাদের মতে, প্লাস্টিক পাত্র ওভেনে দিলে সেটি থেকে খাবারে মিশে যেতে পারে ‘থ্যালেট’ নামে রাসায়নিক। এই রাসায়নিক মূলত প্লাস্টিক পণ্যগুলো টেকসই করতে ব্যবহার হয়। যখন ওভেনে প্লাস্টিক পাত্র গরম হয়, তখন প্লাস্টিক থেকে ওই রাসায়নিক বিচ্যুত হয়ে খাবারে মিশে যেতে পারে।

ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জুমিং ট্যাং বলেন, কিছু কিছু প্লাস্টিক মাইক্রোয়েভের জন্য বানানো হয় না। সেগুলো নরম আর নমনীয় করতে পলিমার ব্যবহার করা হয় এবং অল্প তাপেই গলে যায়। মাইক্রোওয়েভে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়ালেই ওই পাত্র থেকে রাসায়নিক খাবারে ছড়াতে পারে।

খাবার রাখার জন্য তৈরি করা ৪০০ প্লাস্টিক পাত্র নিয়ে ২০১১ সালে একটি গবেষণা হয়। দেখা যায়, সেগুলোর বেশিরভাগ থেকেই রাসায়নিক ছড়িয়েছে, যেগুলো মানুষের হরমোনের কার্যক্ষমতা ব্যাহত করে।

প্লাস্টিক পাত্র তৈরিতে থ্যালেটের ব্যবহার খুব সাধারণ। এটি প্লাস্টিককে নমনীয় করতে ব্যবহৃত হয়। খাবার বহনযোগ্য প্লাস্টিক পাত্র, প্লাস্টিকের মোড়ক ও পানির বোতলে এই উপাদান পাওয়া যায়। এটি মানুষের হরমোন ও বিপাকীয় প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে বলে গবেষণায় পাওয়া গেছে।

শিশুদের মধ্যে থ্যালেট রক্তচাপ বৃদ্ধির কারণ এবং ইনসুলিন প্রতিরোধী হয়ে উঠতে পারে, যা ডায়াবেটিস ও হাইপারটেনশনের মত রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রজনন, অ্যাজমা ও এডিএইচডির মত সমস্যার সঙ্গেও এর সম্পর্ক রয়েছে।

নিউ ইয়র্কের এনওয়াইইউ স্কুল অব মেডিসিনের অধ্যাপক লিওনার্দো ট্রাসান্দের মতে, থাইরয়েড হরমোনেরও ব্যাঘাত ঘটাতে পারে থ্যালেট। এই হরমোন গর্ভকালীন শিশুর মস্তিস্ক বা মেধা বিকাশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

প্লাস্টিক পণ্যে সচারচর ব্যবহৃত হয় বিসফেনল (বিপিএ) নামে আরেকটি রাসায়নিক। ২০২০ সালের এক গবেষণায় দেখা যায়, বিসফেনল শ্বাসের মাধ্যমে বা খাবারের মাধ্যমে শরীরে গেলে কোষের আচরণ ও হরমোনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এটি ক্যান্সার, হরমোন ব্যাঘাত, প্রজনন সমস্যা ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও প্রভাবিত করতে পারে।

গবেষকরা বলছেন, বিপিএ আর কী কী ক্ষতি করতে পারে বা ক্ষতির প্রভাব কতটুকু, তা বুঝতে আরো গবেষণা প্রয়োজন। আপাতত থ্যালেটের ক্ষতিকারক দিকগুলো নিয়ে যথেষ্ট প্রমাণ বা তথ্য-উপাত্ত আছে।

বাচ্চাদের খেলনা, বডি লোশন থেকে শুরু করে সবখানেই থ্যালেট রয়েছে। সেগুলো কী পরিমাণ ক্ষতি করতে পারে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা এখনও মেলেনি। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত যে থ্যালেটসমৃদ্ধ প্লাস্টিক গরম করলে স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়তে পারে।

গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি বিষয় হল, খাবার গরম করার সময় প্লাস্টিক পাত্র খাবার স্পর্শ না করলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে।

অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির বায়োডিজাইন সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল হেলথ ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পরিচালক অধ্যাপক রল্ফ হ্যাল্ডেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, খাবার গরম করার সময় সেখান থেকে বাষ্প উঠে ঢাকনার তলায় জমা হয়। এরপর সেই ঢাকনা থেকে ছড়ানো রাসায়নিক বাষ্পের পানির সঙ্গে মিশে ফের খাবারে গিয়ে পড়ে।

এ থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য মাইক্রোওয়েভে প্লাস্টিকের বদলে অন্য কোনো নিরাপদ পাত্র ব্যবহার করা যেতে পারে। সেটি হতে পারে সিরামিক পণ্য। আর যদি প্লাস্টিক পাত্রই ব্যবহার করতে হয়, তবে এমন পাত্র নিতে হবে যেগুলো গরম করলে বেঁকে বা আকৃতি পরিবর্তন না হয়ে যায়। পুরনো আর ভাঙাচোরা পাত্র থেকে রাসায়নিক খাবারে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। পাত্রটি পুনর্ব্যবহারযোগ্য কিনা, তা পাত্রের তলায় ‘ইউনিভার্সাল রিসাইক্লিং সিম্বল’ দেখে বোঝা যেতে পারে।

আরো পড়ুন:
রান্নাঘর জীবাণুমুক্ত রাখার টিপস
ফ্রিজে মাংস কতদিন পর্যন্ত ভালো থাকে?
বেকিং পাউডার নষ্ট হয়ে গেছে কি না বুঝবেন যেভাবে
মাইক্রোওয়েভে রান্না বা গরম করা নিরাপদ?

প্লাস্টিক পাত্র এড়িয়ে চললেও মাইক্রোওয়েভে খাবার গরম করার অন্যান্য সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। কারণ এটি খাবার অসমভাবে গরম করে। সেইসঙ্গে উচ্চ তাপমাত্রার ঝুঁকির কথাও বলা হচ্ছে।

ফলে খাবার রান্না করার পরিবর্তে বারবার গরম করার কাজে মাইক্রোওয়েভ ব্যবহারের প্রবণতা নিয়ে ভাবতে হবে। কারণ এটি খাবার অসম তাপে রান্না করে।

জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য নিরাপত্তার অধ্যাপক ফ্রান্সিসকো ডিয়েজ-গনজালেজ বলেন, খাবার রান্না বা গরম করতে গেলে দেখা যাবে কিছু অংশ গরম বেশি, আর কিছু অংশ তুলনমূলক কম গরম হতে পারে।

“খাবারের মাঝের ভেতরের তাপমাত্রা ভিন্ন হবে। মাইক্রোওয়েভে সম্পূর্ণ অভিন্ন তাপমাত্রা পাওয়া কঠিন। বিশেষ করে কাঁচা খাবারের ক্ষেত্রে।”

আবার মনে রাখতে হবে, একই খাবার বারবার গরম করারও ঝুঁকি আছে। খাবারে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ধ্বংসে তাপমাত্রা ৮২ ডিগ্রি সেলসিয়াস না ওঠা পর্যন্ত খাবার গরম করতে হবে। আর খাবার প্রতিবার ঠান্ডা হলে যেহেতু ব্যাকটেরিয়া বারবার ধরতে পারে, তাই একটি খাবার একবারের বেশি গরম করা উচিত নয়।

এছাড়া মাইক্রোওয়েভে উচ্চ তাপমাত্রাতেও সমস্যা আছে। সাধারণভাবে বলা হয়, উচ্চ তাপমাত্রা কোনো সমস্যা না। কিন্তু কিছু গবেষণা বলছে, শস্য দানা, পেঁয়াজ বা গাজর-মূলার মত মাটির নিচে জন্মানো সবজিসহ কিছু শর্করা জাতীয় খাবার মাইক্রোওয়েভে রান্নায় ঝুঁকি আছে।

জেরুজালেমের হিব্রু ইউনিভার্সিটির পুষ্টি বিজ্ঞানের অধ্যাপক বেটি শোয়ার্ৎজ মধ্যাহ্নভোজের সময় মাইক্রোওয়েভে তার ছাত্রদের আলু (জ্যাকেট পটেটো) গরম করতে দেখেন। পরে তিনি ওই আলুর ভেতরে ছোট ছোট স্ফটিক দানা দেখতে পান। শোয়ার্ৎজ বিশ্লেষণ করে দেখেন, ওই খাবারে অ্যাক্রিলামাইড রাসায়নিক বেশি রয়েছে, যা স্বাভাবিকভাবে উচ্চ তাপে রান্না করলে হতে পারে।

শোয়ার্ৎজ পরে তার ছাত্রদের আলু সিদ্ধ করতে বলেন। এরপর দেখেন, সেখানে কোনো অ্যাক্রিলামাইড তৈরি হয়নি।

উচ্চতাপে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় তৈরি হয় অ্যাক্রিলামাইড, যা নিয়ে উদ্বেগের কারণ আছে। ল্যাবরেটরিতে প্রাণীর ওপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, অ্যাক্রিলামাইড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ানো কারসিনোজেন হিসেবে কাজ করে। কিন্তু মানব শরীরের ক্ষেত্রে এটি ঘটে কিনা, সেই ব্যাপারে তেমন প্রমাণ নেই।

কিছু গবেষণা বলছে, রান্নার অন্যান্য উপায়ের চেয়ে মাইক্রোওয়েভে অ্যাক্রিলামাইড তৈরির সম্ভাবনা বেশি। আবার গবেষকরা এও দেখেছেন, মাইক্রোওয়েভে অল্প তাপে রান্নায় অ্যাক্রিলামাইড তৈরির সম্ভাবনা কম থাকে।

রেডিয়েশন ছড়ায়?

মাইক্রোওয়েভে রেডিয়েশনের ব্যাপারে বলতে গেলে কোনো ঝুঁকি নেই। মাইক্রোওয়েভ ওভেন কম ফ্রিকোয়েন্সি ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকীরণ ব্যবহার করে, যা সাধারণত লাইটবাল্ব ও রেডিওতে ব্যবহৃত হয়। ওভেনে গরমের জন্য দিলে খাবার তরঙ্গগুলো গ্রহণ করে। এতে খাবারের থাকা পানির অনুগুলো কম্পিত হয়ে ঘর্ষণে তাপ উৎপাদন হয় এবং খাবার গরম হয়।

মানুষও ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ গ্রহণ করে। কিন্তু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে অপেক্ষাকৃত কম ফ্রিকোয়েন্সির তরঙ্গ উৎপন্ন হয় এবং তা ওভেনের ভেতরেই থাকে।

“আর যদি সেটা নাও হয়, তারপরও তরঙ্গগুলো ক্ষতিকারক নয়,” বলেন ওয়াশিংটন স্টেট ইউনিভার্সিটির খাদ্য প্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক জুমিং ট্যাং। অবশ্য মাইক্রোওয়েভের তাপ ক্ষতিকারক না হওলেও জীবন্ত কোনো প্রাণীকে সেটার ভেতরে ঢোকানো যাবে না।

ট্যাং বলেন, “ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গের অংশই হল মাইক্রোওয়েভ, প্রতিদিনই যার সংস্পর্শে আমরা থাকি। যখন রুটি বানান, তখন ওভেনের গরমভাব থেকে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ ও ইনফ্রারেড এনার্জির সংস্পর্শে আসেন। এমনকি মানুষও একে অপরে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ বিনিময় করে। সূর্যের আলোতে জন্মানো শস্য খেলে আপনার মাইক্রোওয়েভের খাবার নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত নয়।”

এক্সরের মত মাইক্রোওয়েভ আয়োনাইজিং বিকিরণ ব্যবহার করে না। অর্থাৎ, মাইক্রোওয়েভ পরমাণু থেকে ইলেকট্রন আলাদা করার জন্য যথেষ্ট শক্তি বহন করে না।

জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারের রেডিয়েশন মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক টিমোথি জর্গেনসেন বলেন, “ডিএনএকে ভাঙার জন্য রাসায়নিকের বন্ধনগুলো ভাঙতে হবে। রেডিয়েশন ধ্বংসের জন্য এটিই প্রধান উপায়।”

জর্গেনসেন বলেন, মাইক্রোওয়েভ আবিষ্কারের পরের বছরগুলোতে রেডিয়েশন সম্পর্কিত উদ্বেগগুলোর নিরসন হয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটসের ‘আর্মি নাটিক রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ল্যাবরেটরির’ বিজ্ঞানীরা মাইক্রোওয়েভে সুরক্ষা নিয়ে অনেক গবেষণা চালান। সেসব গবেষণা রেডিয়েশন নিয়ে উদ্বেগ দূর করার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে।

আরো পড়ুন:
রান্নার সময় হাত পুড়ে গেছে? সমাধান আছে আপনার ঘরেই
দাঁত ভালো রাখতে খান এই ৫ খাবার
ঘরেই বানিয়ে নিন ঝালমুড়ির মসলা

মাইক্রোওয়েভ ওভেনে খাবার রান্নার ক্ষেত্রে অনেক প্রশ্নই সামনে আসে। দীর্ঘ সময় ধরেই কিচেনে এটি নিরাপদ সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু গবেষণা বলছে, এতে সতর্কতারও বিষয় আছে।

বিশেষ করে ওভেনে প্লাস্টিক প্যাকেজিং বা প্লাস্টিক পাত্রের ব্যবহার কীভাবে মানুষের হরমোন ব্যাহত করছে এবং স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলছে- এসব নিয়েই এখনো উদ্বেগ জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।

রেসিপি ক্রেডিট: bdnews24
 

এ সম্পর্কিত আরও পোস্ট

Leave a Comment